Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রীর বিবরণে স্কেচ এঁকে অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা

মামলা ডিবিতে : ফুটেজ সংগ্রহ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

কুর্মিটোলায় আর্মি গলফ ক্লাব সংগ্ন রাস্তার ফুটপাথে ধর্ষণের শিকার ঢাবির ছাত্রীর মুখে বিবরণ শুনে অপরাধী সনাক্তের কাজ করছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের কাছে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেগুলোতে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে ছাত্রীর বর্ণনা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। এদিকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়েরকৃত মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ডিবির উত্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা ও ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। তারা ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারেও (ওসিসি) ছাত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছেন।

এছাড়া গতকালও পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তারা ঘটনাস্থলের ম্যাপ এঁকেছেন। তাতে তরুণী কোন দিক থেকে এসেছেন, তার সামনে পেছনে কারা ছিল, সম্ভাব্য কোন স্থান থেকে মুখ চেপে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে ধারণা নেয়ার চেষ্টা চলছে।

মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণে যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এখন পুলিশের অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়টি এক নম্বরে। এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক’ হিসেবে বর্ণনা করে জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, পুলিশের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ‘আন্তরিকভাবে’ চেষ্টা করছে, অপরাধী গ্রেপ্তার হবে বলে তিনি আশাবাদী।

গুলশানের ডিসি সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেটা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঘটনাটি একটি ব্যস্ত সড়কের পাশে। সেখানে বহু মানুষের যাতায়াত। এখনো আমরা সুনিদিষ্ট করতে পারিনি। সেখান থেকে প্রকৃৃত ঘাতক সনাক্ত করার চেষ্টা করছি আমরা। প্রযুক্তিগত তদন্তের পাশাপাশি বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করে তদন্ত করা হচ্ছে। মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা থেকে ডিবি উত্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডিবির তদন্তে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা সার্বিক বিষয় পর‌্যালোচনা করে মামলার তদন্ত কাজ এগিয়ে নিবেন।

ডিবির অরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহজাহান জানান, যেসব ফুটেজ পাওয়া গেছে সেগুলো আসলে ঝাপসা এবং অন্ধকারের মধ্যে। এসব ফুটেজ থেকে প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত করা খুবই দূরহ। তারপরও বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফুটেজগুলো পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা চলছে। তদন্তে অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন উল্লেখ করার মতো কোন অগ্রগতি হয়নি।

ডিবি উত্তরের নাম প্রকাশে অনিñুক একজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল পুলিশের একটি দল ভিক্টমের (ঢাবি ছাত্রী) সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই তরুণী অপরাধীর একটি বিবরণ পুলিশকে বলেছে। সেখান থেকে আসামীর একটি স্কেচ আঁকার চেষ্টা চলছে। স্কেচের সঙ্গে ফুটেজে থাকা ছবিগুলো মিলিয়ে অপরাধীকে সনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক শাখার নাম প্রকাশে একজন কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি হাত ও পায়ের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়োমেট্রিক করে এনআইডিতে রক্ষিত আঙ্গুগুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এর মাধ্যমে অপরাধী সনাক্তের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবে পুলিশ।

মেয়েটি এখনও ডিপ্রেসিভ মুডে-ঢামেকের পরিচালক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ধর্ষিত মেয়েটি এখনও ডিপ্রেসিভ মুডে আছে। যদিও তার ফিজিক্যাল কন্ডিশন স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে সাইকিয়াট্রিস্ট আমাকে জানিয়েছেন তাকে নিরিবিলি পরিবেশে রাখা জরুরি।

তিনি বলেন, মানবাধিকার চেয়ারম্যানসহ তাকে দেখে এসেছি। সে নিজে থেকে অনেক কথা বলেছে। তাকে সোমবারের চেয়ে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। ঘাড়ে ও গলায় যেসব আঁচড় ছিল সেগুলো সেরে উঠছে। মেডিকেল বোর্ড সদস্যরা মেয়েটির ফিজিক্যাল কন্ডিশন আগের চেয়ে বেটার বলে জানিয়েছন। তার শরীরের জখমগুলো সেরে উঠছে। কাল (বুধবার) আবার মেডিকেল বোর্ড আপডেট রিপোর্ট দেবে। চিকিৎসকরা যদি ভাল রিপোর্ট দেন ও ভিকটিম যদি বাড়ি যেতে চায় তাহলে তাকে ছেড়ে দিব। এ মূহুর্তে তার স্বাভাবিক পরিবেশ দরকার। বাবা-মা স্বজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক সময় কাটানো দরকার।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, তিনি ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তরুণীতে অপরাধীকে দেখলে চিনতে পারবেন। তার কথার ভিত্তিতে অপরাধীর একটা স্কেচ করা যেতে পারে। এতে আসামি দ্রæত শনাক্ত হবে। তিনি গতকাল দুপুরে ঢামেকের ওসিসিতে ওই ছাত্রীকে দেখতে যান। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ২৮ জানুয়ারি
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মামলার এজাহার গ্রহণ করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা মামলার এজাহারটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। ওই ছাত্রীর বাবা রোববার রাতেই ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি অভিযোগ দেন। সোমবার সেটি এজহার হিসেবে গ্রহণ করে আদালত। এছাড়া ঢাবি কর্তৃৃপক্ষ আরো একটি অভিযোগ শাহবাগ থানায় দিয়েছে। দুটি অভিযোগই তদন্ত করবে ডিবি পুলিশ।

উল্লেখ্য, ঢাবির একটি হলের আবাসিক ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ওই ছাত্রী রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শেওড়া এলাকায় বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ওঠেন। তিনি ‘ভুলবশত’ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে নেমে পড়েন। সেখান থেকে হেঁটে বান্ধবীর বাসার দিকে যাওয়ার সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মুখ চেপে ধরলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে পাশের ঝোপের মধ্যে নিয়ে দুদফা ধর্ষণ ও ব্যাপক মারধর করা হয়। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি বান্ধবীর বাসায় যান এবং তাকে ঘটনাটি জানান। খবর পেয়ে সহপাঠীরা তাকে ঢাবি ক্যাম্পাসে নিয়ে যায়। পরে রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। পরদিন সোমবার আর্মি গলফ ক্লাবের পাশে ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রীর ব্যবহৃত ব্যাগ, ঘড়ি, বই খাতা, ইনহেলার ও জিন্সপ্যান্টসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ