পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত আওয়ামীলীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়ার পুরান ঢাকার একটি বাসার ৫টি সিন্দুক থেকে নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা পেয়েছে র্যাব। এ ছাড়া ওই বাসা থেকে সোয়া ৫ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম জব্দ করেছে র্যাব। পুরান ঢাকায় ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিট এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা সেই দুই ভাই এনামুল-রূপনের বাসা যেন টাকা-সোনার ভান্ডার। গত সোমবার দিনগত রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পুরান ঢাকার ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। র্যাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া। দুই ভাইয়ের এ বাড়িটি ছিল টাকার গোডাউন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, পুরান ঢাকার ওই বাসার ঠিকানা ১১৯/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিট। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় র্যাব ওই বাসায় অভিযান শুরু করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, সরু গলির ওই বাসায় পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা ও পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বইয়ের পাশাপাশি ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বাসাটি খুব ছোট আকারে। এখানে মাত্র একটি চৌকি আছে। এটি ছয়তলা ভবনের নিচতলার একটি বাসা। ধারণা করা হচ্ছে, এ বাসায় টাকা রেখে কেউ এর পাহারায় থাকতেন। তবে এখান থেকে কাউকে আটক করা যায়নি। উদ্ধার করা টাকা গণনার পর দেখা যায়, সেখানে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা রয়েছে। এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া এখন কারাগারে। ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাইকে গত জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত বছর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এই দুই ভাই আলোচনায় আসেন। শুরু থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, আমরা এখন এ ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করব। এসব দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার থানায় হস্তান্তর করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হবে। জব্দ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার কীসের বা কোথা থেকে এলো জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর সিও বলেন, আমরা এটা তদন্ত করে বের করব। কোথা থেকে এসেছে, কার কাছে ছিল, গন্তব্য কোথায় ছিল তা ইনভেস্টিগেশন করে বের করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যে বাসায় অপারেশন পরিচালনা করেছি, সেই ছয়তলা ভবনটি এনু-রুপনের বাড়ি। এর আগে তাদের আরেক বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল।
ওই অভিযানের পর কি এই মুদ্রা-স্বর্ণালঙ্কার এ বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে রাকিবুল হাসান বলেন, সম্পূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এ বাসায় অভিযান পরিচালনা করেছি। র্যাব-৩এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়জুল ইসালাম জানিয়েছেন, ক্যাসিনো কান্ডে জড়িত দুই ভাইয়ের ঢাকায় বহু ফ্ল্যাটবাড়ি রয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা ২৪টি বাড়ির খোঁজ পেয়েছেন। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে তারা পুরান ঢাকার এ বাড়ির খোঁজ পান। এর পরপরই এখানে অভিযান চালিয়ে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান একটি কক্ষে পাঁচটি ভল্ট সাজানো আছে। এর মধ্যে একটি ভল্টের ড্রয়ার ভাঙ্গা। বাকি ভল্টগুলোর তালা ভেঙ্গে অবাক হয়ে যান র্যাব কর্মকর্তারা। প্রতিটি ভল্টে ১০০০ টাকার নোটের বান্ডিল আর বান্ডিল। সব বান্ডিল বের করেন তারা। অবশেষে কক্ষের মাঝখানে টাকা রাখার পর যেন টাকার পাহার হয়ে যায় সেটি। হাতে গুনে এই টাকার হিসাব করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এ কারণে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে র্যাব। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ব্যাংক খোলার পর একটি ব্যাংক থেকে দুটো টাকা গোনার মেশিন নিয়ে আসেন। সকাল ১০টা থেকে র্যাবের ৩/৪ জন কর্মকর্তা টাকা গোনা শুরু করেন। সেই টাকা গুনতে গুনতে বেজে যায় বেলা ১টা। ৩ ঘণ্টা মেশিন দিয়ে টাকা গুনে র্যাব দেখতে পায় সেখানে রয়েছে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা। শুধু তাই নয় সেই ফ্ল্যাটটি থেকে র্যাব জব্দ করেছে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের বই, এক কেজি সোনা, ৯ হাজার ২০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১ হাজার ৫৯৫ চায়নিজ ইউয়ান, ১১ হাজার ৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম।
র্যাব সূত্র জানায়, এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬টি। পুরোনো বাড়িসহ কেনা জমিতে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন ইমারত। স্থানীয় লোকজন জানান, এই দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। আর নেশা হলো বাড়ি কেনা। জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কেনেন বলে জানা যায়। ২০১৮ সালে এনামুল পান গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ। আর রূপন পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। তারা সরকারি দলের এসব পদ-পদবি জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘেœ চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরূ করে র্যাব। সেদিন থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব ও ময়নুল হক মঞ্জুসহ সরকারি দলের অনেক নেতা গ্রেফতার হন। জব্দ করা হয় কোটি কোটি টাকা, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।