Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কলসীমুখ বিলীনের শঙ্কা ফেনী নদীর পাড়ে ধস

রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পার্বত্যাঞ্চলের গর্ব একটি বৈচিত্রময় দৃষ্টিনন্দন তীব্র প্রবাহমান খরস্রোতা ফেনী নদী। সে নদীর কুলঘেসে দেখতে অবিকল কলসীর আকৃতিতে গড়ে উঠেছে বলেই গ্রামটির নাম দেয়া হয়েছে লাচাড়ী পাড়া (কলসী মুখ)। ১শ’ থেকে ১শ’ বিশ গজ দৈর্ঘ্যর প্রবেশ প্রথটির ভেতরটা অবিকল কলসীর আদলেই গড়া আর এ কারণেই গ্রামটি এখন খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার একটি ব্যতিক্রমী পর্যটন এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত।
গ্রামের প্রবেশ মুখে পাহাড়ের উপরে স্থাপিত বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের লাচারীপাড়া বিওপি ক্যাম্প থেকে তাকালে মনে হবে এ যেন এক দৈত্যকার কলসীর প্রতিস্থাপন। উপজেলা সদর হতে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ২শ’ ৫০ একরের সীমান্ত গ্রামটিতে প্রায় ৫০ পরিবারের তিনশত উপজাতী মারমা-ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। তিন দিক থেকে ফেনী নদীর গতিপথ বেষ্টিত গ্রামটির পুরাটাই ভারতে গর্ভে। গ্রামে প্রবেশের পথে ১শ’ থেকে ১শত বিশ গজ প্রবেশ মুখের পূর্ব পাশে সম্প্রতি ফেনী নদীর পাহাড়ি ঢলে ধারাবাহিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে গ্রামটিতে প্রবেশ মুখে তথা কলসীর মুখের ভাঙনটি ঠেকানো না গেলে ভারতের গর্ভে বিলীন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।
ফেনী নদীর তীব্র প্রবাহমান খরস্রোতা থেকে গ্রামটিকে রক্ষা করা না হলে বাংলাদেশ থেকে গ্রামটি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়ার আশংকা গ্রামবাসীর। প্রতিনিয়ত পানির স্রোতধারা কলসীর মুখে ধাক্কা দেয়ায় ধাপে ধাপে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামটির উত্তর দিকে নতুন করে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কার্বারী অ্যাসোসেয়শনের সভাপতি আনন্দ মোহন ত্রিপুরা জানান, রামগড় উপজেলা বিভিন্ন এলাকা যেমন- লাচাড়িপাড়া, বড়খেদা, কাশিবাড়ী, কার্বারীপাড়া, বল্টুরামটিলা, মন্দিরঘাট, পরশুরাম ঘাট, বৈদ্যপাড়া ডাক বাংলোঘাট, সোনাইপুল, পিলাকঘাট এসব এলাকার নদীরপাড় রক্ষা খুব দ্রæত প্রয়োজন বলে মনে করেন। এদিকে রামগড় বাজারঘাট, থানাঘাট, দারোগা পাড়া, মহামুনী ও ফেনীরকুল সীমান্তে শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে নির্মিত সিসি বøকগুলি ফেনী নদীর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এক যুগ আগে অপরিকল্পিতভাবে এসব সিসিবøক নির্মাণ করায় হুমকির মুখে রামগড় শহর এমনটাই মনে করছেন বিশেজ্ঞরা।
গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি থিং থোয়াই মারমা জানান, কলসীর আকৃতিতে গড়া সমতল গ্রামটি এখন রামগড় উপজেলার একটি বৈচিত্রময় দৃষ্টিনন্দন কৃষি সমৃদ্ধ গ্রাম ও ব্যক্তিক্রমী পর্যটন গ্রামও বটে। তিন দিক থেকে সীমান্ত নদী ঘেরা গ্রামটির প্রবেশ মুখের ধারাবাহিক ভাঙনে আমাদের অস্তিত্ব এখন হুমকীর মুখে। দ্রæত ভাঙন রোধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা না নিলে হয়তো কোন এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবো বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন বিচ্ছিন্ন এক জনপদের বাসিন্দা।
ওর্য়াড মেম্বার থুইমং জানান, গ্রামটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গ্রামবাসির পক্ষ থেকে উর্দ্বতন সব মহলকে অবহিত করার পর বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নদীরক্ষা সিসি বøক স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী এ প্রতিনিধিকে বলেন, কলসীর মুখে ভাঙনের খবর পেয়ে আমি সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চাওয়া হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ভাঙন রোধে সিসিবøকের কাজ শুরু করে। একাজ আরো ব্যাপক ও বড় পরিসরে হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সরওয়ার উদ্দিন এ বিষয়ে জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসকের বরাবর জানানো হয়েছে। ফেনী নদীর বিভিন্ন এলাকা ভাঙন রোধে দ্রæত পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ