Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণকারী গ্রেফতার

দুই দাঁত ভাঙা মজনু সিরিয়াল রেপিস্ট : র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল ভোরে রাজধানীর শেওড়া রেল গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর নির্যাতিতা ওই ছাত্রীকে ছবি দেখানো হয়েছে ধর্ষকের। এ সময় ওই ছাত্রী ধর্ষণকারীকে চিনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছে র‌্যাব কর্মকর্তারা। এছাড়া গ্রেফতার হওয়া মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট বলেও জানিয়েছেন তারা।

গতকাল দুপুরে কাওরান বাজারস্থ র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেম জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। পরে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে রাজধানীর ক্যান্টরমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব ছায়া তদন্তে নামে। এছাড়া ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করতে র‌্যাবের সকল ইউনিট মাঠে নামে। এ ধারাবাহিকতায় গত ৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুরাতলী এলাকা থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের মোবাইলটি খায়রুল ইসলাম (৩৮) নামের এক রিকশা চালকের কাছে পাওয়া যায়। তারপর ওই রিকশা চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব।

খায়রুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহ জানিয়ে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, অরুণা বিশ্বাস (৪৫) নামের একজনের কাছ থেকে খায়রুল মোবাইল ফোনটি পেয়েছে। অরুণা তাকে মোবাইলটি মেরামতের জন্য দিয়েছিল। পরে অরুনা বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় অরুণা বিশ্বাস জানায়, মোবাইলটি সে ডিসপ্লে ভাঙ্গা অবস্থায় মজনু নামের এক জনের কাছ থেকে ক্রয় করেছে। পরে ভিকটিমের দেওয়া তথ্য ও অরুণার কথা মত র‌্যাব মজনুকে গ্রেফতার করে। সারোয়ার বিন কাশেম জানান, মজনু নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা গ্রামের মৃত মাহফুজুর রহমানের ছেলে। সে পেশায় দিনমজুর এবং ১০ বছর আগে সে বিয়েও করেছিল। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী মারা যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে ঢাকায় চলে আসে মজনু। ঢাকা এসে বনানী, ক্যান্টরমেন্ট এলাকায় বসবাস করত সে। সর্বশেষ সে শেওড়া এলাকায় রেলের পাশে বসবাস করত। শুধু তাই নয়, সেখানে থেকে সে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ পরিচালনা করে আসছিল।
সারোয়ার বিন কাশেম জানান, মজনু পেশায় দিনমজুর হলেও মাদকাসক্ত ছিল। তাই প্রায় সময় চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী নারী ভিক্ষুক ও পাগল নারীদের সে ধর্ষণ করেছে। এ ধারাবাহিকতায় গত ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলা এলাকায় ওঁৎ পেতে ছিল। এক পর্যায়ে ঢাবি ছাত্রীকে পেয়ে তাকে জোরপূর্বক রাস্তার পাশের ঝোপে নিয়ে যায় এবং তাকে ধর্ষণ করে। এসময় তাকে একাধিকবার হত্যা করার চেষ্টা করছিল বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, ঢাবি ছাত্রীকে যে জায়গায় ধর্ষণ করেছে; সেই জায়গায় মজনু আগে একাধিক নারী ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করেছে।
ঢাবি ছাত্রী যেদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সারোয়ার বলেন, সেদিন মজনু অসুস্থতার কারণে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে দেখেন ও তাকে ধর্ষণ করার জন্য টার্গেট করেন। ধর্ষণের পর সে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন, নরসিংদী রেলস্টেশন এবং বনানী রেল স্টেশনে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখান থেকে গত মঙ্গলবার রাতে শেওড়াতে মোবাইল বিক্রি করে আসে। এ খবর পেয়ে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার করার পর তার ছবি নিয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর কাছে র‌্যাব গিয়েছে। এ সময় নির্যাতিতা ওই মেয়ে তার ছবি দেখে সনাক্ত করে। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, আমরা মেয়েকে অনেকবার অভিযুক্ত মজনুর ছবি দেখিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেছি। মেয়েটি বলেছে, এই সে ধর্ষক। আমি পৃথিবীর সব চেহারা ভুলে গেলেও কখনো এই চেহারা ভুলবো না। এছাড়াও সে নিশ্চিত করার আগে ও পরে অভিযুক্তকেও জিজ্ঞেস করেছি। সেও স্বীকার করেছে যে, সে একাই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

মজনু নিয়মিত মাদক সেবন করে জানিয়ে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, এ কারণে সেদিন ওই মেয়েকে দেখে তার মধ্যে পৈশাচিক শক্তি চলে আসে। তাই মেয়েটি প্রতিরোধ করতে পারেনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, যেহেতু মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে; তাই তাকে আমরা তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে তারা আইনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিকটিম অজ্ঞান হলেও কোনো ক্লোরোফরম বা চেতনানাশক কিছু ব্যবহার করেননি বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তার কাছে কোনো ধরনের অস্ত্র পাইনি। এছাড়াও আরেক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, মজনু ১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেছিল। এটিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারণ নির্যাতিতা ছাত্রীর বর্ণনা অনুয়ায়ি ধর্ষনকরাীর সামনের দাঁত ভাঙা থাকার কথা। সেই অনুয়ায়ী মজনুর সামনের দাঁতও ভাঙা। তাই তাকে শনাক্ত করতে সহজ হয়েছে।



 

Show all comments
  • Delwar Hossain ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    It seems he cannot stand properly. The question is, how did he manage to do all this works together? We demand to find out the real culprit and punish him ASAP.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Afsar Siddiqe ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    যে মজনু কে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে দেখে মনে হলো ধর্ষন তো দুরে থাক সে নিজের জীবন বাঁচাতেও হিমশিম খাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Raihan Uddin Ali ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    যখনই কোন ধর্ষণের নিউজ পত্রিকায় আসে, তখনই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী তনুর কথা মনে হয়। সারা বাংলাদেশ, তখন কেঁপে উঠেছিল। এই রাষ্ট্র বিচার করেনি।
    Total Reply(0) Reply
  • Khaled Hasin ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    ভিকটিমের পূর্বের বিবরনীর সাথে এই হিরোয়িন্চি মিলে না যার কারণে সন্দেহ। এটা মনে হচ্ছে ডিজিটাল জজ মিয়া!
    Total Reply(0) Reply
  • Rais Uddin ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    মেয়েটি সাহসী। সে ধর্ষকের ছবি দেখে শনাক্ত করেছে, এছাড়া ডিএনএ টেস্টের সুযোগ আছে। জজ মিয়া নাটকের সম্ভাবনা নেই। সেই প্রেক্ষাপট নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Sharifuzzaman ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    মজনু কে-তো দেখছি নিজেরে নিয়েই টানাটানি, ও আবার এতো জঘন্য কাজ একা করলো কি করে, সে শক্তি কি ওর..........?
    Total Reply(0) Reply
  • Moksadul Islam Hanif ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    তার বডি ফিটনেস দেখে মনে হচ্ছে না তার দ্বারা এ কাজ সম্ভব,,,, কোথাও একটা গাপ্লা আছে মামা
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহিম আল হাসান ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এত একটা পাতলা চিকন মানুষ একটা মেয়েকে কি করে কোলে তোলে নিয়ে যায়। মেয়েটা যদি কষাই দুই তিন টা থাপ্পড় দিয়ে দিতো তাহলেই তো মাছির মত বৌ বৌ করে ঘুরে পড়ে যেত। আমার মাথা আসে না মেয়েটার গায়ে কি শক্তি ছিলো না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ