Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

করোনায় আক্রান্ত হলেন চীনের ‘হিরো’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৬:০৭ পিএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সম্পর্কে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন উহান শহরের এক চিকিৎসক। লি ওয়েনলিয়াং নামের ওই চিকিৎসক সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে এই নতুন ভাইরাস। তবে তখন তার সে কথায় পাত্তা দেয়নি দেশটির কর্তৃপক্ষ। পাল্টা তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হুমকি দেয়া হয়। এক মাস পরে সেই চিকিৎসকই সবার কাছে হিরো হয়ে ওঠেন।

চীনকে আগাম সতর্কবার্তা দেয়া চিকিৎসক লি নিজেও এখন করোনায় আক্রান্ত। তিনি একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। কর্মরত উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। ডিসেম্বরে সাত ব্যক্তির শরীরে তিনি নতুন এই ভাইরাসটি শনাক্ত করেন এবং ভেবেছিলেন এটা সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে, যেটা ২০০৩ সালে দেখা গিয়েছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল, এ ভাইরাসটির উৎপত্তি উহানের হুনান শহরের একটি সামুদ্রিক বাজার থেকে। এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত ওই সাত রোগীকে তার হাসপাতালের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।

বিষয়টি জানতে পেরে ৩০ ডিসেম্বর একটি চ্যাট গ্রুপে সহকর্মীদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন লি এবং বলেন, এ রোগ সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। এ রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে তাদের নিরাপত্তামূলক পোশাক পরিধান করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে ডাক্তার লি যে ভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে এই নতুন ভাইরাসটির নাম নোভেল করোনাভাইরাস।

চারদিন পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন এবং একটি চিঠিতে তাকে সই করতে বলেন। চিঠিতে তার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয় এবং বলা হয়, এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। বিবিসি বলছে, চিকিৎসক লি বাদেও আরও সাতজনকে একই অভিযোগে নজরদারিতে রাখা হয়।

জানুয়ারির শেষের দিকে চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে ওই চিঠির কপি প্রকাশ করেন লি এবং তার সঙ্গে কী কী ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দেন। এখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে এজন্য ক্ষমা চেয়েছে। তবে এই ক্ষমা চাওয়া ও নিজেদের ভুল বুঝতে পারাটা অনেক দেরিতে হলো। ততক্ষণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন চার শতাধিক। মৃত্যুর প্রহর গুনছে শতশত ব্যক্তি।

পুলিশ সতর্ক করে দিয়ে চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর এক গ্লুকোমা রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন চিকিৎসক লি। তবে তিনি জানতেন না যে, তিনি যে রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি ইতোমধ্যে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

উইবো পোস্টে লি জানান, কীভাবে ১০ জানুয়ারি তার কাশি শুরু হয়। পরদিন তার শরীরে জ্বর দেখা দেয়। তার দুইদিন পর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তিনি জানান, তার পিতামাতাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তাদেরকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

লি-র পোস্টের ১০ দিন পর ২০ জানুয়ারি করোনাভাইরাসের বিষয়ে জরুরি অবস্থা জারি করে চীন কর্তৃপক্ষ। লি জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা জানতে তিনি একাধিকবার পরীক্ষা করিয়েছেন। তবে সব পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।

৩০ জানুয়ারি আরেকটি পোস্ট দেন এই চিকিৎসক। জানান, আজ নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্টের ফলাফল এসেছে এবং তা পজিটিভ। তার মানে হলো অবশেষে ধরা দিল এই রোগ (করোনাভাইরাস)। পোস্টে একটি কুকুরের ইমোজি যোগ করে দিয়েছেন তিনি। যার চোখ দুটো ধূসর এবং জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে।

নেটিজেনদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে তার এ পোস্ট। অনেকে তাকে সাহস জোগাচ্ছেন। একজন লিখেছেন, ‘লি ওয়েনলিয়াং একজন হিরো।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘লির সঙ্গে যা করা হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে চিকিৎসকরা এরকম প্রাণঘাতী রোগ সম্পর্কে পূর্বে সতর্ক করার সাহস হারিয়ে ফেলবেন।’ অন্য আরেকজন লিখেছেন, ‘সব নাগরিকের জন্য একটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পরিবেশের জন্য লাখ লাখ লি ওয়েনলিয়াং দরকার।’

চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৪২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। মঙ্গলবার দেশটির হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন করে সেখানে আরও ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে সেখানে আরও দুই হাজার ৩৪৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মোট ১৯ হাজার ৫৫০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে ২০টির বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ