Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করছে সাড়ে ৪ লাখ ভারতীয়

ডয়সে ভেলে’র প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

পোশাক শিল্প, আইটি, ট্রাভেল এজেন্টে আধিপত্য : বেতনের পেমেন্ট ভারতেই দিতে হয়

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়সে ভেলের ‘বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ভারতীয়দের দাপট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় বিভিন্ন খাতে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। বেশিরভাগই আসেন ট্যুরিস্ট ভিসায়। অর্থাৎ সাড়ে ৪ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করছেন। এদের বেতন ডলারে ভারতেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। সফটওয়্যার ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কারণে বাংলাদেশের আইটি সেক্টরে ভারতীয়দের দাপট বেশি। ট্রাভেল এজেন্টদের বড় একটি অংশ ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে। পোশাক খাতের টেকনিশিয়ান ও ডিজাইনার কাজে ভারতীয় বেশি। এমনকি সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি, একাউন্টেন্ট, প্রশাসনিক খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন। ভারতের পরেই শ্রীলঙ্কা, চীন ও থাইল্যান্ডের অবস্থান।

৭ ফেব্রæয়ারি ডয়সে ভেলে’র প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় নানা কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান শক্ত। করোনাভাইরাসের কারণে চীনাদের দাপট কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় ভারতীয়দের দাপট বাংলাদেশে আরো বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের আইটি খাতের একজন উদ্যোক্তা জানান, সফটওয়্যার ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ভারতীয় কৌশল ব্যবহারের কারণে ওই দেশের জনশক্তিকেও (ভারতীয়) কাজ দিতে হয়। শুধু তাই নয় অনেক ক্ষেত্রে তাদের লোক রাখার শর্তজুড়ে দেয়া হয়। আবার ট্রাভেল এজেন্টদের বড় একটি অংশ ভারতীয়দের নিয়ন্ত্রণে। তাই তাদের সফটওয়্যার ও তাদের লোক বলে কাজ হয়। এটা সরকারের পলিসির বিষয়। সরকার পলিসি ঠিক করলে তাদের দাপট কমবে।

বাংলাদেশের চাকরির বাজার নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হলো বিডিজবস ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে ভারতীয়রাই শীর্ষে। তারপরে শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড। এদের মধ্যে শতকরা ১০ ভাগেরও ওয়ার্ক পারমিট নেই। অধিকাংশই অবৈধভাবে কাজ করেন। তাদের পেমেন্টও এখানে করা হয়না। ভারতীয় হলে তার পেমেন্ট ভারতেই দেয়া হয়। যারা নিয়োগ করেন তারা এরকম একটা সিস্টেম গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশ থেকে কত রেমিট্যান্স দেশের বাইরে যায় সেই হিসাবটি দেখলে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতেই বেশি রেমিট্যান্স যায়। পোশাক খাতের আয়েরও বড় একটি অংশ ভারতীয় টেকনিশিয়ান ও ডিজাইনাররা নিয়ে যান।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত ৫ ফেব্রæয়ারি বুধবার তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে বাংলাদেশে মোট দুই লাখ ৫০ হাজার বিদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত। তাদের মধ্যে বৈধ ৯০ হাজার। অর্থাৎ কাজের অনুমতি নিয়ে এসে কাজ করছেন ৯০ হাজার। বাকিরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছেন। আর যারা বৈধভাবে আছেন তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ কোনো অনুমতি না নিয়েই টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। এই বিদেশিরা বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করেন। টিআইবি বাংলাদেশে বিদেশিদের হিসাব করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ২০১৮ সালে দেয়া ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বৈধ বিদেশির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা বহুগুণ বেশি।

ডয়সে ভেলের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে দু’টি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে নানা কারণে পোশাক খাতে ভারতীয়দের অবস্থান শক্ত। এর মধ্যে পোশাক খাতে জিজাইনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ জনশক্তির অভাব আছে। আর পোশাকের বায়িং হাউজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয়রা। ফলে পোশাক কারাখানাগুলো বায়ার পেতে তাদের কারখানায় মার্কেটিং এবং হিসাব বিভাগেও ভারতীয়দের নিয়োগ করে। তাদের মতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে এক লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করেন। অন্যদিকে বায়িং হাউজে এই সংখ্যা আরো আরো বেশি।

এর বাইরে আইটি খাতেও ভারতীয়দের দাপট। আরো অনেক সেবা খাত আছে যেখানে ভারতীয়রা কাজ করেন। এমনকি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, কনসালটেন্সি এসব খাতেও ভারতীয়রা রয়েছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে কম করে হলেও পাঁচ লাখ ভারতীয় কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তাদের অধিকাংশেরই কোনো ওয়ার্ক পারমিট নেই। তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন। আর তাদের বেতন অনেক বেশি। ট্যুরিস্ট ভিসায় যারা কাজ করেন তাদের রোজগারের পুরো অর্থই অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে যায়।

বিআইডিএসের অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জানান, প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এবার আমাদের রেমিট্যান্সের টার্গেট ২০ বিলিয়ন ডলার। তাহলে আমরা যা আনতে পারি তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ আবার বিদেশি কর্মীদের দিয়ে দিতে হয়। এ থেকে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। এটা আমি বলছি বৈধ চ্যানেলের কথা। অবৈধভাবে কত যায় সেটা সরকার উদ্যোগ নিলে জানতে পারে। কিন্তু উদ্যোগ নেই। এই অর্থ সবচেয়ে বেশি যায় ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। আমার কাছে অবাক লাগে এখানে একাউন্টেন্ট, প্রশাসনিক কাজেও বাইরে থেকে লোক আনা হয়।

 



 

Show all comments
  • Jamil Hosen Jon ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 5
    এদেশের মানুষের উন্নয়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।।জাতির পিতার স্বপনের সোনার বাংলা গড়াই সরকারের মূল লক্ষ।।। জয় বাংলা।
    Total Reply(0) Reply
  • Asif Ibrahim Sheikh ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
    আমরা সুযোগ দিচ্ছি বলেই তারা কাজ করে, দোষ তাদের নয় আমাদের।
    Total Reply(0) Reply
  • Prince Shuvo ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৩৯ এএম says : 0
    Very disappointed
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Iqbal ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    সাড়ে চার লাখ অবৈধ ভারতীয় আমাদের দেশে কাজ করলে আপনাদের অসুবিধা কোথায়?. প্রায় প্রতিদিনইতো সিমান্তে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। এই না হলে বন্ধু রাষ্ট্র।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Jarif Khan ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    .ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের মানুষ কে চাকরি দিচ্ছে হাজার হাজার পুলিশকে নিয়গ দিয়েছে...দেশ কে বিকিয়ে দিয়ে জাতিকে ধংস করে দিছে।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Omar Bin Shaheen ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    সব মিলিয়ে ১০ লাখের ও বেশী...কমাতে কমাতে মাএ ৪ লাখ... সব খানে বাটপারি
    Total Reply(0) Reply
  • M H Rahman ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪০ এএম says : 0
    ক্ষমতায় আসন গেঁড়ে বসে আছে দাদাদের প্রতিনিধি তাই এখন সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় অবৈধতার প্রশ্ন করে লাভ নেই
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kalam Hossien ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক সমাজের বোঝা হয়ে আছে । আর অন্য দেশের লোক আমাদের দেশে চাকুরি করে। লজ্জা জাতির জন্য । এই জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল???
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃসাদ্দাম হোসেন সাইফ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:৪১ এএম says : 0
    ৫ কোটি চাকরি করলেও আমাদের কিছু বলার কা করার ক্ষমতা নেই,কারন আমাদের হেডাম নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • jaydul islam ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    We are worried to see the report.
    Total Reply(0) Reply
  • jaydul islam ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    We are worried to see the report.
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Hossain ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৩:৫৮ এএম says : 4
    ৩০ বছর আছি জার্মানিতে । রাজনীতি বুঝি না । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি । ভারতীয় কর্মীরা এতই দক্ষ যে তাদের কদর জার্মানিতেও আছে । ইংরেজি ভাষা ও ডিজিটাল কমিউনিকেশনে ওরা অত্যন্ত দক্ষ । বিশ্বায়ন সম্পর্কে তাদের ধারণা স্পষ্ট । তাদের কাজের মাণ বিশ্বমানের । তাদের নিয়োগ করলে মালিকদের লস হয় না । বরং লাভই হয় । ওদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনা হয়, অন্য কিছু না । ওরা মন দিয়ে পড়াশোনা করেছিল । এখন বের হয়েছে বিশ্ব জয় করতে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:২৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশের যুবকরা বেকার বসে আছে অথচ তাদের কর্ম নাই
    Total Reply(0) Reply
  • MUSLIMUDDIN ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৫৮ পিএম says : 0
    ভারত সরকার দিয়ে আমারদের সরকার সেই কারনে এত সুবিদা কারন আমি এক জন পবাসী।
    Total Reply(0) Reply
  • MUSLIMUDDIN ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:৫৯ পিএম says : 0
    ভারত সরকার দিয়ে আমারদের সরকার সেই কারনে এত সুবিদা কারন আমি এক জন পবাসী।
    Total Reply(0) Reply
  • Fakhrul ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৮:৫৪ এএম says : 0
    Kick this Indian out from my country.
    Total Reply(0) Reply
  • Ahsan ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৯ পিএম says : 0
    Govt. Take initiative for valid visa permit checking.....
    Total Reply(0) Reply
  • ভারত মুর্দাবাদ ২ মার্চ, ২০২০, ১২:২৪ এএম says : 0
    মোদী একটা কুখ্যাত সন্ত্রাসী। মোদীর ২ গালে জুতা মারো তালে তালে
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Abdul Matin Miah ৫ মে, ২০২০, ৮:৩৩ পিএম says : 0
    দেশের বেকারত্বের দিক বিবেচনা করে সরকারের এ ব্যপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি ।
    Total Reply(0) Reply
  • পথিক ৭ মে, ২০২০, ২:০৯ পিএম says : 0
    একটা কথা আছে, খাইবার তা হু, দিবা তা না ।
    Total Reply(0) Reply
  • Badrul Hasan ৮ মে, ২০২০, ৩:০৪ পিএম says : 0
    my perception, they are good in communication ,well enough presentable and smart than Us. It's reality but government should should take steps to find out the culprit who are illegal.
    Total Reply(0) Reply
  • Asahaduzzaman ১১ মে, ২০২০, ১১:৪৫ এএম says : 0
    No need more foreign people in Bangladesh. Because we have enough experience about the all sectors.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ