Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিস্তা এখন মরা খাল

কৃষি ও জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে

মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

এক সময় ছিল খরস্্েরাতা পানির কল-কল শব্দ। নদীর বুক দিয়ে চলতো বিভিন্ন রংয়ের পাল তোলা নৌকা। নৌ-শ্রমিকরা নৌকার হাল ধরে গাইতো ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী গান। নৌপথ ছিল সরগরম ও কোলাহলপূর্ণ। নতুন প্রজন্মের কাছে সেই গল্প কাল্পনিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সেই পাল তোলা নৌকা আর দেখা যায়না। নেই কোলাহল ও ভাটিয়ালী গান। কারণ এক সময়ের খরস্্েরাতা তিস্তা নদী নাব্যতা হারিয়ে ক্রমান্বয়ে পানিশূণ্য হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর। অস্তিত্ব সংকটে তিস্তা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

কালের বিবর্তনে নৌকার পরিবর্তে পায়ে হেঁটে মানুষ নদী পারাপার হচ্ছেন। তিস্তা নদী অবলম্বন করে যে সকল পরিবার, মাঝি-মাল্লা, জেলে, চাষী শান্তিতে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল তারা এখন কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে ক্ষেত খামারে কাজ করছেন। কেউবা করছেন দেশের বিভিন্ন শহরে রিকশা-ভ্যান চালানোর কাজ। নদীর নাব্যতা জরুরি ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ এলাকা মরু অঞ্চলে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিস্তার নাব্যতা না থাকায় কৃষির ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। হুমকির মুখে জীব-বৈচিত্র। নদী পাড়ের কৃষক পরিবারগুলো সেচযন্ত্র ব্যবহার করে নদী থেকে পানি উত্তোলন করতে না পারায় কৃষি কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি জমিতে বিকল্প পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গিয়ে তারা লাভজনক কৃষিখাতে লোকসানের মুখ দেখছেন।

তিস্তা পাড়ের কৃষক সবুজ মিয়া জানান, আগে ভরা তিস্তায় সেচ মেশিন লাগিয়ে চাষাবাদ করতাম। এতে মেশিনে পানি উঠতো বেশি। তেল খরচ হতো কম। এখন সেচ মেশিন ব্যবহার করে চাষাবাদ করায় তেল খরচ বেশি হচ্ছে। জেলে ফুল বাবু জানান, তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় মাছও কমে গেছে। এ কারণে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এক সময়ের ব্যবসায়ি রুহুল আমিন জানান, আশির দশকের দিকে তিস্তা নদী দিয়ে কাউনিয়া, হারাগাছ, কামারজানি, সুন্দরগঞ্জ, চিলমারী, জামালপুর, ইসলামপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নৌ-যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য জম-জমাট ভাবে চলতো। ওই সময় নৌপথ ছিল সরগরম। এখন তিস্তা পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় নৌপথে ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়েছে। বেকার জীবন কাটাচ্ছেন নৌ শ্রমিকরা। পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় এ নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

এনিয়ে নদী বাঁচাও-দেশ বাঁচাও আন্দোলনের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আহবায়ক ছাদেকুল ইসলাম দুলাল জানান, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র রক্ষা করতে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র রক্ষা হবে না। এছাড়া নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জলাধার তৈরি করা হলে তিস্তা নদী পূর্বের জীবন ফিরে পাবে। এর সুফল ভোগ করতে পারবে অত্রাঞ্চলের মানুষ। উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী খোকন রানা বলেন নদী ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই অনেক নলকুপে এখন আগের মত পানি উঠছেনা। অনেক নলকুপে আর্সেনিক দেখা যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ জানান, নদী ও খাল-বিলে ভরা পানি না থাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করায় কৃষকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার আশরাফুজ্জামান সরকার জানান, পানিতে আর্সেনিকের কারণে মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকার রোগ দেখা দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাল

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ