Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুলতান কাবুসের রহস্যময় খাম!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৩১ পিএম

আরব বিশ্বের দীর্ঘদিনের শাসক ছিলেন ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ। রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে ১৯৭০ সালে বাবা সাঈদ বিন তৈমুরকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় বসেন। দেশটির আল সাঈদ রাজবংশের ১৪তম প্রজন্ম তিনি। তবে তার মৃত্যু ও একটি গোপন খাম ঘিরে দেশটির পরবর্তী সুলতান কে হবেন তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।

সুলতান কাবুস বিন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। আজ শনিবার সকালে তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই শাসক মৃত্যুর আগে ক্যানসারসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২৯ বছর বয়সে ক্ষমতায় আসা কাবুসের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত হওয়ায় সন্তান কিংবা ভাই না থাকায় ২০১১ সালে নিজের উত্তরাধিকার ঘোষণার জন্য দেশের উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। যদিও কাকে নিজের উত্তরাধিকার মনোনীত করেছেন তা কখনো প্রকাশ করেননি। তাই সুলতানের উত্তরসূরী নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
১৯৭০ সালে ওমানের শাসন ক্ষমতা দখলের পর দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি শাসন করেছেন তিনি। তাই তার মৃত্যুতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে ওমানে। তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আগামী তিনদিন তার মরদেহ রাজ দরবারে রাখা হবে। এছাড়া ৪০ দিন অর্ধনমিত রাখা হবে দেশটির জাতীয় পতাকা।
জার্মানি ও বেলজিয়ামে চিকিৎসা শেষে সম্প্রতি রাজধানী মাসকাটে ফেরার পরই তার মৃত্যু হলো। কয়েক বছর ধরে তিনি রাজকার্যে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তার লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় দেশটির ৪৫ লাখ জনগোষ্ঠীর মনে নতুন সুলতান নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সুলতান নির্বাচনের প্রাথমিক দায়িত্ব পড়বে প্রায় ৫০ সদস্যের রাজপরিবার পরিষদের ওপর। ওমানের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিন দিনের মধ্যে পরবর্তী সুলতানকে বেছে নেবেন তারা। ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে বা মতবিরোধ দেখা দিলে বিকল্প পথে এগোতে হবে তাদের। শেষ ভরসা হিসেবে রয়েছে সুলতানের রেকর্ড করা সিলমোহরকৃত একটি গোপন খাম।

প্রতিরক্ষা পরিষদের সদস্যরা, সুপ্রিম কোর্ট ও পরামর্শ পরিষদের চেয়ারম্যানরা সুলতানের রেখে যাওয়া গোপন খামটি খুলবেন। রাজপ্রাসাদে সুরক্ষিত ওই খামে সুলতান নিজের পছন্দের উত্তরসূরির নাম বলে গেছেন। সে মতে, সুলতানের মুকুট যাবে গোপন খামে থাকা ব্যক্তির মাথায়।

তবে সুলতান কাবুসের তিন চাচাতো ভাই সুলতান হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। তারা হলেন ওমানের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদ, উপ-প্রধানমন্ত্রী তারিক আল সাঈদ ও সাবেক নৌকমান্ডার সিহাব বিন তারিক আল সাঈদ। সুলতান কাবুসের উপদেষ্টা হিসেবে কাজও করেন সিহাব বিন তারিক আল সাঈদ।
ওমানের সুলতান একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার এবং প্রতিরক্ষা, অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দেশটিতে বসবাসকারীদের ৪৩ শতাংশই অভিবাসী। দাসপ্রথা বিলুপ্তসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও ইরানের মধ্যস্থতায়ও সক্রিয় এক শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হতো সুলতান কাবুসকে।

১৯৪০ সালের ১৮ নভেম্বর সালালাহর জুফারে জন্মগ্রহণ করেন কাবুস। তিনি ছিলেন সুলতান সাঈদ বিন তৈমুর ও শাইখা মাজনুন আল-মাশানির একমাত্র পুত্র। তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সালালাহ ও ভারতের পুনেতে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মার ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য যান।

লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ২০ বছর বয়সে রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে যোগ দেন। স্যান্ডহার্স্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাকে ১ম ব্যাটেলিয়ন ক্যামেরনিয়ান্সে (স্কটিশ রাইফেলে) নিয়োগ দেয়া হয়। একবছর দায়িত্বপালন করেন জার্মানিতে। সামরিক দায়িত্ব শেষে সালালাহতে ফিরে আসার পর ইসলাম এবং দেশের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন।

দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থাটি সুলতান কাবুসের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ওমান সালতানাতের রাজ দরবার থেকে জানানো যাচ্ছে যে, সুলতান কাবুস বিন সাইদ আর নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় আল্লাহ তাকে নিজের কাছে তুলে নিয়ে গেছেন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ