পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পুরো ক্যাম্পাস। রোববার মধ্যরাত থেকেই দফায় দফায় আন্দোলন শুরু করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার ক্যাম্পাসে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সহযোগীতা করতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। ধর্ষণের সাথে যুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় এনে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বিচারের দাবিতে রাজু ভাষ্কর্যে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ৩ শিক্ষার্থী।
হাসপাতালে ভর্তি করানোর কিছু পরেই অপরাধীদের শাস্তি চেয়ে মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ। রাত সাড়ে ৩টায় ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে একদল শিক্ষার্থী। এসময় আখতার হোসেন বলেন, অতীতের বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধে অভিযুক্তদের লঘু শাস্তির ফলে বর্তমানে দেশে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সোমবার সকাল থেকেই আলাদাভাবে কর্মসূচি শুরু করে পালন করছে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
সোমবার দুপুরে শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। শিক্ষার্থীদের সাথে একত্মতা প্রকাশ করতে অসুস্থ অবস্থায় ক্যাম্পাসে আসেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। ধর্ষণকারীর দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ধরনের ‘আইওয়াশমূলক’ কথা না বলে ধর্ষকের দ্রুত বিচার নিশ্চিত না করলে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ছেড়ে দেবে না।
দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে রাজু ভাষ্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। কর্মসূচি থেকে অপরাধীদের খুঁজে বের করে চিহ্নিত করার জন্য প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমান, শামসুন নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফেডারেশনে ঢাবি শাখার সভাপতি আবু সালমান সিদ্দিক প্রমুখ।
ডাকসু ভিপি বলেন, বিচারহীনতার কারণে বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আজকে দেশে মানুষ ধর্ষণের শিকার হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আজকে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বসে থাকার সুযোগ নেই। আমি ছাত্র-জনতাকে সম্মিলিতভাবে এ ধরনের ঘটনা রুখে দিতে আহ্বান করছি। শুধুমাত্র বক্তব্য, সেমিনার ও নারীর অধিকার নিয়ে কথা বললেই হবে না।
ঘটনাস্থলে রাস্তা অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের স্লোগান:
অপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে কুর্মিটোলায় ঘটনাস্থলের সামনে মানববন্ধন করেছেন ঢাবির একদল শিক্ষার্থী। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কয়েকটি বাসে করে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন ও একপর্যায়ে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সেখানে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে তাদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। ধর্ষকের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে তারা কাঁপিয়ে তুলে পুরো এলাকা।
ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সরকারের প্রতি ঢাবি শিক্ষক সমিতির আহ্বান:
ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. নিজামুল হুক ভূঁইয়া গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানান। ঢাবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্য, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এবং কখনো কখনো সঠিক তদন্তে অভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সমাজে ধর্ষণ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে চলেছে। এধরণের ঘৃণ্য কাজের অবসানকল্পে সমাজের শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহŸান জানাই। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনতিবিলম্বে ধর্ষণের সাথে যুক্ত নরপিশাচদের গ্রেফতার দাবি করছি এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করব, তনুসহ অপরাপর ঘটনার মতো ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক অপরাধের ক্ষেত্রে বিচারের বাণী যেন আর নিভৃতে না কাঁদে-সেজন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যাবতীয় পদক্ষেপ নিবে ঢাবি প্রশাসন: ভিসি
ছাত্রীকে ন্যায়বিচার দিতে অভিভাবক হিসেবে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো.আখতারুজ্জামান। গতকাল হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা মর্মাহত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ছাত্রীটির পাশে আছি। ঢাবি তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। তাকে মানসিকভাবে শক্ত ও সমর্থ করে তোলাই আমাদের প্রধান কাজ। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা প্রয়োজন তাই করবে। তাকে মনে রাখতে হবে সে আমাদের মেয়ে, আশা রাখি তার মনোবল শক্ত থাকবে।
বিচারের দাবিতে সাদা দলের বিবৃতি
শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে ঢাবি বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। সন্ধ্যায় সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকায় আজকে প্রকাশ্যে ঢাবির ছাত্রীকে ধর্ষণ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে নরপিশাচরা। দেশে নারীর নিরাপত্তাহীনতা কোন পর্যায়ে আছে ঢাবি শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনা এর প্রমাণ। সাদা দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি ক্ষমতাসীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রধানত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমনেই ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের উদাসীনতার সুযোগে দুস্কৃতিকারীরা ধর্ষণের মতো নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। কুমিল্লায় তনু হত্যা, ফেনীতে নুসরাত হত্যাসহ অসংখ্য নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বর্তমানে সরকারের আমলে। কিন্তু এ সকল ঘটনাসমূহের সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হয়নি বলে দেশে নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেই চলছে। যার সর্বশেষ শিকার ঢাবির ছাত্রী। আমরা অবিলম্বে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
গত রোববার বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, রোববার বিকালে ক্লাস শেষে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে কুর্মিটোলায় নামেন ওই তরুণী। উদ্দেশ্য ছিল রাতে বান্ধবীর বাসায় থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই অজ্ঞাত পরিচয় কোনো লোক তার মুখ চেপে ধরে এবং পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তিনি চেতনা হারান। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফিরলে ওই শিক্ষার্থী একটি অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান এবং তাকে পুরো ঘটনা বলেন। এরপর সহপাঠীরা তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর একে এম গোলাম রব্বানীসহ কয়েকজন শিক্ষক রাতেই হাসপাতালে যান এবং ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।