Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোজার করণীয়-বর্জনীয়

প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাহবুুবুর রহমান নোমানি
ইবাদত যদি সঠিকভাবে আদায় করা হয় তবেই এর পরিপূর্ণ সওয়াব ও কল্যাণ পাওয়া যাবে। রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর কল্যাণ ও প্রতিদান অপরিসীম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘বনি আদমের প্রত্যেক আমলের সওয়াব দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ বলেন, তবে রোজা ব্যতীত। কারণ, রোজা বান্দা আমার জন্যেই পালন করে, তাই আমি নিজে এর প্রতিদান দেবো।’ (মুসলিম:১৫৮) রোজার বিশেষত্ব হচ্ছে, তাতে রিয়া বা লোকদেখানোর সম্ভাবনা নেই। প্রচ- তৃষ্ণার্ত রোজাদারও একান্ত গোপনে পানি পান করে তৃষ্ণা মিটায় না। তাই রোজাকে বলা হয় তাকওয়ার সিঁড়ি। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য মানবমনে তাকওয়া বা খোদাভীতি সৃষ্টি করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে মোমিনগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা-১৮৩)
রোজার মাধ্যমে তাকওয়া সৃষ্টি হয় এভাবে যে, রোজা মানুষের পশুবৃত্তিকে থেঁতিয়ে দেয়। কেননা, মানুষ যখন ক্ষুধার্ত থাকে, তখন তার পাশবিক চাহিদা পিষে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রোজা প্রবৃত্তি দমনের উত্তম উপায়।’ এ কারণেই যেসব যুবক আর্থিক অসচ্ছলতার দরুণ বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না কিন্তু নিজেকে পাপ থেকে সংযতও করতে পারছে না, নবীজী (সা.) তাদেরকে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।’
একটি হাদিসে এসেছে, ‘রোজা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ, যতক্ষণ তা ফেঁড়ে ফেলা না হবে। জনৈক সাহাবি জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রোজা আবার কিভাবে করে ফেঁড়ে যায়? তিনি বললেন, মিথ্যা এবং গিবত দ্বারা। এসব হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, রোজা রেখে যাবতীয় পাপকর্ম বর্জন করলে, রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হবে। এই কারণে ওলামায়ে কেরাম বলেন, রোজাকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করতে হলে ছয়টি কাজ করতে হবে। তা হলো:
১. চোখের হেফাজত : চোখের দৃষ্টি পাপের প্রথম ধাপ। বলা চলে কুদৃষ্টি পাপের মূলপথ। হাদিসে নবীজী (সা.) এরশাদ করেন- “কুদৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।” (কানজুল উম্মাল-১৩০৬৮) এ তীর সরাসরি অন্তরে আঘাত করে। ফলে অন্তরে তাকওয়ার প্রদীপ জ্বলে না। অতএব, রোজাকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করতে রমজান মাসে নাচ-গান, ফিল্ম, সিনেমা ও গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. জবানের হেফাজত : জবানের হেফাজত সর্বাস্থায় জরুরি। তবে রোজা অবস্থায় এর গুরুত্ব আরো বেশি। কেননা রাসূল (সা.) রোজাদারকে অশ্লীল বাক্যালাপ, গালি-গালাজ, মিথ্যা, গিবত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কতক আলেমের মতে রোজা অবস্থায় মিথ্যা ও গিবত করার দ্বারা রোজা নষ্ট হয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় মিথ্যা বললো কিংবা গালা-গালি করলো তার রোজার ব্যাপারে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (নাসায়ি:৩২৪৭)
৩. কানের হেফাজত : যে সমস্ত কথা মুখে উচ্চারণ করা নাজায়েজ, তা শ্রবণ করাও নাজায়েজ। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, গিবত যে করে এবং যে শোনে উভয়ে সমান পাপী। সুতরাং রোজা অবস্থায় গান-বাজনা, গিবত-পরনিন্দা, ইত্যাদি শ্রবণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. সকল অঙ্গের হেফাজত : আল্লাহর দেয়া প্রতিটি অঙ্গই মানুষের জন্যে অমূল্য নেয়ামত। তিনি মানুষকে তা দান করেছেন সঠিকপথে ব্যবহার করার জন্যে। যদি অঙ্গ দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করা হয়, তবে রোজ কেয়ামতে সে অঙ্গ ওই ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। (সূরা হা-মীম সেজদা:২০)
৫. অতি ভোজন না করা : কারণ, অতিভোজনের ফলে কামভাব ও পশু প্রবৃত্তি দমিত হয় না। অথচ রোজার উদ্দেশ্য পশু প্রবৃত্তি দমন করা। বুযুর্গানেদ্বীন প্রবৃত্তির সাথে মুজাহাদার জন্যে কম খাওয়ার কথা বলে থাকেন। বর্তমানে ডাক্তারগণ দেহের সুস্থতার জন্যে কম খাওয়ার পরামর্শ দেন। জনৈক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষকের মতে রমজান মাসে বেশি খেলে লাভের চেয়ে শারীরিকভাবে ক্ষতিই বেশি হয়।
৬. অন্তরে আল্লাহর ভয় ও আশা জাগ্রত রাখা : যে কোনো ইবাদত আদায় করে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার আশা রাখা এবং ভয় রাখা উচিত। রোজাদারের দিন কাটবে আল্লাহর আজাবের ভয় এবং রহমতের আশার মধ্য দিয়ে। আর রাত কাটবে নামাজ, দোআ ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে। তাহলে রমজানের সওয়াব, বরকত ও রহমত পূর্ণভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজার করণীয়-বর্জনীয়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ