পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গেল বছরের সব ফাইল সই করে নতুন বছরের নতুন কর্মযাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহীর এই দৃষ্টান্ত সরকারের সব মন্ত্রী ও আমলারা অনুসরণ করলে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিত্র আমূল পাল্টে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মোদ্যম ও এই গতিশীলতার ছাপ সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না বলেই আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ অগ্রাধিকারভিত্তিক নানা প্রকল্পসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। একনেকসহ মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভায় মন্ত্রী-আমলাদের কাজ ফেলে না রেখে সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তাগিদ দিয়েছেন। কখনো কখনো সংশ্লিষ্টদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সরকারি ফাইলপত্র সময় মতো ছাড় করার ধারাবাহিক নজির স্থাপনের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। এমন কি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েও অনলাইনে ৭৫টি সরকারি ফাইলে সই-স্বাক্ষর করে পাঠানোর খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি ২০২০ সাল শুরুর আগেই ২০১৯ সালের সরকারি ফাইলগুলো ক্লিয়ার করতে অতিরিক্ত সময় অফিস করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। তার এই নিয়মানুবর্তিতা ও কর্মোদ্দীপনা মন্ত্রিপরিষদের অন্য সদস্য ও আমলারা যেন অনুসরণ করেন সেটাই প্রত্যাশিত।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য ইত্যাদি অভিধাগুলো আমাদের সরকারি কাজকর্মের মূল অনুসঙ্গ দাঁড়িয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় সব সেক্টরে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া লাগলেও এখনো আমাদের আমলাতন্ত্র জটিলতা, অস্বচ্ছতা ও দীর্ঘসূত্রিতার নিগড় থেকে বের হতে পারছে না। অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মন্থরতা ও অস্বচ্ছতা দূর করার তাগিদ বার বার উচ্চারিত হলেও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। বাস্তবায়নে অক্ষমতার কারণে প্রায় প্রতিবছরই জাতীয় উন্নয়ন বাজেটে কাঁটছাঁট করতে হয়। চলতি অর্থবছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী উন্নয়ন বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও অর্থবছরের প্রথম ৪ মাস শেষে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে উন্নয়ন বাজেটের অর্থব্যয়ের হার গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের সক্ষমতা বাড়লেও বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না বাড়ার বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। সময়ের চাহিদা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আমলা ও মন্ত্রীদের অদক্ষতা, অক্ষমতা দেশের উন্নয়নের প্রত্যাশিত গতি ব্যাহত করছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা সব কাজের সব দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কাজে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি কাজে গতিহীনতা ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার মূলে প্রথমত কাজ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-আমলাদের দুর্নীতি ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা অথবা ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অক্ষমতা ও অযোগ্যতা। দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করার পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অযোগ্য ও অদক্ষদের অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বিবেচনা করতে হবে। দেশে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অতীতের কাজের দুর্নীতি-অস্বচ্ছতার কারণে অনেক সাবেক মন্ত্রী-আমলা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দুদকের তদন্ত ও জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব কারণেও সরকারি কাজে মন্থরতা দেখা দিতে পারে। এ কারণেই সরকারি কাজে গতিশীলতা নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ে জনগণকে প্রত্যাশিত সেবা প্রদান করতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের সব কাজের গুরু দায়িত্ব পালনের পরও যদি প্রধানমন্ত্রী যথাসময়ে নিজের কাজ শেষ করতে পারেন, তাহলে অন্য মন্ত্রী ও আমলারা পারবেন না কেন? প্রধানমন্ত্রী নিজে বছরের কাজ বছরের মধ্যে শেষ করার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তার জন্য তাকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। তার অনুসরণে সব মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীলও কর্মতৎপর হবেন, এটাই কাম্য। বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচ্য বিষয় হিসেবে যথোচিত গুরুত্ব পাবে, সেটাও আশা করি। পাশাপাশি কারা কেন মাসের পর মাস ফাইল আটকে রাখছেন, সময়মত অ্যাসেসমেন্ট করতে ব্যর্থতার পেছনের কারণ নির্ণয়ের সাথে সাথে আমলাতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ম্যের পেছনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।