পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শীত মৌসুমে পানির অভাবে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এতে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় এবং নৌ চলাচল থেকে শুরু করে কৃষি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে। এবারও এ আলামত দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। একদা দেশের অন্যতম বৃহৎ চলনবিল অঞ্চলে পর্যাপ্ত পানি থাকত, এখন এ বিল শুকিয়ে অনেকটা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এ বিলকে সজীব রাখার ক্ষেত্রে শিরা-উপশিরার মতো যেসব নদ-নদী ও খাল ভূমিকা রাখত, সেগুলোও শুকিয়ে মৃত অবস্থায় পতিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব নদ-নদী খনন না করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চলনবিল মরাবিলে পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সেচকাজ বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি দেশি মাছও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বিল অঞ্চল টইটুম্বুর থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি নেমে যায়। তখন এখানে চাষীরা রবিশস্য থেকে শুরু করে বোরো ধানের চাষ করে। তবে এখন পানিশূন্য হয়ে পড়ায় কৃষিকাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থাও অচল হয়ে পড়েছে। শুধু চলনবিল অঞ্চলই নয়, গোটা উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোও পানি সংকটের মধ্যে রয়েছে। পানি সংকটে তিস্তা নদী শুকিয়ে গেছে। সেখানে চর জেগে উঠছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীগুলোও পানি সংকটে পড়েছে। ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়া থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। দুঃখের বিষয়, এ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো মাথাব্যথা আছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না।
শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদীতে পানি কমবে, এটা জানা কথা। তবে তা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হবে, এমন হওয়ার কথা নয়। দেখা যাচ্ছে, প্রতি শুষ্ক মৌসুমে দেশের নদীগুলোতে পানির যে স্বাভাবিক অবস্থিতি থাকার কথা তা থাকছে না। এর কারণটিও অজানা নয়। ভারত অভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ, গ্রোয়েন নির্মাণসহ বিভিন্ন উপায়ে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের যতটুকু পানি পাওয়ার কথা তার ছিটেফোঁটাও দিচ্ছে না। ভারতের এই অমানবিক এবং স্বার্থপর আচরণের কারণে বছরের পর বছর ধরে দেশের প্রায় সব নদ-নদী পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। ভারত বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে বন্যায় ডুবিয়ে দিচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে শুকিয়ে মারছে। সে আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা যেমন করে না, তেমনি বন্ধুত্বের যে কথা বলে তার পরিচয়ও দেয় না। অথচ তার স্বার্থের সবকিছুই বাংলাদেশ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। তিস্তা চুক্তি নানা অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। করব-করছি বলেও করছে না। আমাদের সরকারও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলস্বরূপ দেশকে বছরের পর বছর ধরে ভারতের বিরূপ আচরণের শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও তাতে ভারত তার অসুবিধা হবে বলে আপত্তি জানালে তা স্থগিত হয়ে যায়। এই ব্যারেজটি নির্মিত হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৬টি জেলা পানি সংকট থেকে রেহাই পেত। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে অধিক ফসল ও মাছ উৎপাদন এবং যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসত। দেশের উত্তরাঞ্চল মরুকরণ হওয়া থেকে মুক্ত হতো। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভারত পানির ন্যায্য হিস্যা দেবে না, আবার আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাও করতে দেবে না। ভারতের এমন বৈরী আচরণের কারণে দেশের নদ-নদীগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এটা দিবালোকের মতো সত্য, ভারত আমাদেরকে পানি দেবে না কিংবা আমরা তা আদায় করতে সক্ষম হচ্ছি না। ফলে আমাদের বিকল্প চিন্তা করা ছাড়া গতি নেই। প্রথম কাজ হচ্ছে, দেশের নদ-নদীগুলোকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল করা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন নদ-নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ চালাচ্ছে। তবে এই ড্রেজিং কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ড্রেজিংয়ের কাজটি যথাযথভাবে হচ্ছে না। বেশুমার দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত অর্থের বড় একটি অংশ লোপাট হয়ে যাচ্ছে। এতে অর্থের অপচয় হলেও নদ-নদী তার নাব্য ফিরে পাচ্ছে না। পানি নিয়ে একদিকে ভারতের বিরূপ আচরণ, অন্যদিকে নদ-নদীর ড্রেজিং নিয়ে অনিয়মের কারণে দেশের নদ-নদী, খাল-বিলের অবস্থা করুণ হয়ে পড়ছে।
পানির প্রধানতম উৎস দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়। মিষ্টি পানির এসব উৎসই যদি মরে যায়, তাহলে যে ক্ষতি হবে তা পোষাণোর কোনো উপায়ই থাকবে না। মানুষের জীবন, জীবিকা, কর্মসংস্থান, জীববৈচিত্র, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের মুখে পড়বে। দেশের পানির উৎসে যে সংকট চলছে এ থেকে উত্তরণে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা, পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়া জরুরী। এমনিতেই জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ অতি বৃষ্টি, গরম, শীত, ঝড়-ঝঞ্ঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা ও উত্তরাঞ্চলে মরু প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব মোকাবেলায় সরকার কি ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জনগণকে জানানো প্রয়োজন। নদ-নদীর নাব্য বৃদ্ধি এবং পানি সংকট মোকাবেলায় সরকার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না তাও জানাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।