Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৭১ জন বাংলাদেশিকে এখনই আনা সম্ভব নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চীনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খাদ্য সংকটে নেই: রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

হুবেই প্রদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কোনো খাদ্য সংকট নেই বলে জানিয়েছেন চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব জামান। এছাড়া তিনি সেখানে থাকা শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, চীন থেকে আসতে চাওয়া আরও ১৭১ জন বাংলাদেশিকে এখনই আনা সম্ভব হচ্ছে না।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস শিক্ষার্থীদের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে একটি বার্তা পাঠান রাষ্ট্রদূত মাহবুব জামান।
বার্তায় রাষ্ট্রদূত মাহবুব জামান জানান, করোনাভাইরাসের প্রেক্ষিতে হুবেই প্রদেশের ইয়েচংয়ের থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি মূলত একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঢাকা-বেইজিং সরকারি পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দূতাবাসের একক কোনো ক্ষমতা নেই। এরই মধ্যে ৩১২ জন শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বিষয়ে দূতাবাস প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, তা নির্ভর করছে বাস্তবতার ওপর। দূতাবাস দৃঢ়তার সঙ্গে নিশ্চিত করতে চায় যে নাগরিকদের সুরক্ষা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
চীনের থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭১ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে যে অভিযোগ করেছে, সে সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্র বিষয়ক সমন্বয়কারী মি. লি খেয়ের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন সেখানে খাদ্য সরবরাহ সন্তোষজনক।
দূতাবাস থেকে পানি এবং চাল পাঠানোর প্রস্তাব দিলে থ্রি জর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ছাত্র বিষয়ক সমন্বয়কারী মি. লি খেয়ের জানান যে তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে- এমন তথ্য জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মাহবুব জামান বলেন, এ ছাড়া হুবেই প্রদেশের অন্যান্য প্রধানশহরগুলির মতো বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ইয়াচাং শহরটিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খুব দ্রুত বাইরে থেকে খাদ্য পাঠানো কঠিন।
রাষ্ট্রদূত মাহবুব জামান আরও জানান, আন্তর্জাতিক ছাত্র বিষয়ক সমন্বয়কারী মি. লি খেয়ের দূতাবাসকে জানিয়েছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যভান্ডারে পর্যাপ্ত পরিমাণে গম, চাল, তেল, মরিচ এবং মশলা, চিনি, লবণসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেখানে অবস্থান করছে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহের জন্য কিছু সুপারমার্কেট নতুন করে অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছে এবং সরবরাহ করছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিনও অনলাইনে খোলা রয়েছে এবং তারা চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করছে।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘কোনো সাধারণ পরিস্থিতি নয়’ উল্লেখ করে লি খেয়ের দূতাবাসকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিজস্ব স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং কল্যাণের জন্য শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবনের ভেতরে থাকতে বলেছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত মাহবুব জামান। এছাড়া তিনি জানান, কিছু শিক্ষার্থী এখনো বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি না করে আতঙ্কিত হচ্ছে, তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোত্তম উপায় হল শান্ত থাকা এবং ধৈর্য রাখা।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, চীন থেকে আসতে চাওয়া আরও ১৭১ জন বাংলাদেশিকে এখনই আনা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে আরও ১৭১ জন আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের আগ্রহের সঙ্গে আমরা সংবেদনশীল। আমরা আগে ৩১২ জনকে এনেছি। তাদেরকে আনতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন যারা এখন আসতে চাচ্ছেন, তাদের জন্যও আমরা অনেক খরচ করেছি। তারপরও সম্ভব হচ্ছে না। বিমানের ক্রুরা কেউ বাইরে যেতে পারছে না, বিমান কোথাও যেতে পারছে না। সিঙ্গাপুরে পর্যন্ত যেতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, একমাত্র চাইনিজ চাটার্ড ফ্লাইটে তাদের আনা সম্ভব হত। এক পর্যায়ে চীন রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা না করে দিয়েছে। আমরা তো কোনো ফ্লাইট পাঠাতে পারছি না, কোনো ক্রুও যেতে চাচ্ছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করলেও তাদের আনতে পারছি না। চীনে আমাদের মিশনকে বলেছি তারা চেষ্টা করছে। চীন চায় না করোনাভাইরাস তাদের দেশের বাইরে ছড়াক। সেখানে বাংলাদেশিদের চীন সরকার নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ও পানিসহ সব কিছু সরবরাহ করছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব না দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শামীমা বেগমের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। সে ব্রিটিশে জন্মগ্রহণ করেছে। তার মা ব্রিটিশ। তবে শামীমার বাবা বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছিলেন কিন্তু তিনি ব্রিটিশের নাগরিক। শামীমাকে নাগরিকত্ব না দিলে, সেটা তাদের ব্যাপার। এটা আমাদের কিছুই করার নাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্রদূত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ