পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তৃতায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হওয়ায় পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জনের তাগিদ দেন। সেই সাথে চলতি মুজিব বর্ষে পুলিশ বাহিনীকে ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ প্রতিপাদ্য শ্লোগান স্মরণ করিয়ে দেন। তবে পুলিশ সপ্তাহের বক্তৃতায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে দুদকের গ্রেফতার ও আটকের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। যে কোনো সমাজে ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিশেষ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের যে বিভাজন রেখা রয়েছে তা মেনে চলা আবশ্যক। দেশে ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি, অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা কমিয়ে আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করবে। তারা অভিযোগের তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে মামলা করবে, গ্রেফতারের আবেদন জানাবে, আদালতের নির্দেশে পুলিশ তা বাস্তবায়ন করবে। গ্রেফতার ও নিজস্ব হাজতখানায় আটক রাখা দুদকের কাজ নয়। এ কাজটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সময়োপযোগী ও জন আকাঙ্খারই প্রতিফলন ঘটেছে। দুদকের কাজ দুদক করবে, আদালতের কাজ আদালত করবে এবং পুলিশ আইন অনুসারে তা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এটাই আইনের শাসনের প্রত্যাশা।
পুলিশ বাহিনী বা দুর্নীতি দমন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠানের সীমা লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড অত্যন্ত স্পর্শকাতর, জনসম্পৃক্ত এবং জননিরাপত্তা ও জনগণের আকাঙ্খার পরিপুরক। সাংবিধানিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সীমালঙ্ঘন হলে তা সমাজে বড় ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আমাদের দেশের চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় পুলিশ বাহিনী ও দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা প্রতিষ্ঠা করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সামাজিক-অর্থনৈতিক সংস্কার ছাড়া আইনের শাসন তথা সুশাসন ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তার কাঙ্খিত মান অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রশ্নবিদ্ধ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা-অস্বচ্ছতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের ব্যাপক বিস্তার সত্তে¡ও দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধ করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পসমুহের বাস্তবায়ন এগিয়ে চলেছে। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া পুলিশ বাহিনীর কর্মকান্ডেও লেগেছে। ট্রিপল নাইনে পুলিশি সেবা এবং পুলিশের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই সদিচ্ছা ব্যক্ত হয়েছে।
আমাদের প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। হঠাৎ করেই এই পরিস্থিতি তৈরী হয়নি। রাজনৈতিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও জবাবদিহিতার লঙ্ঘন থেকে দীঘদিনে এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। দেশে ব্যাংকিং সেক্টর, শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন আর্থিক ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট ও পাচার হয়েছে। এসব বিষয়ে অভিযুক্তদের ধরে বিচারের আওতায় এনে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, লুণ্ঠিত অর্থ ফিরিয়ে আনার পাশাাপাশি বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা পরস্পরের পরিপুরক। জনকল্যান ও জনস্বার্থে নিয়োজিত। জনগণের নিরাপত্তা ও আকাঙ্খার বাস্তবায়নই হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মূল লক্ষ্য। দুর্নীতি দমন কমিশনের মত সংস্থা যদি রাষ্ট্রীয় আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ও সীমাবদ্ধতার কথা ভুলে গিয়ে নিজেই একই সাথে তদন্তকারী সংস্থা, পুলিশ বাহিনী ও বিচারকের ভ‚মিকা গ্রহণ করে অনেকটা সমান্তরাল সরকারের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে অবশ্যই স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দল, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠান একেকটা আলাদা আলাদা এনটিটি। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে সমন্বয় ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্যেই রয়েছে আইনের শাসন ও জননিরাপত্তার গ্যারান্টি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।