Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পাইপলাইন

একনেকে ৯ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা উন্নয়ন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এটিসহ মোট ৯ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায়। নয়টি প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় দুই হাজার ৪২২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে পাঁচটি প্রকল্প নতুন, চারটি সংশোধিত। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও সহজ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথভাবে পাইপলাইন নির্মাণ করবে সরকার। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আনা সম্ভব হবে। জ্বালানি পাইপ লাইন প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হবে।

সভায় দেশের আটটি বিভাগে নির্বাচিত ২২টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে ১০ শয্যাবিশিষ্ট ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের মোট খরচ হবে ২৫৫ কোটি টাকা। পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৬টি ডায়ালাইসিস সেন্টারের নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ কিডনি রোগ এখন এক নীরব ঘাতক। প্রতিবছর ৪০ হাজার মানুষ কিডনি বিকল হয়েছে মৃত্যুবরণ করেন। এরমধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ রোগীর আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জেলা হাসপাতাল, মেডিক্যাল হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে কিডনি রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালগুলোতে বিদ্যমান চিকিৎসা সুবিধা কিডনি রোগে আক্রান্ত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। দিন দিন দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় নতুন করে ৬৬টি কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কিডনি রোগের মানসম্মত চিকিৎসা সেবা বাড়বে দেশে। কিডনি রোগের জটিলতা ও মৃত্যুর হারও কমে আসবে। একই সঙ্গে কিডনি রোগীদের পরিবারের চিকিৎসা সেবা কমে আসবে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল সরবরাহের মাধ্যমে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা উন্নত হবে বলেও জানান পরিকল্পনা সচিব। একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন পরিকল্পনামন্ত্রী। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে পরিকল্পনামন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন।

এদিকে টেলিটকের ৫ জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে নেওয়া একটি প্রকল্প গতকাল একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত পাঠান। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব বলেন, প্রকল্পটি কোনো সমীক্ষা না করে একনেক সভায় পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তৃতীয় একটি পক্ষকে দিয়ে প্রকল্পটি সমীক্ষা করানোর জন্য। সমীক্ষা প্রতিবেদন সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পটি পুনরায় একনেক সভায় উত্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক বাড়ানোর পাশাপাশি ৫ জি সেবা চালু করতে টেলিটক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৫০০টি নতুন বিটিএস টাওয়ার নির্মাণের প্রস্তাব করেছিল টেলিটক। কিন্তু গতকাল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন টেলিটকের এত টাওয়ার নির্মাণে প্রয়োজন নেই। যেখানে বেসরকারি খাতের মোবাইল কম্পানির টাওয়ার আছে; সেখান থেকে শেয়ারিং করার জন্য। যেখানে বেসরকারি খাতের টাওয়ার নেই, শুধু সেখানেই টেলিটকের টাওয়ার নির্মাণ করা যেতে পারে। এক জায়গায় সবার টাওয়ার থাকা দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব সাংবাদিকদের জানান, একনেকে ২৪২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩১৪ কোটি টাকা খরচ করা হবে। একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বানেশ্বর-সারদা-চারঘাট-বাঘা-লালপুর-ঈশ্বরদী জেলা মহাসড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কমানে উন্নীতকরণ, ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর-নীলফামারী মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুত, ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুত কেন্দ্রের সামনে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা উন্নয়ন, ২৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী, ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।



 

Show all comments
  • ওমর ফারুক ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশকে সর্বদা ভারতের স্বার্থ না দেখে নিজেদের স্বার্থের উপর গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • আবির ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:০০ এএম says : 0
    অনেক ভালো ভালো প্রকল্প তো হাতে নেয়া হয়, কিন্তু আমরা তার সুফল পাচ্ছি না।
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:০১ এএম says : 1
    আশা করি, ৯ প্রকল্পই দেশের মানুষের জন্য অনেক কল্যাণ বয়ে আনবে
    Total Reply(0) Reply
  • হাবিব ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    ভারতের সাথে যেকোন প্রকল্প হাতে নিলে সেব্যাপারে খুব বেশি সতর্ক থাকা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:০২ এএম says : 1
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনায় দেশ সামনের দিকের এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ