Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদায় সংবর্ধনায় যাওয়ায় আগেই চিরবিদায়

ওয়ারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ওই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিদায় দিতে রাজধানীর ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল বিদায়ী অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে আসেন। কিন্তু বিদায়ী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন আবির হেসেন (১৫) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। তবে সহপাঠীর এমন বিদায়ের খবর পেয়ে আনন্দ-উৎসবের পরিবর্তে সবার মাঝে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন সহপাঠীরা। গতকাল সোমবার সকালে জয়কালী মন্দির এলাকায় ওয়াসার পানির লরি ধাক্কা আবিরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিহত আবির হোসেন কুমিল্লার বড়–রা উপজেলার মো. হানিফ মিয়ার ছেলে। বর্তমানে ওয়ারীর, ৫৩/৪ জয়কালী মন্দির এলাকায় পরিবারের সাথে থাকতো। তার বাবা নবাবপুরে মেশিনারি পার্টসের ব্যবসা করেন। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে ছিল ৩য়।

জানা গেছে, গতকাল সকালে জয়কালী মন্দির এলাকায় নিজের বাসা থেকে বন্ধুদের সাথে বের হন আবির। পরনে ছিল পাঞ্জাবি-পায়জামা। কয়েক বন্ধুকে নিয়ে ওয়ারী এলাকায় বলধা গার্ডেনের পাশে সড়ক দিয়ে ঘুরে যাচ্ছিল আবীর। বলধা গার্ডেনের উত্তর পাশের গেটের সামনে ওয়াসার পানির পাম্প স্টেশন। সেখান থেকে পানি নেওয়ার পর বেপরোয়া গতিতে থাকা ওয়াসার পানির লরি ধাক্কা দেয় আবীরকে। কেবল ধাক্কা নয়, মাটিতে পড়ে যাওয়া এই কিশোরের মাথার ওপর উঠে যায় লরিটির চাকা। পরে আবীরের সাথে থাকা সহপাঠী ও এলাকাবাসী লরির চালক চুন্নুু মিয়াকে (৪৯) আটক করে।
অপরদিকে রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত এই কিশোরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এর আগেই প্রাণ হারান আবির। পরে ঢামেকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার তারিকুল ইসলাম জানান, ওয়াসার পানিবাহী লরিসহ (ঢাকা মেট্রো ঢ ১১-০১১৪) চালককে আটক করে ওয়ারী থানা হেফাজতে রাখা হয়।
এদিকে, আবিরের মৃত্যুর খবর পেয়ে সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা সরে গিয়ে স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে দোষী চালকের শাস্তির দাবি জানায়।
ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ছাড়াও গতকাল স্কুলে বার্ষিক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। মিলাদের পর পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রও দেওয়া হতো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসার কথা ছিল স্থানীয় সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদের। বেলা ১১টার পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর আবিরের দুর্ঘটনার সংবাদ আমরা জানতে পারি। এ খবর শুনেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আবীরকে শনাক্ত করি।
তিনি আরো জানান, আবিরের মৃত্যুে কারণে স্কুলের সব কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়। সেখানে কেবল আবিরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়।
আবিরের সহপাঠী রাসেল জানান, আজকে তাদের ফেয়ারওয়েল ছিল। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সব বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা স্কুলে যান। স্কুলের সামনের সড়কে ওয়াসার গাড়ি আবিরকে চাপা দেয়। গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে ছিল।
আবিরের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, তার স্কুলে একটি অনুষ্ঠান ছিল, আবির সে অনুষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরার পথে বলদা গার্ডেনের পাশে ওয়াসার একটি গাড়ি তাকে চাপা দেয়, এতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
ওয়ারী থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ঘাতক চালকে আটক, গাড়িটিকে জব্দ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এদিকে, এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনের ওয়ারী স্ট্রিট সড়ক অবরোধ করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এ সময় রাস্তার দু’পাশে সড়কে যানজট লেগে যায়।
উল্লেখ্য, মাত্র ১১ মাস আগে আবিরের মা মিনু বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পাঁচ বছর আগে আবিরের বড় ভাই ফয়সাল হোসেন পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। আবিরের বাবা মো. হানিফ মিয়া পুরান ঢাকার নবাবপুরে খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী। বড় ছেলের মৃত্যুর পর হানিফ মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে আবির ছিল সবার ছোট। বাকি দুই বোন আবিরের চেয়ে বড়। মায়ের আকস্মিক মৃত্যুর পর আবির বড় বোন আমেনা বেগমের বাসায় অধিকাংশ সময় কাটাত। ছোট ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল মো. হানিফ মিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছেলের লাশ দেখার পর ডুকরে ওঠেন তিনি। হানিফ মিয়া বলেন, বড় ছেলের মৃত্যুর পরছোট ছেলেই ছিল তঁর সব আশা। কিন্তু আবিরকেও চলে যেতে হলো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিহত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ