গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
জনগণের খেদমত এবং তাদের উন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। বিগত জাতীয় নির্বাচনের মত মামলা-হামলা করে মাঠ খালি করার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর বারোটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ শ্যামল দত্তের পরিচালনায় সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, ডেইলি অবজারভার -এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুস শহীদ বক্তব্য রাখেন। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাবেক সাধারন সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী ও মাঈনুল আলম, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএনপি নেতা রফিক শিকদারসহ জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনএবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, গত ১৮ দিন ধরে আপনারা আমার নির্বাচনী প্রচারণার কাজ নিরলসভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন, সেজন্য আমি সাংবাদিক ভাইবোনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইশরাক হোসনে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল- জনগণ হবে দেশের মালিক, জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক। আমি মুক্তিযুদ্ধের সেই চতেনা ধারণ ও বিশ্বাস করি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে অবাসযোগ্য নগরী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বায়ু দূষণ, নারী-শিশুদের জন্য অনিরাপদ শহরের তালিকায়ও ঢাকা এক নম্বরে। আমি ঢাকার সন্তান। এই সমস্যাগুলোর মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসির সঙ্গে আমিও বেড়ে উঠেছি। এ সমস্যাগুলো আমার জানা। নির্বাচিত হলে এই শহরকে বাসযোগ্য করার জন্য যা যা করণীয় সব করব। জনগণের খেদমত এবং নগরবাসীর উন্নয়নে আমি নিজেকে উৎসর্গ করে দিব।
বিএনপি একটি উদার-গণতান্ত্রিক দল উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। তাই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইভিএম-এর কার্যকারিতা নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় জানানো হয়েছে। সেটাতে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোট কারচুপি ও বড় ধরনের জালিয়াতি সম্ভব। তারপরও আমরা যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক দল। গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।
রোববারের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত আঠারো দিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রচারণা চালিয়ে আসছি। বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা জেনেছি। সবাই আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। ওইসব এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থিত কাউন্সিলরদের সাথে আমি দেখা করেছি, কথা বলেছি, মতবিনিময় করেছি। কিন্তু গতকাল প্রচারণা শেষে ৪১ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর-এর নির্বাচনী প্রচারণার ক্যাম্পের সামনে দিয়ে আসার সময় অতর্কিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন সাংবাদিকসহ ১২ জন নেতাকর্মী আহত হন।
হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা গতকাল থেকে আশঙ্কা করেছিলাম যে, আমাদের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করবে। সেটাই হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় পাঁচ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওয়ারী থানায় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটা মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের প্রতি আহবান জানাবো নির্বাচনের প্রচারণা সমানভাবে করার সুযোগ আমাদের দেয়া হোক। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে।’
জনগণ পরিবর্তন চায়
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সাম্পতিক বছরগুলোতে সিটি কর্পোরেশন যারা পরিচালনা করেছেন জনগণ তাদের প্রতি বিক্ষুব্ধ। তাই জনগণ পরিবর্তন চায়। শান্তিপূর্ন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। আমরা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। অতীতের সব বাদ দিয়ে এখন যে নির্বাচন হচ্ছে সে নির্বাচনে জনগণ যাতে তাদের ভোট দিতে পারে এবং তাদের অধিকার ব্যক্ত করতে পারে সেই প্রত্যাশা করছি আমরা।
ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতেই কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে। এটা কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না। প্রত্যেকটি হামলার ঘটনার ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে দুই সিটি করপোরেশনের জনগণ মতামতের মাধ্যমে তাদের পছন্দের এবং ঢাকা শহরকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সেই নির্বাচনের পর এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি বৃহৎ নির্বাচন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন।
গণসংযোগে নিজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখেছি। সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি সর্বোপরি তাদের অগণতান্ত্রিক আচরনের কারনেই এই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া তাদের অযোগ্যতা ও অদূরদর্শিতার কারণে ঢাকা শহর সারা পৃথিবীর মধ্যে একটি বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। যানজট, বৃষ্টির সময়ে জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু আতঙ্ক- এসব সমস্যার কথা আপনারা জানেন। সব দিক থেকে এই শহর একটা আতঙ্কের মহানগরে পরিণত হয়েছে। এজন্য আমরা এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।