Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাইসাম বিন তারিক ওমানের নতুন সুলতান

কাবুস বিন সাঈদের ইন্তেকাল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ওমানের নতুন সুলতান নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী হাইসাম বিন তারিক আল-সাঈদ। গতকাল শনিবার তিনি দেশটির সুলতান হিসেবে শপথ নেন। হাইসাম বিন তারিক আল-সাঈদ ছিলেন ওমানের সদ্য ইন্তেকাল করা সুলতান কাবুসের চাচাতো ভাই। আরব বিশ্বের দীর্ঘদিনের শাসক সুলতান কাবুস বিন সাঈদ শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করার পর তার উত্তরসূরী হিসেবে হাইসাম বিন তারিক আল-সাঈদ সুলতান হলেন।

সুলতান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন মরহুম সুলতান কাবুসের তিন চাচাতো ভাই সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী হাইসাম বিন তারিক আল সাঈদ, উপ-প্রধানমন্ত্রী তারিক আল সাঈদ ও সাবেক নৌকমান্ডার সিহাব বিন তারিক আল সাঈদ। তবে শেষ পর্যন্ত হাইসাম বিন তারিককে সুলতান হিসেবে নির্বাচিত করা হলো। দেশটির দুটি দৈনিকের অনলাইন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওমানের নতুন শাসক হাইসাম বিন তারিক আল-সাঈদ গতকাল শপথ নেন। এছাড়া কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার রাজপরিবারের বরাতে তার নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ওমানের মরহুম সুলতান কাবুস সাবেক আরব উপদ্বীপটিকে একটি পশ্চাৎপদ অবস্থা থেকে আধুনিক রাষ্ট্রে রূপ দিয়েছিলেন। নিজের সালতানাতকে তিনি যেমন আঞ্চলিক উত্তেজনা থেকে দূরে রাখছিলেন, তেমনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও তার চাহিদা ছিল। ব্যক্তিগতভাবে নিজের কোনো উত্তরাধিকার রেখে যাননি। যদিও আধুনিক আরব বিশ্বের দীর্ঘ সময়ের শাসক ছিলেন তিনি।
১৯৪০ সালের ১৮ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন কাবুস। দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রাদেশিক রাজধানী সালালাহে কয়েক বছরের পুরনো আল-সাঈদ রাজপরিবারে তার জন্ম। বয়স্ক ওমানিরা বলছেন, রাজধানী মাস্কাটে তখন কোনো বিদ্যুৎ কিংবা পয়োঃনিষ্কাষণ ছিল না। শহরের মধ্যযুগীয় ফটকগুলো সন্ধ্যার পরপরেই বন্ধ করে দেয়া হত। পড়াশোনার জন্য ব্রিটেনে পাঠানো হয় তরুণ কাবুসকে। স্যান্ডহাস্ট রয়েল সামরিক অ্যাকাডেমি থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি।

পরে ব্রিটিশ পদাতিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে জার্মানিতে চলে যান। তার বাবা সুলতান সাঈদ বিন তাইমুরের কড়া নজরদারি থেকে বাঁচতে অনুক‚ল সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন কাবুস।
প্রাসাদ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালের ২৩ জুলাই বাবাকে সিংহাসনচ্যুত করেন তিনি। এরপর দেশের এক নতুন যুগের প্রতিশ্রæতি দেন। হরমুজ প্রণালীর তীরে ও দুই চিরবৈরী ইরান-সউদী আরবের মাঝে কৌশলগত অবস্থানে ওমান। কিন্তু দুই দেশের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল কাবুসের।
ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের কারণে সামরিক প্রধানসহ পশ্চিমা ও আরব ক‚টনীতিকদের আবশ্যক বিরতিতে পরিণত হয়েছিল মাস্কাট।

সুলতানের প্রথম বিদেশ সফর ছিল ইরানে। বিচ্ছিন্ন দোফার অঞ্চলে উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে পাওয়া মার্ক্সবাদী বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হন তিনি। এতে ইরানের শাহ শাসক ও ব্রিটিশরা তাকে সহায়তা করে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সত্তে¡ও সেই সম্পর্ক টিকে আছে। ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নেপথ্য যোগাযোগে ভ‚মিকা রেখেছে ওমান। এছাড়া সউদী আরব ছাড়াও আরব উপসাগরীয় বাকি ছয় দেশের সঙ্গে কাবুসের ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না, এই নীতিতে তিনি অটল ছিলেন।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সউদী নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে অংশ নেয়নি ওমান। এতে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ইয়েমেনে যুদ্ধরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বন্দিবিনিময়ে সহায়তা করতে পেরেছেন কাবুস।
ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে দেশটি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন কাবুস। এতে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। ২০১১ সালের আরব বসন্তেও তাকে খুবই কম বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ মন্ত্রীদের বরখাস্ত করেই সেই অবস্থা মোকাবেলায় সক্ষম হন তিনি। কিন্তু বিরোধীদের জন্য কোন জায়গা রাখেনি তার সরকার। স্বাধীন আজ্জাম পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তার সম্পাদককে কারাগারে পাঠান। সূত্র : এএফপি, ডন।

পীর সাহেব চরমোনাইর শোক
ওমানের শাসক সুলতান কাবুস বিন সাইদ আল সাইদ এর ইন্তেকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রায় চার দশক ধরে ওমানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন ছিলেন সুলতান কাবুস। তাঁর ইন্তেকালে বিশ্ববাসী একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ শাসককে হারালো। মহান রব্বুল আলামিন তাঁর সকল নেকআমলকে কবুল করে তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন, আমীন।

প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেছেন, দিন দিন অশান্তির আগুন জ্বলছে। ধর্ষণ সুদ ঘুষ মদ জুয়া ও ক্যাসিনো বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে আল্লাহভীরু নেতা নির্বাচিত করলে সমাজে অশান্তি থাকবে না।

গতকাল সন্ধায় রাজধানীর কদমতলী থানার মোহম্মদবাগ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম মাদরাসার বার্ষিক ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি এসময়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ও কাউন্সিলর প্রাথী হিসেবে মাসুম বিল্লাহকে জনতার সামনে পরিচয় করিয়ে দেন।



 

Show all comments
  • MD Nurullah ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
    আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ট একজন রাষ্ট্রপধান। ওমানের মানুষ তাকে নিজের পিতার চেয়ে বেশি ভালবাসে। আমরা প্রভাসীরা নিজের দেশের চেয়ে অনেক স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারি। আল্লাহ তাকে জন্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Amran ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫১ এএম says : 0
    না ফেরার দেশে চলে গেলেন ইতিহাস সৃষ্টি করা এক মহা রাষ্ট্র নায়ক,সোলতান কাবুজ(ওমানের সোলতান)!!!ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!!!লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা,ভালোবাসা এবং দোয়া। আল্লাহ সোলতান কাবুজকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নাছিন করেন,আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rezaul ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
    একজন সৎ,সাহসী, ধর্মভিরু,বিশ্ব নেতা যদি আপনি দেখতে চান তাহলে আপনি ওমানের শাসক সুলতান কাবুস বিন সাঈদের দিকে থাকান।কারো সাথে উনার কিংবা ওমানের দন্দ নাই।যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।ছোট বড় সকল দেশ ই সমান।যিনি ছিলেন সব সময় যুদ্ধের বিপরীত,আলোচনায় যার কাছে প্রাধান্য ছিল।সৌদি আরব,আরব আমিরাত,ইরান কিংবা কাতার প্রায় সব দেশের কাছেই তিনি ছিলেন নিরপেক্ষ।যার ভূমিকা এই অঞ্চলে অপরিসীম। এমন শাসক কিংবা বিশ্বনেতা বিশ্বে বিরল।বিশ্ব এক শান্তির দূতকে হারাল।ভালবাসা মন থেকে আসতে হয়।যার মৃত্যুর কথা শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশীদের অকৃত্তিম বন্ধু।যার কারণে আজ আট লাখ বাংলাদেশীর এই দেশে বসবাস, আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুক আমিন,,,
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rana ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
    ওমানের সুলতান এর মত শাসক পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ নেই ওনাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • ইবনে মাসউদ ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫২ এএম says : 0
    সত্যি এই রকম একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক যদি আমাদের দেশে থাকতো-তাহলে হাজারো মানুষ তাঁদের অধিকার ফিরে পেত।।। আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা উনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Anirban Saha ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ২:৫৩ এএম says : 0
    দীর্ঘ সুশাসনে ওমানকে উনি আরব দুনিয়ার অন্যতম শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পেরেছেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ