Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাভাইরাস সতর্ককারী সেই চিকিৎস মারা গেছেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৯ পিএম

করোনা ভাইরাসে প্রাণ হারালেন ভাইরাসটি নিয়ে অন্যান্যদের প্রথম সতর্ক করা চীনা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আগ থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রæয়ারি) দিবাগত রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত বছরের শেষ দিকে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় রাজ্যের সব গণপরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১ কোটি ১০ লাখ মানুষের শহর যেন পরিণত হয়েছে প্রায় ভুতুড়ে শহরে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ কেউ শহর ছেড়ে গেলেও অনেকে সেখানে কার্যত অবরুদ্ধ।
নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসে চীনে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয়শোর মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজারের মতো।
ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে হুবেই প্রদেশের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের বাস চলাচল একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার। ফলে প্রায় ৬ কোটি মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
চীনে ভয়াবহ আকার ধারন করা প্রাণঘাতী ভাইরাসটির প্রথম অস্তিত্ব টের পেয়েছিলেন ও ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছিলেন চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। উইচ্যাটে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর তার মেডিকেল স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রুপে ডা. লি জানিয়েছিলেন, স্থানীয় একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাতজন একটি বিশেষ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন।
এটি অনেকটা সার্সের মতো। তিনি সেখানে ব্যাখ্যা করে নিচের বন্ধুদের সতর্ক করে বলেন যে, তার গবেষণা অনুযায়ী এটি আসলে করোনাভাইরাস। এ জন্য বন্ধুদের সবাইকে সতর্ক থাকতেও বলেন তিনি। এগুলো সবই ছিল অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা।
কিন্তু তার সেই চ্যাট গ্রুপের আলাপের স্ক্রিনশট সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে উহান পুলিশের হাতে আটক হন ৩৪ বছর বয়সী লি ওয়েনলিয়াং।
সেই মুহূর্তে এই রোগটি সম্পর্কে তথ্য ছড়াতে চায়নি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে দ্রæতগতিতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস রুপ নেয় মহামারিতে। পরে ড. লির বিষয়টি জানাজানি হয়।
যার ফলে বিশ্বের কাছে প্রথমবারের মতো উহানের করোনা ভাইরাস নিয়ে তথ্য প্রকাশ পায়। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য প্রকাশের জন্য ওয়েনলিয়াংকে তিরস্কার করেছিল। তাকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছিল। তার বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তদন্তও চালু হয়েছিল।
ওয়েনলিং তার পোস্টে লিখেছিলেন, নতুন রহস্যজনক ভাইরাসটি দেখতে অনেকটা ২০০২ সালের সারস ভাইরাসের মতো। এতে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সারস এর উৎপত্তিস্থল ছিল চীন। সেটিও সাম্প্রতিক ভাইরাসটির মতো একটি করোনাভাইরাস ছিল। এতে বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৮০০ মানুষ।
এদিকে, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চাপের শিকার হলেও, পরবর্তীতে ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ওয়েনলিংয়ের প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়। কিন্তু ততদিনে নিজেই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন ওয়েনলিং। চীন সরকারের তথ্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার কারণে ভাইরাসটি প্রাথমিকভাবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না বলে ধরা হয়েছিল। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে এতে আক্রান্ত হন ওয়েনলিং।

গত ১২ জানুয়ারি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন লি ওয়েনলিয়াং। কিন্তু তার তার শরীরে করোনাভাইরাসের বিষয়টি ধরা পড়ে গত ১ ফেব্রæয়ারি। রোগীর দেহ থেকে লির শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যায় ডা. লি। ২৭ বছর বয়সী এ চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর নিয়ে চীনা গণমাধ্যম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের গেøাবাল টাইমস প্রথমে লির মৃত্যুর খবর দেয়, পরে তা প্রত্যাহার করে বলে ওই চিকিৎসক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। চীনের পিপলস ডেইলিও লির মৃত্যুর খবর জানিয়ে টুইট করেছিল।


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ