পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের গতি বাড়াতে প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুকে সম্পসারণ করা হচ্ছে। খুবই অপ্রশস্ত সেতুটি চার লেনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় নতুন করে সেতুটি সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেতুটি সম্প্রসারণে পৃথক প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশ করেছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন মহাসড়ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, শিগগিরি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে নেয়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পে ভুলবশত: প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর সম্প্রসারণ করার বিষয়টি রাখা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েই এটি ধরা পড়েছে। বুড়িগঙ্গা সেতু সম্প্রসারণ করা না হলে ঢাকার প্রবেশ পথে যানজটের আশঙ্কা থেকেই এ নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিবেশবিদ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা লেগেই আছে। আগে থেকে সমন্বিত পরিকল্পনা করা হলে এই ভুল হতো না। তিনি বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে প্রকল্প গ্রহণ করে পুরোপুরি লাভবান হওয়া যায় না। সারাদেশে যোগযোগের ক্ষেত্রে একটা মহাপরিকল্পনা করা উচিত। তাতে রেলকে গুরুত্ব দিয়ে করলে আরও ভাল হতো। কিন্তু সেরকম কিছু হচ্ছে না। আবু নাসের বলেন, বাংলাদেশে পরিবহণ বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার কোনো বিভাগ নেই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ও পড়াশুনার সুযোগ নেই। অথচ উন্নত দেশে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা রেলকে কেন্দ্র করে মহাপরিকল্পনা করার। তাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হবে। সময় ও টাকা দুটোই যেমন বাঁচবে, ভোগান্তিও কমবে।
জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণে প্রকল্পটির আওতায় যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার ও পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ প্রায় শেষের পথে। এতে ২৯টি ছোট ও মাঝারি সেতু, ৫৪টি কালভার্ট, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস, পাঁচটি ফ্লাইওভার, ২০টি আন্ডারপাস, দুটি ইন্টারচেঞ্জ ও দুটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে তা দুই দফা বেড়ে হয় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা। এরপরও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। প্রকল্পটির বাকি কাজ শেষ করার জন্য ২০১৮ সালে নেওয়া হয় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। সেটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ১১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। দুই প্রকল্প মিলিয়ে ঢাকা-মাওয়া-চার লেন বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার তিন কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ কারণে এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক প্রকল্প। আগামী মার্চে পুরো চার লেন প্রকল্পটি শেষ হয়ে চার লেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু (পোস্তগোলা সেতু) সম্প্রসারণ। অথচ সেতুটি খুবই অপ্রশস্ত হওয়ায় তা চার লেনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু সম্প্রসারণে পৃথক প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশ করেছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন মহাসড়ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। এজন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু স¤প্রসারণের সমীক্ষা পরিচালনা করেছে একুমেন কনসালটিং হাউস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছে।
নতুন প্রকল্প সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। দুদিকে সার্ভিস সড়কসহ মহাসড়কটির প্রশস্ততা ৪১ দশমিক ২০ মিটার। এর মধ্যে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত (এক্সসেস কন্ট্রোল্ড) চার লেনের প্রশস্ততা ১৪ দশমিক ৬০ মিটার। ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রভিশন হিসেবে মহাসড়কের মাঝে মিডিয়ান রাখা হয়েছে পাঁচ মিটারের। এছাড়া ব্রেক ডাউন লেন (মূল মহাসড়ক থেকে বের হওয়ার পথ) দুদিকে তিন মিটার, সার্ভিস রোড দুদিকে ১১ মিটার ও বাকিটায় অন্যান্য ব্যবস্থা (সোল্ডার, বেরিয়ার ইত্যাদি) রাখা হয়েছে।
এর বাইরে মহাসড়কটিতে অবস্থিত রেলপথের ওপর নির্মিত ওভারব্রিজের প্রশস্ততা ৩৬ দশমিক ৫০ মিটার। আর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনগুলোয় ( মোড়) নির্মিত ফ্লাইওভারের প্রশস্ততা ২০ দশমিক ৭০ মিটার। এছাড়া ফ্লাইওভারের পাশে দুই পাশে অতিরিক্ত ২৬ দশমিক ১০ মিটার সার্ভিস সড়ক ও অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অথচ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক থেকে রাজধানীতে প্রবেশপথ হিসেবে বিবেচিত প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর প্রশস্ততা মাত্র ১৭ দশমিক ৬০ মিটার। এর মধ্যে যান চলাচলের অংশ ১৪ মিটার ও দুদিকে ফুটপাত ৩ দশমিক ৬০ মিটার। অর্থাৎ মহাসড়কের অর্ধেকেরও কম প্রশস্ত সেতুটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ সহজ হওয়ায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে গাড়ি চলাচল অনেক বেড়ে যাবে। এতে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল জটিলতা তৈরি করবে। এছাড়া ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের এক্সপ্রেসওয়ে অংশের ডিজাইন স্পিড ৮০ কিলোমিটার ও সার্ভিস রোডের ডিজাইন স্পিড ৪০ কিলোমিটার। যদিও প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর ডিজাইন স্পিড ৫০ কিলোমিটার। এতে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ বিদ্যমান সেতুটি।
এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুটির উপরিভাগ ( ডেক) স¤প্রসারণ করে কমপক্ষে ২৪ মিটারে উন্নীত করা দরকার। তবে স্টিলের সাব-স্ট্রাকচার ও সুপার স্ট্রাকচার (পানির নিচের এবং উপরের অংশ) ব্যবহার করে কম খরচে ও ব্যয়ে দ্রুত সেতুটি সম্প্রসারণ করা সম্ভব। এজন্য অতিরিক্ত কোনো জমি অধিগ্রহণও করতে হবে না। এজন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সেতুটি নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড জানায়, তাদের দায়িত্ব দিলে সেতুটি সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেনের কাজ করছে ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। ফলে তাদের সব ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম প্রকল্প এলাকাতেই রয়েছে। ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড সেতুটি সম্প্রসারণের কাজ করলে নতুন করে মবিলাইজ তথা সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও অর্থ ব্যয় কম হবে।
সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন নির্মাণ প্রকল্প পরিকল্পনায় এর আগেও ভুল ছিল। সেবার ভুল সংশোধনকল্পে নতুন কিছু কাজ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাজউকের নির্মিতব্য শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংগতি রেখে দুই হাজার ৩৩৩ মিটার তেঘরিয়া-বাবুবাজার ফ্লাইওভার নতুন করে নির্মাণ, ভাঙ্গা-ফরিদপুর অংশে নির্মিতব্য ইন্টারচেঞ্জ ক্লোভার লিফের র্যাম্পের অ্যালাইনমেন্ট সঙ্গে সমন্বয় করে কুমার ব্রিজ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ, টোল প্লাজার ডিজাইন পরিবর্তনসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রেস্তোরাঁ, অফিস ও বাসস্থান, পাম্প হাউস, নির্বাপণ কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, পানির ট্যাংক, পুলিশ পোস্ট নির্মাণ। এর বাইরে বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, রেলওয়ে ওভারপাসের উচ্চতা বাড়ানোয় এর দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৮০ কিলোমিটার থেকে চার দশমিক ৪৪৪ কিলোমিটার হয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।