Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগ নেতার অফিসে বর্বর নির্যাতন, ভিডিও ভাইরালে তোলপাড়

আবদুল মোমিন | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৫৩ পিএম

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুই যুবককে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ছবি ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষোভ নিন্দা আর প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা।

গত ১ জানুয়ারি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য ও কুতুবপুর ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত যুবকদের পুলিশে দেয় আলাউদ্দিন হাওলাদার। একইদিন উল্টো সাজানো ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ যুবকদের ছাগল চুরির মামলায় আদালতে প্রেরণ করেন।

দুই মিনিট সাত সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, বিশ থেকে বাইশ বছর বয়সী দুই যুবককে একটি বিলাসবহুল কক্ষে মাটিতে ফেলে কয়েকজন যুবক পালাক্রমে পেটাচ্ছে। এরপর তাদের দুই পা জাপটে ধরে উপরে তুলে শুন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাদের মাথা নিচে থাকে। এ অবস্থায় তাদের পায়ে, পিঠে ও কোমরে বর্বরের মতো এল্পপাতাড়ি পেটানো হয়। ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদার তার চেয়ারে বসে নির্যাতনের বিষয়টি উপভোগ করছেন এবং আরো জোরে পিটানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। দুই যুবকের কান্নাকাটি আর আর্তচিৎকারে কারো মনে একটু মায়া দয়া হয়নি। কেউ প্রতিবাদ করে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। নৃশংস এ ঘটনা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে দেখছেন সবাই।

প্রতিবাদ জানিয়ে ফেইসবুকে সালাম আমির লিখেছেন, ‘‘দেশে কি আইন বলতে কিছু নাই। যে অপরাধ এর জন্যই তাদেরকে এই ভাবে মারা হইছে এইটা একটা জঘন্য অপরাধ বলে আমি মনে করি। এবং যারাই এই কাজ করছে তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি এবং এদের সঠিক বিচার করে সাজা দেওয়ারও জোর দাবি করছি।’’

নাজিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘এই কুলাঙ্গার মেম্বার এবং তার ছেলে দুই জনের বিচার চাই। এই দেশে আইন আছে, কেনো তারা নিজেরা বিচার করবে। তারা কেন পুলিশের হাতে দিলো না?’’

ইউনুস ফারুক লিখেছেন, ‘‘মেম্বার এবং মারধরকারীকে আইনের আওতায় আনা হউক। এইসব জানোয়ারদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেওয়া হউক।’’

ভিডিওটির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের শেষ দিন তথা থার্টিফার্স্ট নাইটে নাইম ও রাতুল নামে স্থানীয় দুই যুবককে ধরে এনে চোর আখ্যা দিয়ে ইউপি মেম্বার আলাউদ্দিন হাওলাদারের অফিসে গরু পেটানোর মতো পেটানো হয়। পরবর্তীতে একটি ছাগল দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশে তাদের সোপর্দ করা হয়েছিলো।

নির্যাতনের শিকার নাঈমের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার পোলায় প্রিন্টিং কারখানায় কাম করে। ৩১ ডিসেম্বর রাতুলের লগে পোলারেও ধইরা লইয়া যায়। মারতে মারতে লইয়া গেছে। পরে আবার আলাউদ্দিন হাওলাদার তার অফিসে লইয়া গিয়া ইচ্ছামত মারছে। কুত্তারেও মাইনষে অমনে পিডায় না।

নাইমের মায়ের ভাষ্য, আমার পোলায় অন্যায় করলে আমাগো জানাইতো, পুলিশরে দিতো, হেয় অমন কইরা মারলো ক্যান। আমি এর বিচার চাই।

এদিকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেন, নাইম ও রাতুল ছাগল চুরি করেছিলো। সিসি টিভির ফুটেজে চুরির ঘটনা ধরা পড়েছিলো। পরে ছাগলের মালিক থানায় অভিযোগ করলে একজন দারোগা আসেন এবং আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য। পরে রাতুল নামের একজনকে আমার কাছে ধরে আনার পর সে চুরির কথা স্বীকার করছিলো না। পরে তাকে কয়েকটি পিটুনি দিলে সে স্বীকার করে এবং নাঈম সাথে ছিলো জানায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সোশ্যাল মিডিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ