পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ভুটান ও আফগানিস্তান, যাদের খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯ ও ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। মূলত গত বছরের পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়ায় প্রথমবারের মতো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় এবার সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। তবে পুনঃতফসিল সুবিধা এখনও চলমান রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছেন, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। এ জন্য তিনি নানা পদক্ষেপও গ্রহণ করেন। কিন্তু সে পদক্ষেপগুলোর এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এখনও আগের ধারাবাহিকতায় রয়েছে খেলাপি ঋণ।
সূত্র মতে, ২০১৮ সাল শেষে যেখানে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, ২০১৯ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ভুটান ও আফগানিস্তান, যাদের খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯ ও ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাই খারাপ। গত ছয় মাসে অবস্থা খারাপ হয়েছে। দেশগুলোর আর্থিক খাত এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। যে কারণে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদের আস্থা কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ ও বিনিয়োগ কমছে। বিশ্বব্যাংকের ধারণা, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে ঝুঁকি আরও বাড়বে। ঝুঁকির মূল কারণগুলো হচ্ছে- আর্থিক খাতের দুরবস্থা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংস্কারের ধীরগতি। ভারত ও পাকিস্তানের সা¤প্রতিক উত্তেজনা কমে এলেও তা যদি আবারও বাড়ে, তাহলে এই অঞ্চলের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা ঝুঁকিসহন ক্ষমতা যাচাই (স্ট্রেস টেস্ট) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মুহুর্তে অভিঘাত সামলানোর মতো অবস্থায় নেই ব্যাংক খাত। বড় ধরনের ধাক্কা এলে ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণের হার ঋণাত্মক ৭ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে যাবে। এ ধাক্কা মাঝারি মানের হলে মূলধন সংরক্ষণের হার এক শতাংশের নিচে অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশে নেমে যাবে। আর এ ধাক্কা ন্যূনতম হলেও মূলধন সংরক্ষণের হার সোয়া ৮ শতাংশে নেমে যাবে। এতে আরও বলা হয়, দেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, বড় অভিঘাত এলে অর্থাৎ খেলাপি ঋণ ১৫ শতাংশ বাড়লে ন্যূনতম মূলধন তথা ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হবে দেশের ৩৪টি সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। মাঝারি অভিঘাত অর্থাৎ খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশ বাড়লেও ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
গতকাল প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজর ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। তবে আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করায় খেলাপি ঋণ কমে এসেছে। ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, আগের প্রান্তিকে যা ছিল ১১ দশমিক ৯৯। এ খেলাপি ঋণ কমাতে বিশেষ ছাড়ে পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সুবিধা কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য প্রথমে আন্তর্জাতিক মানের খেলাপি নীতিমালায় শিথিলতা আনা হয়। আগে ৩ মাস অনাদায়ী থাকলেই তা খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হতো। এটি সংশোধন করে ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ১২ মাস করা হয়। অন্যদিকে খেলাপিদের জন্য বিশেষ পুনঃতফসিল নীতিমালা জারি করা হয়।
গত বছরের মে মাসে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ঋণখেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের মেয়াদে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। আবার নতুন করে যারা ঋণ নেবেন তাদের জন্য নয়-ছয় বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে আমানতকারীদের সুদহার ৬ এবং ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। গণছাড়ের আওতায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছে ব্যাংকগুলো। যার অর্ধেকই করেছে সরকারি ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিপুল পরিমাণ ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। তবে পুনঃতফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ২৪ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। আগের বছর ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। গত বছর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের বছর খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। অনেক বছর ধরেই খাতওয়ারী হিসেবে সরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেশি ছিল। কিন্তু গতবছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।