Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মামলা হলেও গ্রেফতার নেই

দ্রুততম সময়ে আসামিকে গ্রেফতার করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ষ অপরাধী একজন : পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটলেও গতকাল রাত পর্যন্ত জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ধর্ষিত ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করানো হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা ধর্ষণের আলমত পেয়েছেন। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রæত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্টমন্ত্রী। এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এ সময় ঝোপ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বই, চাবির রিং, ইনহেলার ও ঘড়িসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাত সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনায় রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি অজ্ঞাত বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী। এক পর্যায়ে তিনি কুর্মিটোলা এলাকায় গিয়ে বাস থেকে নামার পর অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন যুবক তার মুখ চেপে ধরে। এ সময় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে পার্শ্ববর্তী ঝোপে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এ সময় তাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর ওই ছাত্রী সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। পরে বান্ধবীকে ঘটনাটি জানান। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সহপাঠীরা তাকে আবাসিক হলে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরীক্ষা করার জন্য ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। গতকাল পরীক্ষা শেষে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও ঘটনায় সাত সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা:
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গত রোববার রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন ওই ছাত্রীর বাবা। পরে প্রাথমিক তথ্য যাচাই-বাচাই শেষে গতকাল দুপুরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী শাহান হক বলেন, মামলার এজাহারে মেয়েটিকে একজন ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

দ্রুততম সময়ে আসামিকে গ্রেফতার করা হবে:
ঢাবির ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। দ্রুততম সময়ে আসামি গ্রেফতার করা হবে।

র‌্যাব, পুলিশের ঘটনাস্থল পরিদর্শন:
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষের ঘটনার পর দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এ সময় তারা ঘটনাস্থল শনাক্ত করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ছাত্রীর ওই ছাত্রীকে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সামনের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিম ও আসামির ব্যবহার করা জিনিসপত্রসহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ঝোপে পড়ে ছিল ঢাবি ছাত্রীর বই-ঘড়ি-ইনহেলার : র‌্যাব
কুর্মিটোলায় গলফ ক্লাবের সামনের জঙ্গলের ঝোপের মধ্যে পড়ে ছিল ছাত্রীটির বই, ঘড়ি ও ইনহেলার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ঝোপের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বই, চাবির রিং, ইনহেলার ও ঘড়িসহ বেশ কিছু আলামত আমরা পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এটিই ঘটনাস্থল। জড়িতকে গ্রেফতারে র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন:
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষের ঘটনায় সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান সালমা রউফকে। এছাড়াও ফরেনসিক বিভাগ, ইএনটিসহ অন্য বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন বোর্ডে।

ধর্ষণের আলামত মিলেছে:
ঢাবির ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। গতকাল দুুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর শরীরে আঘাতেরও চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সংবাদিকদের বলেন, মেয়েটির মেন্টালি ট্রমায় ভুগছেন। এছাড়াও শারীরিক কিছু আঘাত রয়েছে। পাশাপাশি সে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে এবং আমরাও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ অবস্থায় তার সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা তার জন্য অস্বস্তিকর। কেউ যেন আমরা তার কাছে না যাই। তবে ধর্ষক একজন না কি একাধিক এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি আরো পরীক্ষার পর জানা যাবে।

অপরাধী একজন :
ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গতকাল কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের সামনের জঙ্গল পরিদর্শন করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ডিএমপির গুলশান জোনের উপ-কমিশনার সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী। ভিকটিমের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় অপরাধী একজন। আমরা ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্তের চেষ্টা করছি। অপরাধীকে খুঁঁজে বের করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।

তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ভিকটিমের একটি ঘড়ি, দু’টি ইনহেলার, একজোড়া জুতা, বইসহ আরও কিছু জিনিস সিআইডি সংগ্রহ করেছে। তারা পরীক্ষা করার পর বিস্তারিত বলা যাবে। তিনি আরো জানান, এই এলাকাটি ব্যস্ত এলাকা। এখানে সাধারণত সবাই রানিংয়ে থাকেন। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় এ ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়েছে অপরাধী। এ এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছে জানিয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিন ভাগে অপরাধীকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য আমরা প্রযুক্তি ও ম্যানুয়ালি কাজ করছি।

কুর্মিটোলায় সড়ক অবরোধ:
ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় কর্মিটোলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বনানী-বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে ধর্ষণের প্রতিবাদ জানায় তারা। পরে ঘটনাস্থলের পাশে রাস্তার ফুটপাথে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধন শেষে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় জানান, শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাদের সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে এক পর্যায়ে তারা চলে যায়। বিকেল সাড়ে তিনটার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।



 

Show all comments
  • Md. Shakil Khan ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
    I think from now on we should also seek punishment for the duty bearers’ for failing to ensure people’s safety and security!! How degrading our system is becoming day by day privileging with such heinous types of criminals to grow.....pls take rightful measures to stop it without any prejudices...
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmus Sakib Duronto ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
    আমার মনে হয় যারা ধর্ষণ বা এ ধরণের কাজে জড়িত হয় তারা সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ নয়। তারা একধরণের সাইকো। তারা একটি সাধারণ পোষাক পড়া মেয়ের প্রতি যেমন আকর্ষণ বোধ করে, বোরখা পড়া মেয়ের প্রতিও তাদের সেইম ম্যানটালিটি। এদের এ ধরণের কাজে জড়িত হওয়ার কারণ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় এবং বিচারহীনতা। মানুষকে ধর্ষন এর শাস্তি সম্পর্কে অবগত করা এবং এর বিচারের ভয়াবহতা জানানোও জরুরী। উপযুক্ত শাস্তিই পারে ধর্ষনের মতো জঘন্ন কাজকে হ্রাস করতে এবং বিরত রাখতে।
    Total Reply(0) Reply
  • Raj Dutta ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৭ এএম says : 0
    প্রশাসন দ্রুত ব‍্যবস্থা নিবে এটা সময়ের দাবি।ছাত্র আন্দলন তাদের নৈতিক আন্দলন সরকারের দয়িত্ব ধষনকারিকে খুজে বেরকরা ও আইনের আওতায় আনা।এ আন্দলনে জনগনের পূর্ণ সমথন আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir Ahammed ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
    যখন একটা মেয়েকে মুখে রুমাল দিয়ে তুলে নিয়ে যায় তখন কোন মানুষই দেখেনি?দিনে যদি এমন হয় তাহলে এই দেশে মানুষ বাস করে কি লাভ?এত মানুষের ঢাকায় কেন বারবার এমনটা ঘটে যাচ্ছে?আমরা কি কেউ জবাবদিহিতার উর্ধ্বে?
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmun Nahar Jubilee ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
    ধর্ষণের শাস্তি চাই, শাস্ত চাই বলে লাভ নেই। কি শাস্তি চাই তা নির্ধারণ করতে হবে ও আইন পাশ করতে হবে।কোন কোঠিন অর্থাৎ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নাই বলে ধর্ষণ দিন দিন বাড়ছেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Harun Rashid ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
    সারাবিশ্বে এই রকম ঘটনা ঘটছে -- ঘটবে এটাই স্বাভাবিক - এতো লাফালাফি করার দরকার নেই - তবে সুষ্ঠু বিচার কাম্য সবার
    Total Reply(0) Reply
  • Akas Chowdhuru ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
    ধর্ষক‌দের ধরা সা‌থে সা‌থে য‌দি চার/পাচ/ছয় রাস্তার মো‌ড়ে র‌শি দি‌য়ে ঝু‌লি‌য়ে রাখা হ‌তো তাহ‌লে এ‌তো ধর্ষ‌নের ঘটনা ঘট‌তো না।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Yeasin Arfat ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
    ধর্ষনের পর ধর্ষক যদি জামিনে ছাড়া পাই তাহলে বিচারটা আর হলো কোথায়।ধর্ষনের বিচার হতেহবে কঠোরতম।কিন্তু আমাদের সোনার বাংলাদেশে কোন হেডার বিচার নাই।ধর্ষনের আসামি,খুনির আসামি ঘোড়াপেড়া করে আবাধে।তো আর হলটা কি।লজ্জা ছাড়া আর কিছুইনা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ