Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

হঠাৎ করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার নির্দেশে ইরানের শীর্ষস্থানীয় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি(৬২)কে হত্যা করেছে মার্কিন সেনারা। ট্রাম্প যখন এই হত্যার নির্দেশ দেন, তিনি তখন তাঁর প্রমোদখানা মার-আ-লাগোতে ছুটিতে ছিলেন। এই নারকীয় ঘটনাটি ঘটেছে ইরাকের বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সন্নিকটে গত ৩ জানুয়ারি প্রত্যুষে। সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের বিপ্লবী এলিট ফোর্স কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল সোলাইমানি ও ইরান সমর্থিত পপুলরার মবিলাইজেশন ফোর্সেসের উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিরব ঘাতক’ ড্রোন এমকিউ-৯ রিপার দুটি গাড়ি বহরকে টার্গেট করে হামলা চালায়। পরের দিনও ইরাকের হাশাদ আশ-শাবি বাহিনীর কমান্ডারকে লক্ষ্য করে এক হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এ হামলায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। ইরাকে মার্কিন হামলা এটাই প্রথম নয়। এর আগে ইরাকের কাছে বিপুল মারণাস্ত্র আছে অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে ব্যাপক হামলা চালিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশটির আর্থিক অবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছিল ২০০২ সালে। সর্বোপরি দেশটিতে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছিল, তন্মধ্যে ৫,২০০ জন এখনো আছে। অথচ পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইরাকের কাছে কোনো মারণাস্ত্র ছিল না। এছাড়া, সা¤প্রতিক সময়ে ইরাকে আইএস-এর তৎপরতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই আইএস গঠনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হাত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। তাকে হত্যা করা উচিত ছিল আরও অনেক আগে।’ বিভিন্ন সূত্রে আরও প্রকাশ, ইরানের জাতীয় বীর হিসাবে অভিহিত জে: সোলাইমানির হত্যাকান্ডের পর আমেরিকা-ইরান মুখোমুখি অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ফলে ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। শেয়ারের পতন ঘটেছে। আমেরিকা অতিরিক্ত সাড়ে তিন হাজার সেনা মোতায়েন করছে মধ্যপ্রাচ্যে। লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিশোধের ডাক দিয়েছে। এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ প্রধান বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে সব প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে এসব খুনি অপরাধীর যথাযথ শাস্তি দেয়া। তাই গ্রিস সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। উপরন্তু লেবানন ও সিরীয় সীমান্তের অধিকৃত গোলান মালভূমিতে একটি স্কি রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। অন্যদিকে, ইরাক থেকে মার্কিন নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরাকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মার্কিন এই হামলা ইরাকের সার্বভৌমত্বের প্রতি অনেক বড় আঘাত। এটি ইরাকের ওপর হামলা চালানোর শামিল। ইরাক ও ইরানের লক্ষ-কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে প্রচন্ড বিক্ষোভ করেছে। গত ৪ জানুয়ারি জে: সোলাইমানির জানাজায় লক্ষাধিক লোক শরীক হয়। তাতে মার্কিন বিরোধী শ্লোগানে ইরাকের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে। বাগদাদে শোক মিছিলে অংশ নেওয়া মানুষ ইরাকি এবং মিলিশিয়া বাহিনীর পতাকা বহন করে শ্লোগান দেয়। তারা বলতে থাকে ‘আমেরিকার মৃত্যু চাই’। শহরের অনেকগুলো রাস্তা জুড়ে মিছিল চলে। তাদের অনেকের হাতে ছিল সোলাইমানি ও ইরানের ধর্মীয় নেতা খামেনির ছবি। জে. সোলাইমানির হত্যায় সমগ্র মুসলিম জাহান প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ভয়ংকর প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি। প্রেসিডেন্ট রূহানীও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিবকে টেলিফোনে বলেছেন, জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার যেকোনো পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী থাকতে হবে। ইরানের বিপ্লবী গার্ডস কমান্ডার জেনারেল গোলাম হামজাহ বলেছেন, ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবসহ ৩৫টি লক্ষ্যবস্তু আমাদের আওতায়। কাজেই সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে যেখানে আমেরিকানরা আমাদের আওতায় থাকবে, সেখানেই তাদের শাস্তি দেয়া হবে। ইরানের আকাশসীমায় যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। আইআরজিসর মুখপাত্র ব্রি. শরিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ক্ষণিকের এই আনন্দ-উল্লাস শোকে পরিণত হবে। ইরান প্রয়োজনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করতেও পিছপা হবে না। ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কাউন্সিল বলেছে, ‘সঠিক সময়ে এবং সঠিক জায়গায়’ এ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরেও যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে সৃষ্ট উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ বহন করার সামর্থ্য নেই বিশ্বের। তাই তিনি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ওই হামলার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এছাড়া, চীন, রাশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এই হামলার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তাই এটা বেআইনি ঘটনা। মার্কিন আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই হামলার ব্যাপারে যেমন মার্কিন কংগ্রেস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুমোদন নেননি, তেমনি ইরাক সরকারের কাছ থেকেও অনুমতি নেয়ার তোয়াক্কা করেন নি। এটি সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বিভিন্নভাবে অভিমত ব্যক্ত করছেন। যার অন্যতম হচ্ছে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনিত ইমপিচমেন্ট থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ডাইভার্ট করার লক্ষ্যেই অথবা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাজিমাৎ করার জন্যই জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এটা করে তিনি ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরেছেন। জে. সোলাইমানির হত্যার পর ইরানের হামলার আশংকায় যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে সতর্কাবস্থা জারী করা হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল দলের শীতকালীন অনুশীলন ক্যাম্প করতে কাতার যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। ট্রাম্প এক টুইটবার্তায় ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি মার্কিন সম্পদ ও নাগরিকদের ওপর আঘান হানে তবে আমরা ‘দ্রুত এবং মারাত্মকভাবে’ ইরানের ওপর হামলা চালাবো। এমন ৫২টি স্থাপনা লক্ষ্য করে রেখেছি আমরা।

এদিকে, নিজ দেশের নাগরিকদের ইরাক এবং ইরান ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরাকে সেনাদের প্রশিক্ষণে নিয়োজিত ন্যাটোর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ভারত তার বিমানকে ইরানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সব সেনাকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবী তুলেছে ইরাকিরা। অন্য এক খবরে প্রকাশ, জে. সোলাইমানিকে হত্যার পর বেশ উচ্ছ¡সিত পশ্চিমা ও তাদের মিত্রশক্তিগুলো। যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র বাহিনী দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টার্গেট করে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সোলাইমানির ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল পশ্চিমা বাহিনী, ইসরাইল ও আরব সংস্থাগুলো। এর আগেও গুপ্তহত্যা থেকে কয়েকবার বেঁচে যান কাসেমি। কিন্তু শুক্রবার বাগদাদ বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের নিখুঁত ড্রোন টার্গেটে প্রাণ হারাতে হয় তাকে। তার হত্যার বিষয়টি এখন টক অব দি ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল ঘানি কুদস ফোর্সের নতুন প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। জে. সোলাইমানির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। সোলাইমানির নেতৃত্বে কুদস ফোর্স যেভাবে ভূমিকা পালন করেছে, ইসমাইল ঘানির নেতৃত্বেও সেভাবেই চলবে কুদস ফোর্স। ইসমাইল ঘানি এর আগে সোলাইমানির সহকারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

সোলাইমানিকে ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করা হতো। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনির পর তাঁকেই সবচেয়ে ক্ষমতাধর ভাবা হতো। ‘পলিটিকো’ লিখেছে, ইরানের শীর্ষ সেনা কমান্ডারকে হত্যার মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করা হলো। একই সঙ্গে সৃষ্টি করা হলো মারাত্মক শত্রুতার একটি ক্ষেত্র, যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও মিত্রদের ওপর বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য ও এর আশপাশের অঞ্চল এখন হয়ে উঠতে পারে রণক্ষেত্র।

ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষিপ্ত মনোভাব আজ নতুন নয়। দেশটির ইসলামী বিপ্লবোত্তরকাল থেকেই এই বিপ্লব ধ্বংস করার জন্য লাগাতর তৎপরতা চালাচ্ছে। একই কর্ম করেছে ইসলাইলও। এমনকি দেশ দু’টি বহুবার আক্রমণও চালিয়েছে ইরানে। কিন্তু কোনবারই সফল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ওপর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে ৬ জাতির সাথে ইরানের চুক্তিও বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং শক্ত অবরোধ আরোপ করেছে। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি তেমন। ইরান প্রতিটি পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তার আর্থিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ঘটিয়ে চলেছে। চতুর্মুখী প্রচন্ড চাপ সত্তে¡ও ইরান যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছে মাথা নত করেনি। সোলাইমানির হত্যার ক্ষেত্রেও মাথা নত করবে বলে মনে হয় না। এখন ইরানের মিত্র দেশের সংখ্যা অনেক। গত মাসে চীন-রাশিয়া-ইরান যৌথভাবে ভারত মহাসাগর ও ওমান উপসাগরে বিশাল নৌমহড়া চালিয়েছে, যা রাশিয়ার ভাষায়- সামরিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। সর্বোপরি গত ডিসেম্বরে কুয়ালালামপুরে ইসলামি সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে ইরান, তুরস্ক ও কাতারের উদ্যোগে। এই তিন দেশ খুবই ঘনিষ্ট বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরান সফর করে সোলাইমানির হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সমবেদনা জানিয়েছেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সেনাবাহিনীর অপব্যবহার বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। না হলে নতুন করে আরো সমস্যা তৈরি হবে। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র। সোলাইমানি হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্ররোর সঙ্গে টেলিফোনালাপে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শনিবার ইরান ও ইরাকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পৃথকভাবে টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। ফোনালাপে মার্কিন হামলায় সোলাইমানিসহ অন্যদের নিহতের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন এরদোয়ান। সে সময় সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন এই তিন নেতা। বিশেষজ্ঞদের অভিমত: হেজবুল্লাহ, হামাস, হাশদ আস-সাবির মতো তেহরানপন্থী মিলিশিয়া বাহিনীগুলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার মিত্র দেশ ও উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের স্বার্থের ওপর হামলা চালাতে পারে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রবল আন্দোলন সৃষ্টি হতে পারে। বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের দুতাবাস ও সামরিক এলাকায় একের পর এক রকেট হামলা চালিয়েছে ইরানের এয়ারফোর্স। উল্লেখ করা যেতে পারে লেবানন থেকে গাজা, ইরাক থেকে সিরিয়া, ইয়েমেন থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত ইরানের প্রভাবলয় রয়েছে। সর্বোপরি সারা বিশ্বেই মুসলিম সেন্টিমেন্ট তো রয়েছেই। অধ্যাপক আলী রিয়াজ এক নিবন্ধে বলেছেন, সোলাইমানি হত্যা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বাড়বে।ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সাবেক প্রধান মোহসেন রেজাই বলেছেন, ইরানের হাত থেকে পালাতে পারবে না ইসরাইল। যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ইরান পবিত্র মসজিদে ‘লাল পতাকা’ উড়িয়ে দিয়েছে। এই পতাকা বা ‘লাল ঝান্ডা’ ওড়ানোর অর্থ ইরান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

সোলেইমানির হত্যাকে কেন্দ্র করে যদি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে সমগ্র এলাকায় জ্বালানি তেল উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাতে করে সমগ্র বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। উপরন্তু যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সমগ্র এলাকার উন্নয়ন কর্ম বন্ধ বা বিঘিœত হবে। ফলে কয়েক কোটির প্রবাসী শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে। যার মারাত্মক প্রভাব পড়বে সংশ্লিষ্ট পরিবার এবং দেশগুলোতে। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। আর যুদ্ধ যদি লেগেই যায়,তাহলে তা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যেই সীমিত থাকবে না, তা ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি সমগ্র বিশ্বেই।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন