Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

এক রুমে চীন ফেরত ৫৫ শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান সিটি থেকে ৩১৪ জনকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ৩১৪ বাংলাদেশীকে নিয়ে বিমানের একটি উড়োজাহাজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর ৮টি বাসে তাদের ৩০৪ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে নেয়া হয়। শরীরে উচ্চ তাপমাত্রার কারনে ৭জনকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং ৩জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়েছে। চীনে নতুন প্রাণঘাতি (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগের প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা’ ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশী এসব নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে নতুন (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনাভাইরাসে চীনে একদিনেই আরও ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৯১ জনে দাড়িয়েছে। হুবেই প্রদেশের উহান সিটিতে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের সংক্রমনে শুক্রবার পর্যন্ত ২৫৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস বৃহস্পতিবারই সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) আক্রান্ত্রের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে।

অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, চীনের উহান সিটিতে মারাত্মক এ প্রাণঘাতি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে অবস্থানরত প্রায় ৪’শ থেকে ৫’শ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে চীন সরকারের বিধিনিষেধ থাকলেও পরবর্তীতে সেই সমস্যার সমাধান হয়। সেখান থেকে ৩৬১ জন বাংলাদেশী প্রাথমিক ভাবে দেশে ফিরতে নিবন্ধন করেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফিরে এসেছেন ৩১৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ কাজে সম্পৃক্ত একজন পদস্থ কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, শুক্রবার বিকেল ছয়টায় ঢাকা থেকে একটি বিশেষ বিমান উহানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নিবন্ধিত বাংলাদেশী নাগরিকদের নিয়ে রাত আড়াইটায় বিমানটির ফিরে আসার কথা। কিন্তু পাসপোর্ট জটিলতায় তাদের অনেকেই আসতে পারেননি। এছাড়া শেষমূহুর্তে কয়েকজন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এসব কারনেই উল্লেখিত সংখ্যক নাগরিকদের নিয়ে নির্ধারিত সময়ে আসতে পারেনি বিমানের বিশেষ ফ্লাইট। শেষ পর্যন্ত ৩১৬ জনের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও দু’জনের শরীরে অধিক তাপমাত্রা থাকায় তাদেরকেও রেখে আসা হয়।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন তৌহিদুল আহসান জানান, শনিবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে চীনের উহান থেকে ৩১৪ বাংলাদেশীকে বহনকারী উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর বিআরটিসির ৮টি বাসে করে তাদের ৩০৪ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে তারা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তিনি জানান, এর আগে চীনের উহানে থাকা বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আনতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪১৯ জন যাত্রী বহনে সক্ষম একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজ ঢাকা ছেড়ে যায়। সেখানে থাকা বাংলাদেশীদের বিভিন্ন স্থান থেকে উহান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির করে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস। হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস থেকে বাসে করে বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে ৭ জন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জন জ্বরে আক্রান্ত। এদের মধ্যে তিনজনের শরীরে ১০০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা রয়েছে। জ্বরে আক্রান্ত এক নারীকে হাসপাতালে নেয়া হলে তার সুস্থ স্বামী ও সন্তান সেখানে তার সঙ্গে অবস্থান করছেন। তিন জনকে নেয়া হয়েছে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ-এ। অবশিষ্ট ৩০৪ জনকে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারান্টাইন অবস্থায় রাখা হয়েছে।

প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, উহান থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা আপাতত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন না। হজ ক্যাম্পে তারা সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় তাদের ১৪ দিন রাখা হবে।
আইইডিসিআর’র প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, আমরা আশা করছি ফেরত আসাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইনে আমাদের চারটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা ও নির্ধারিত ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থেকে তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবেন।

হতাশায় উহান ফেরত শিক্ষার্থীরা : হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থাপনায় হতাশ হয়েছেন চীন ফেরতরা। ক্যাম্পের একেকটি ফ্লোরের মেঝেতে তাদের অনেককে একসঙ্গে পাশাপাশি ঢালাও বিছানা দেওয়া হয়েছে। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক উহান থেকে ফিরে আসা কয়েকজন জানান, চীনের উহানের পুরো শহর লকডাউন করা হয়েছে, যেন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে। আমরা চীনে এক রুমে ২-৩ জন থাকতাম। অথচ দেশে ফিরে আমাদের একটা খোলা ফ্লোরে একসঙ্গে ৫৫ জনকে রাখা হয়েছে। তাও আবার মেঝেতে বিছানা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে প্রচুর মশা। স্বাভাবিকভাবে বসতেও পারছি না। দেশে এসে এমন পরিস্থিতি দেখতে হবে আশা করিনি। এরচেয়ে উহানেই ভালো ছিলাম। উহান ফেরত শিক্ষার্থী ইশান ইসলাম বলেন, এখানে ব্যবস্থাপনা দেখে আমরা হতাশ। এভাবে গণরুমে একসঙ্গে থেকে আমরা আরও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আক্রান্ত ১১ হাজারের বেশি, মৃত্যু ২৫৯ জন : নতুন (২০১৯-হঈড়ঠ) করোনাভাইরাসে চীনে একদিনেই আরও ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়েছে দুই হাজারের বেশি। হুবেই প্রদেশের উহান সিটিতে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের সংক্রমনে শুক্রবার পর্যন্ত ২৫৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস বৃহস্পতিবারই সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) আক্রান্ত্রের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে। ২০০২-০৩ সালে দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০’র কাছাকাছি। শুক্রবার একদিনের ব্যবধানেই চীন নতুন এই ভাইরাসে আরও দুই হাজার ১০২ জনের আক্রান্তে খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে চীনেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১১ হাজার ৭৯১ জনে- শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ