পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘মুজিববর্ষে শুধু মুজিবের বন্দনা নয়, আওয়ামী লীগের বন্দনা নয়,’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টি (জেপি)আয়োজিত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেছেন। মোহাম্মদ নাসিম বিশিষ্ট রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী এবং ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। কাজেই, তার মন্তব্যটি মোটেই কথার কথা নয়। তিনি দেখে-শুনে এবং বুঝেই এ কথা বলেছেন। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মুজিববর্ষকে উপলক্ষ করে শুধুই কথা বলা হচ্ছে, কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ মুজিববর্ষে বাগাড়ম্বরের চেয়ে কাজই বেশি হওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতির পিতা এবং তার স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। তিনি চাইতেন, বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি ও দুর্বিচারমুক্ত সুশাসিত, স্বয়ম্ভর ও সমৃদ্ধ একটি দেশ। মুজিববর্ষে তার সেই সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে জোরদার উদ্যোগ ও তৎপরতা চলবে, এমনটাই প্রত্যাশিত। অথচ এ ব্যাপারে কাজ তেমন হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনিও তার পিতার মতো উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন এবং কার্যত তাদের উভয়ের স্বপ্নের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রধানমন্ত্রী নানা উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচী নিয়েছেন। মুজিববর্ষে সেই প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়নে বিশেষ কার্যব্যবস্থা গৃহীত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের প্রকল্প ও কর্মসূচীগুলোরও বাস্তবায়নের অগ্রগতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।
মুজিববর্ষে শুধু স্তুতি ও বন্দনার উচ্ছ্বাস বইছে। বিশেষ কর্মোদ্যম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মোহাম্মদ নাসিম ওই আলোচনা সভায় সামাজিক অবক্ষয়ের প্রসঙ্গ সামনে এনে বলেছেন : কষ্ট পাই যখন দেখি, এই বাংলাদেশে নারী-শিশুরা নির্যাতীত হচ্ছে, ধর্ষিত হচ্ছে। কোন বাংলাদেশ এটা? বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আমরা ধর্ষকদের ছাড় দিতে পারি না। আমরা যদি এত উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে সামাজিক এ অবক্ষয় কেন বন্ধ করতে পারবো না? ঘরে, রাজপথে প্রত্যেক জায়গায় এই ধর্ষক-দানবদের রুখে দাঁড়াতে হবে। নারী-শিশুর ধর্ষকদের ধ্বংস করে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, মুজিববর্ষে ধর্ষণসহ অন্যান্য সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কার্যকর কর্মসূচী থাকতে পারে। মোহাম্মদ নাসিম সংসদে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের প্রাধান্যে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন : সংসদ হবে রাজনীতিবিদদের জন্য, অন্যে কারো জন্য এই সংসদ হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখেনা, রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের অবস্থান দৃঢ় ও শক্তিশালী করাও মুজিববর্ষের কর্মসূচী হতে পারে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নয়ন ব্যতীত রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের অধিপত্য নিশ্চিত হতে পারে না। মুজিববর্ষে রাজধানীর পরিবেশ এবং নাগরিক সুবিধার বিষয়াবলী নি:সন্দেহে গুরুত্ব লাভ করতে পারে। রাজধানী নামের এই শহরটা প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর রাস্তাঘাট বেশির ভাগই ভাঙ্গাচোরা এবং যানজট নিত্যবাস্তবতা। বায়ূদূষণ, শব্দদূষণ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ও দুগর্ন্ধের শেষ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। তারের জঞ্জাল দৃষ্টিকটু ও বিপদজনক। পোস্টার-ফেস্টুন ইত্যাদি প্রায়শই বিরক্তির কারণ। এর নদী-খাল দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত। মুজিববর্ষে রাজধানীকে পরিবেশসম্মত ও বসবাসপযোগী করার কার্য্যেেদ্যাগ নেয়া যেতে পারে। দেশের হারিয়ে ও দখল হয়ে যাওয়া নদী উদ্ধার ও দুষিত হয়ে পড়া নদী বিশুদ্ধ করাসহ নদী উন্নয়নমূলক একটি ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচী মুজিববর্ষে নেয়া যেতে পারে। অনুরূপভাবে দুর্নীতি নিরোধ, খুন-খারাবী বন্ধ ও মাদক কে না বলার মতো কর্মসূচীও নেয়া যেতে পারে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারী ও বেসরকারীভাবে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়েছে, যার বেশিরভাগই স্তুতি-বন্দনা ও প্রচারমূলক। কাজের তেমন কোনো অঙ্গীকার বা কর্মসূচী নেই। সভা-সেমিনার হচ্ছে, বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। তাতে কেবলই স্তুতিবাদ। জানা গেছে, দেশের ছাপাখানোগুলোতে এখন প্রচারপত্র, পোস্টার, ইত্যাদি ছাপার ধুম পড়ে গেছে। ব্যানার ইত্যাদি বানানোর তোড়জোড়ও চলছে। সামনের দিনগুলোতে ঢাকাসহ সারাদেশে এগুলো শোভা পাবে এবং পরবর্তীতে পরিণত হবে আবর্জনা ও জঞ্জালে। অথচ এসব না করে রাজধানীসহ গোটা-দেশকে আবর্জনা মুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কর্মসূচী নেয়া যেতে পারতো। যেসব প্রচারমূলক কর্মসূচী নেয়া হয়েছে, তাতে অর্থের অপব্যয় ও অপচয় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তার বদলে এই অর্থ দেশোন্নয়নে এবং জনসেবায় ব্যয় হলে সেটাই হতো অর্থের উত্তম ব্যবহার। দেশোন্নয়নে ও জনকল্যাণে আমাদের অনেক কিছু করতে হবে। অর্থের সংস্থান আমাদের অফুরান নয় যে, যত প্রয়োজন তত ব্যয় করা সম্ভব হবে। আমাদের অর্থের ঘাটতি আছে, টানাটানি আছে। সে ক্ষেত্রে অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অনেক কাজ বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, যা আজো শেষ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উন্নয়ন কর্মকান্ডের একটা বড় রকমের বিস্তার ঘটিয়েছেন, যার বেশির ভাগই বাস্তবায়নাধীন। এই অসমাপ্ত বা চলমান কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। মুজিববর্ষে এদিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি। প্রাচারসর্বস্ব নয়, কাজের মধ্যদিয়ে মুজিববর্ষ পালিত হোক, এটাই দেশের মানুষের প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।