বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবাসীদের মাঝে বিএসএফ এর বেপরোয়া আচরণ ভয় ক্ষোভ আর আতংক তাড়া করে ফিরছে। বিরাজ করছে উত্তেজনা। তা প্রশমন আর আতংক কাটাতে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি) সীমান্তজুড়ে রয়েছে সতর্ক। বাড়তি বিজিবি সদস্য মোতায়েন করে কড়া নজর রাখছে। উচ্চ পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে বার্তা চিঠি চালাচালিও চলছে।
অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বেশ ক’মাস ধরে হঠাৎ করে বেশী বেপারোয়া আচরন করছে বিএসএফ। কথায় কথায় সীমান্ত অতিক্রম করে এসে বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাওয়া, বাংলাদেশের ভূখন্ডকে নিজেদের বলে দাবী করা, যেন পায়ে পা পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধানোর মত উস্কানী দিচ্ছে।
গত ১৭ অক্টোবর রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে পদ্মার বড়াল মোহনায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভারতীয় তিন জেলে ইলিশ ধরতে শুরু করে। বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে দুজন পালিয়ে যায়। একজনকে আটক করা হয়। পালিয়ে যাওয়ারা বিএসএফকে খবর দিলে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের অনেক ভেতরে এসে আটক জেলেকে ছাড়িয়ে নিতে জোর জবরদস্তি করে। বিজিবি ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে ও হুমকী দেয়। ফিরে যাবার সময় বিএ্সএফ সদস্যরা বিজিবির উদ্যোশ্যে গুলিবর্ষন করে। আত্মরক্ষায় বিজিবিও পাল্টা গুলি বর্ষন করলে বিএসএফের হেড কনেষ্টবল বিজয়ভান মারা যায়। আহত হয় রাজবীর সিং নামে এক সদস্য। এরপর থেকে বিএসএফ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কথায় কথায় গুলি করে মারছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশী জেলে কৃষক আর রাখালদের। পতাকা বৈঠকে ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ এবং পুনরাবৃত্তি হবেনা এমন কথা বললেও বাস্তবে করছে উল্টো আচরন। মনে হচ্ছে যেন প্রতিশোধের নেশা তাদের পেয়ে বসেছে। ঘটনা ঘাটিয়ে উল্টো মিথ্যেচার করছে। বিএসএফ এর বাড়াবাড়ি আচরনে রুটিন মাফিক বিজিবি প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারাও ত্যাক্ত বিরক্ত।
গত ৩১ জানুয়ারী রাজশাহীর সোনাইকান্দি বিওপির নিকট পদ্মা নদীতে মাছ ধরারত পাঁচ বাংলাদেশী জেলেকে সীমান্তের এক কিলোমিটার অভ্যন্তরে বিএসএফ অনুপ্রবেশ করে ধরে নিয়ে মিথ্যে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। বিএসএফের এমন অন্যায় কর্মকান্ডে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছে নদী তীরবর্তী মানুষ। কিন্তু তাদের পাশে দাড়ায়নি কোন মানবাধিকার কিংবা আইনী সংগঠন। বিশেষ করে কিছু চেতনাধারী সংগঠন রয়েছে যারা কথায় কথায় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করে। এক্ষেত্রে তারা একেবারে নীরব। যেন তারা চেতনাহীন হয়ে পড়েছে। তাদের ভূমিকা যেন ভাসুরের নাম মুখে নিতে মানার মত। প্রতিবাদ করলে পাছে বন্ধু রুষ্ট হয়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের চেতনাধারীরাও নীরব। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে অন্যদের আঘাতে তারা নিশ্চুপ কেন ? একটা বিবৃতি দিয়েও সীমান্তের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাড়ায়নি। কিসের এত দৈনতা।
সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ভারত থেকে ব্যাপক হারে অস্ত্র, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য ও মালামাল পাচারের সময় তা বিএসএফ এর চোখে পড়ে না। তাদের বিরুদ্ধে গুলি করে মারাতো দুরে থাক তাদের ধরাও হয় না। যে গরু আসে তা বিএসএফ এর সাথে সমোঝোতা করেই। বনি বনা না হলে রাখালকে গুলি করে মারা হয়। যত অত্যাচার বাংলাদেশী কৃষক, জেলেদের উপর। সীমান্তে অত্যাচার বন্ধে সকল দেশ প্রেমিককে সোচ্চার হতে হবে।
বিশিষ্ট লেখক নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য বড় প্রতিবেশী দেশ ভারত সত্যিকার অর্থে প্রতিবেশী সূলভ আচরন করছেনা। তাদের নেতিবাচক আচরনে আমরা হতবাক। বিশ্বের বহু বড় রাষ্ট্রগুলো পাশ্ববর্তী ছোট রাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ভাই সুলভ আচরন করেনা। ভারত যা করছে তা কোন রকম বন্ধুসূলভ নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও এমন নেই। প্রতিনিয়ত সীমান্তে লোক মারা যাচ্ছে কিংবা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আমাদের সচেতন নাগরিকরা কি করছে ? কিভাবে এমন অনৈতিক কাজ মেনে নিচ্ছে। শুধুই কি সীমান্তে নির্যাতন। নদীগুলোর পানি নিয়ে যা করছে তা কোন নৈতিকতার মানদন্ডেই পড়েনা। এনিয়ে কোন প্রতিবাদ নেই।
নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি এ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, আমাদর রাজনৈতিক দৈন্যতার কারনে ভারত এমন অন্যায় আচরন করে যাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিক দলগুলোর কারো ক্ষমতায় থাকার জন্য কিংবা ক্ষমতায় আসার জন্য ভারত তোষন ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাড়িয়েছে। আর আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ভোগবাদিতায় গ্রাস করেছে। ফলে প্রতিবাদ নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সূপ্র) রাজশাহী সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, প্রতিবেশী দেশের সাথে কখনো সম্পর্ক অ্রতি উচ্চতায় যাচ্ছে। আবার নেমে আসছে। কেন জানি অতি বাড়াবাড়ির ঘটনা ঘটছে তা জিজ্ঞাসার বিষয়। দু’দেশকে বৈঠকে বসে এর নিরসন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।