মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সোলাইমানি হত্যার জবাব দিতে গত বুধবার ইরাকে মার্কিন সামরিক জোটের দু’টি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। জবাবে পাল্টা কোন সামরিক পদক্ষেপ না নিয়ে বৃহস্পতিবার ইরানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। চলমান উত্তেজনার মধ্যে গতকাল দুই দেশই যুদ্ধের বদলে শান্তির বার্তা দিয়ে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছে।
মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পরে ইরান জাতিসংঘের সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের আওতায় তাদের কাজ যুক্তিযুক্ত বলে জানিয়েছে। ইরানের দূত মাজিদ তখ্ত রাভাঞ্চি চিঠিতে জানান, ‘ইরান যুদ্ধ চায় না। আত্মরক্ষার অধিকার আমাদেরও রয়েছে। আমেরিকাকে বার্তা দিতে তাদের ইরাকের ঘাঁটিতে বুঝে-শুনেই হামলা করা হয়েছে।’ জাতিসংঘের ক‚টনীতিকেরা জানান, ইরানের চিঠির পর গতকাল আমেরিকাও চিঠি দিয়েছে। আত্মরক্ষার জন্যই ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে মারতে হয়েছে বলে গতকাল জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন মার্কিন দূত কেলি ক্রাফ্ট। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা যেন নষ্ট না হয় এবং পরিস্থিতি জটিলতর করে তুলতে ইরান যেন আর কোনও পদক্ষেপ না নেয়। পূর্বনির্ধারিত শর্ত ছাড়া ইরানের সঙ্গে আপস-মীমাংসার পথে যেতে আমেরিকা প্রস্তুত।’ বস্তুত গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্পও জানিয়েছিলেন, কেউ শান্তি চাইলে তিনি সেই প্রস্তাবে রাজি।
জাতিসংঘের সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আত্মরক্ষার্থে কোনও দেশ পদক্ষেপ নিলে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে তা দ্রæত জানাতে হয়। এর আগে ২০১৪ সালে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময়ে জাতিসংঘের সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের আশ্রয় নিয়েছিল আমেরিকা।
তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেন যে ‘সবকিছু ঠিক আছে’। হামলার পরদিন দেয়া এক বক্তব্যে তিনি কেন এটাকে ঠিকঠাক বলেছেন তা ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। ট্রাম্পের ১০ মিনিটের বক্তৃতা ইঙ্গিত দেয়, চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি শিথিল হয়ে আসতে পারে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের প্রতিক্রিয়াকে কীভাবে দেখবেন? তিনি কি একে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার অজুহাত হিসাবে দেখবেন বা নাকি সেটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজবেন। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প পরের রাস্তাটিই বেছে নেন। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, ইরানের হামলায় তেমন হতাহত হয়নি এবং ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে অনেক কম। তিনি ‘শাস্তিস্বরূপ ইরানের বিরুদ্ধে আরও বেশি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রæতি দেন’।
ট্রাম্প পাল্টা হামলা না চালানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে ইরানীদের সামনে এমন দাবি করার সুযোগ এসেছে যে, ট্রাম্পই তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। তবে এটি যে ট্রাম্পের একটি বিজয় বক্তৃতা ছিল সেবিষয়ে কোন ভুল নেই - এই অঞ্চলে আমেরিকান আধিপত্য যে খুব ভালোভাবেই আছে সেটিই তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইরান সরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্য একটি ভাল ব্যাপার এবং বিশ্বের জন্যও খুব ভাল একটি বিষয়।’
এদিকে, কোনো হতাহতের উদ্দেশ্যে ইরাকি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান হামলা চালায়নি বলে দাবি করেছেন বিপ্লবী গার্ডসের এরোস্পেস ফোর্সের প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ। ইরানি এ সিনিয়র কমান্ডার বলেন, ‘মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আমেরিকার সৈন্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, তবে ওয়াশিংটনের সামরিক সরঞ্জামাদি ধ্বংসের জন্য পুরো অঞ্চলজুড়ে এ সিরিজ হামলা চালানো হয়। এ হামলার মাধ্যমে মার্কিন বাহিনী দ্বারা ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার যথাযথ প্রতিশোধ নেয়া হলো।’
মার্কিন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, তারা বিশ্বাস করে ইরান ইচ্ছে করেই ক্ষতির মাত্রা সীমিত রাখতে চেয়েছে। ইরান একদিকে তাদের সংকল্প দেখাতে চেয়েছে এবং অন্যদিকে আমেরিকার ক্ষতি করা এড়িয়ে গেছে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়। পেন্টাগন-এর এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সিএনএন সাংবাদিক জ্যাক টেপার বলেন, ‘ইরান ইচ্ছে করেই টার্গেট নির্ধারণ করেছে যাতে প্রাণহানি না হয়।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশই যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তির পথে চলার চেষ্টা করছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনো সামরিক ব্যবস্থার পরিণতিতে অপেক্ষাকৃত অনেক দুর্বল ইরান দীর্ঘমেয়াদি একটি লড়াইয়ের চক্রে পড়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে ফেলেছে আমেরিকা। কোনো যুদ্ধ ইরানকে আরো একঘরে করে ফেলবে। যদিও ইরান তাদের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন জেনারেলকে হারিয়েছে, তারপরও তার মৃত্যু থেকে স্বল্প মেয়াদে তারা লাভবান হতে পারে। নভেম্বরে ইরানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সরকার কঠোরভাবে দমন করেছে, সোলাইমানির জানাজায় নজিরবিহীন জনসমাগমে সেই ক্ষোভ চাপা পড়ে গেছে। হত্যাকান্ডের বদলা নিতে ইরান বুধবার ইরাকে দুটো মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। কিন্তু এখন যদি তারা সংযত থাকে এবং মানুষের সহানুভ‚তি আদায় এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পথে থাকে, তাহলে ইরান এই সঙ্কট থেকে লাভবান হতে পারে।
এদিকে, সোলাইমানিকে হত্যা করে ইরানের সামরিক দম্ভকে অনেকটাই আঘাত করেত সমর্থ হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনাও হয়তো অনেকটাই বাড়িয়েছেন তিনি। একইসাথে, মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্রদের, বিশেষ করে সউদী আরব এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের প্রমাণও তিনি দিয়েছেন। তবে ইরানের সাথে হিংসা-প্রতিহিংসার দীর্ঘমেয়াদি কোনো চক্রে পড়ে গেলে তা ট্রাম্পের জন্য সঙ্কট তৈরি করতে পারে। কারণ তাতে করে তেলের দাম বাড়বে, মার্কিন নাগরিকের প্রাণহানি হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে হয়তো ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী এক যুদ্ধের সূচনা হবে। শুধু আমেরিকা নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দেশের ওপরই তার গুরুতর প্রভাব পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের বিরুদ্ধে যাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ইচ্ছামতো যুদ্ধ শুরু করতে না পারেন সেজন্য মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা খর্ব করার কথা বলা হয়েছে। উচ্চকক্ষে এই প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকলেও এর মধ্যদিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে প্রচন্ড রকমের মতভেদ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধের উন্মাদনা ছড়ালেও আমেরিকার বেশিরভাগ আইনপ্রণেতা তার কর্মকান্ডের বিরোধী। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, ফক্স নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।