২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
এক দশক আগে পর্যন্তও ধারণা ছিল যে হার্ট অ্যাটাক একটু বয়স হলেই হয়। কিন্তু এখন ধারণাটা বলতে গেলে প্রায় অনেকটাই পালটে গেছে। হার্ট অ্যাটাকে বয়স্করাই শুধু নয় কম বয়সেও অনেক তরুণ আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে যেখানে হার্ট অ্যাটাকের বয়স হিসাবে ৫০ বছর বয়স বা তার পরের সময়টাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হতো, এখন কিন্তু চল্লিশও পেরোয়নি এমন মানুষের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, চারপাশে এ সংবাদ প্রায়ই শোনা যায়। গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় আরও একটি ভয়াবহ তথ্যের দিকে আঙুল তুলেছে, গত দশ বছরে কমবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা প্রতিবছর গড়ে ২ শতাংশ করে বাড়ছে। এর পিছনের কারণটিই এবার বিজ্ঞানীরা তুলে ধরেছেন।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে বিশেষ জেনেটিক রোগ হাইপারকোলেষ্টরোলেমিয়া- এর কারণে কমবয়সে হার্ট অ্যাটাক হয়। এই রোগে শরীরের এলডিএল (লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) কোলেষ্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের বেশি থাকে। গবেষণা বলছে যারা বয়স ৫০ পেরোনোর আগেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, তাদের ১৫-২০ শতাংশেরই এই কারনটি রয়েছে। আর একবার যদি তাদের হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তার মোটামুটি দশমাস থেকে এক বছরের মধ্যে রক্তে কোলেষ্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। এর ফলে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহ্যাম অন্ড উইমেন্স হাসপাতালের একদল বিশেষজ্ঞের দেওয়া একটি তথ্যও গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণাকে সমর্থন করে। ইতিপূর্বে একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল সে এফএইচ সাধারণত পরীক্ষা করালেও ধরা পড়ে না সবসময় এবং এর ফলে চিকিৎসাও করা হয় না। ফলে দিনের পর দিন শরীরের মধ্যে এই রোগটি বাড়তে বাড়তে ক্রমশ হার্ট অ্যাটাকের মত মারাত্মক রোগের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়। তবে বর্তমানে ক্রমশ সচেতনতা বাড়ছে। অনেকেই এফএইচের উন্নত নানারকম স্ক্রিনিং করাচ্ছেন চিকিৎসকের পরামর্শে। গবেষকরা দেখেছেন এফএইচে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগী হার্ট অ্যাটাকের আগে কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খান, কিংবা হাইপরকোলেষ্টেরোলিমা থেকে লিভারে বা গলব্লাডারে কোলেষ্টেরল ডিপোজিশন হলে তার জন্য খাওয়া নিয়ন্ত্রণ কিংবা ওজন কমানোর প্রাণপন চেষ্টা করেন। আবার হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়ার পরেও সুস্থ হয়ে অনেকের মধ্যে কোলেষ্টেরল কমানোর জন্য বিশেষ কোনও সচেতনতা দেখা যায় না।
এই গবেষণার জন্য বিশেষজ্ঞরা আমেরিকার ব্রিগহ্যাম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের প্রচুর রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেন। তাতে দেখা গেছে সকলেই ২০০০-২০১৬ সালের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়েছিলেন বয়স ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই। আর তরুণদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনেরই এফএইচের সমস্যা রয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে মা-বাবার মধ্যে এফএইচ থাকলে তা সন্তানের মধ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এখনকার সেডেন্টারি লাইফষ্টাইলে অত্যাধুনিক জাংকফুড খাওয়া, ওবেসিটি, বসে বসে কাজ ইত্যাদি শরীরে এলডিএলের মাত্রা বাড়ায়।
এফএইচ রোগেীদের রক্তে গড়ে প্রতি ডেসিলিটারে ১৮০ মিলিগ্রাম ক্ষতিকর এলডিএল থাকে। কাজেই এইসব রোগীদের যদি কখনও হার্ট অ্যাটাক হয়, তাহলে হাই ডিনসিটি ষ্ট্যাটিন থেরাপির পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ফলে শরীরে ক্ষতিকর ফ্যাটের মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। ফলে একবার হার্ট অ্যাটাক হলে তরুণদের ঝুঁকি কমানোর পন্থাও রয়েছে। শুধু রোগী ও তার পরিবারকে সময়মত সচেতন হতে হবে।
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।