Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পারমাণবিক বোমার তালিকায় শীর্ষে রাশিয়া, নতুন সদস্য ইরান!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:৩৫ পিএম

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ঘিরে আবারও আলোচনায় এসেছে পারমাণবিক অস্ত্র। কয়েকদিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। পশ্চিমা গোয়েন্দারা বলছে, আগামী এক বছরের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হবে ইরান। তবে কারও কারও মতে- এক বছর নয়, তেহরানের এই সক্ষমতা অর্জন করতে দুই বছর সময় লাগবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বর্তমানে বিশ্বের মোট ৯টি দেশের কাছে এই ভয়ংকর অস্ত্র রয়েছে। পারমাণবিক বোমার মালিক দেশগুলো হলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া। তাতে নতুন সদস্য হিসাবে নাম লেখাতে যাচ্ছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক রাশিয়া। তাদের কাছে মোট ৬ হাজার ৪৯০টি পারমাণবিক বোমা আছে। এরপরই আছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মোট পারমাণবিক বোমার সংখ্যা ৬ হাজার ১৮৫টি। এরপর যথাক্রমে আছে ফ্রান্স (৩০০টি), চীন (২৯০টি), যুক্তরাজ্য (২০০টি), পাকিস্তান (১৬০টি), ভারত (১৪০টি), ইসরায়েল (৯০টি) ও উত্তর কোরিয়া (৩০টি)।

হিসাব বলছে, ১৯৮৬ সালে বিশ্বজুড়ে ৭০ হাজার পারমাণবিক বোমা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা কমে ১৪ হাজারে এসেছে। মার্কিন বিজ্ঞানীদের দাবি- রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের পারমাণবিক বোমার সংখ্যা কমালেও এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া।

পারমাণবিক বোমা নিয়ে এত আলোচনা, এত উদ্বেগের কারণ হলো এটি ভয়ংকর এক অস্ত্র, যা দিয়ে বিশাল এলাকা চোখের নিমেষে ধ্বংস করে ফেরা সম্ভব। এ ধরনের বোমাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র। শুধু একটি পারমাণবিক বোমা দিয়ে পুরো একটি শহর ধ্বংস করা যায়।

এমন নজির ইতিহাসেও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এতে ওই শহর দুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, শহর দুটিতে পারমাণবিক বোমা হামলার রেশ এখন পর্যন্ত কাটেনি। ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা এখনো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

পারমাণবিক বোমা থেকে অনেক তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়। এতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়। ইতিহাসে দুটি পারমাণবিক বোমাই ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি’ই যুক্তরাষ্ট্রের। এর মধ্যে হিরোশিমায় এই বোমার আঘাতে ৮০ হাজার মানুষ নিহত হন এবং নাগাসাকিতে নিহত হন ৭০ হাজার মানুষ।

তত্ত্ব অনুযায়ী- প্রযুক্তিগত, বুদ্ধিবৃত্তিক ও অন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকলে যে কোনো দেশ পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে। তবে বিভিন্ন পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে সেই পথ অনেকটাই রুদ্ধ করা হয়েছে। মূলত এ ক্ষেত্রেই কিছুটা জটিলতার মুখে পড়েছে ইরান।

ইরান তাদের প্রথম পরমাণু কার্যক্রম শুরু করে ১৯৫০ এর দশকে। তখন থেকে দেশটি দাবি করে আসছে, তাদের এই কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি তাদের লক্ষ্য নয়। এমন দাবি করেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছিল ইরান- এমনটি জানায় পশ্চিমারা। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করে ইরান। চুক্তির শর্ত ছিল, তেহরান তাদের পরমাণু কার্যক্রম স্থগিত করবে। বিনিময়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যে ইরানকে সহায়তা করবে। কিন্তু ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন থেকে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়।

গত ৩ জানুয়ারি ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে ট্রাম্প প্রশাসন। এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় ইরান এবং ঘোষণা দেয়- তারা আর পরমাণু চুক্তি মেনে চলবে না। এতে দেশটি আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই পারমাণবিক বোমার অধিকারী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ