পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের সর্বাধিক নিগৃহীত, নিষ্পেষিত, শোষিত, অত্যাচারিত ও শাসিত জাতির নাম মুসলিম। এই অবস্থা চলছে বহু বছর যাবত। সা¤প্রতিককালে এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। যাদের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। তারা চরম কষ্টে নিপতিত হয়েছে। রাশিয়ার চেচনিয়া ও দাগেস্তান, ফিলিস্তিন, ভারতের কাশ্মীরের মুসলমানরা চরমভাবে নির্যাতিত হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। এছাড়া, পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিম বিরোধী প্রবল মনোভাব বিরাজ করছে বহুকাল থেকেই। তারা নানাভাবে নির্যাতিতও হচ্ছে প্রতিনিয়তই। কোথাও কোথাও ইসলামী আকিদাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স¤প্রতি ভারতে সংশোধিত এনআরসির কারণে দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠি চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বহিষ্কৃত হওয়ার আশংকায়। সেখানে শাসক গোষ্ঠি সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর নানা অপকৌশল চালাচ্ছে। প্রতিবাদে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পুলিশের নির্বিচার গুলিতে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট বন্ধ এবং প্রচারমাধ্যমে এনআরসি বিরোধী খবর প্রকাশে সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছে। মুসলিম ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, এমপি সম্প্রতি বলেছেন, ‘সরকার মুসলিমদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয় বরং দেশ থেকে বহিষ্কার করার ষড়যন্ত্র করছে।’ অন্যদিকে, বিধর্মীদের প্ররোচনায় কয়েকটি মুসলিম দেশে ক্ষমতার দ্ব›েদ্বর কারণে চলছে ব্যাপক হানাহানি তথা গৃহযুদ্ধ। কয়েকটি মুসলিম দেশ আক্রান্ত হয়েছে অন্য কয়েকটি শক্তিশালী মুসলিম দেশ দ্বারা। পারস্পরিক সম্পর্কও ছিন্ন করেছে। আবার কিছু বিপথগামী মুসলমান বিধর্মীদের প্ররোচনায় ও সহায়তা সন্ত্রাসী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে বিভিন্ন দেশে। এসব নানা কারণে মুসলমানরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কিছু নজির উল্লেখ করা যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত অধ্যাপক গিডেয়ন পোলিয়া এড়ানোযোগ্য মৃত্যু নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, ৯/১১-পরবর্তী বিভিন্ন যুদ্ধে ৩.২০ কোটি মুসলমানের প্রাণ নিভে গেছে। সরাসরি যুদ্ধ ও এর প্রভাবে ২.৭০ কোটি মুসলমান প্রাণ হারিয়েছে। এর সঙ্গে তিনি আরও ৫০ লাখ মুসলমানকে যোগ করেছেন। কারণ, যুদ্ধে যেসব মুসলমান প্রাণ হারিয়েছে তারা বেঁচে থাকলে তাদের ঔরসে জন্ম নিতো এই ৫০ লাখ মুসলমান। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইন্সটিটিউট ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে কেবল সরাসরি যুদ্ধে যারা নিহত হচ্ছেন তাদের একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তাতে গত নভেম্বরে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯/১১-এর পর ওই পাঁচ মুসলিম দেশে সরাসরি যুদ্ধে মারা গেছে আট লাখের বেশি মানুষ। এছাড়া সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন আরও ২.১০ কোটি মানুষ। উক্ত পরিসংখ্যানে যুদ্ধের প্রভাবে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরাসরি যুদ্ধে যে সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যায় যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও মহামারিসহ নানা জটিলতায়। গত নভেম্বর প্রকাশিত ব্রাসেলসের পলিটিক্যাল ক্রিয়েটিভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক এক জরিপ রিপোর্ট মতে, ‘১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হামলা পরিচালনার পর থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা অন্তত ৩৩,৭৬৯টি হামলা চালিয়েছে এবং এতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে এক লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৬ জন মানুষ। বিশ্বব্যাপী এই সন্ত্রাসবাদের শিকার হওয়া মানুষের মধ্যে ৯০% মুসলমান। আর বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের ঘটনাসমূহ ঘটে ৮৯.১% মুসলিম দেশে’ বলে গত ১৮ নভেম্বর এক দৈনিকে প্রকাশ। বিশ্বে এই মুহূর্তে ৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া। যুদ্ধ ও নানা ধরনের সংঘাতে তারা গৃহচ্যুত। এর মধ্যে ২৫ মিলিয়ন শরণার্থী। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মতে, দুই তৃতীয়াংশ শরণার্থী মাত্র ৫টি দেশের। এই শরণার্থীদের অধিকাংশই মুসলমান। যারা অমুসলিম দেশেই বেশি রয়েছে এবং চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকেই বাঁচার তাগিদে বিপথে ধাবিত হয়েছে। স্মরণীয় যে, রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আইসিজে ও আইসিসিতে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিচার সম্পন্ন হবে কি-না কিংবা হলেও তার রায় বাস্তবায়ন হবে কি-না সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, মিয়ানমার ও ইসরাইল জাতিসংঘকে পাত্তা দেয় না। উপরন্তু তাদের পক্ষে রয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী অনেক দেশ। ইতোমধ্যেই ইসরাইলের সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী বেযালাল স্মোট্রিচ বলেছেন, ফিলিস্তিন আইসিসি থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে প্রতিদিন একটি করে ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করা হবে।
বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুসলিম এবং এ শতাব্দীর শেষে তারা হবে সর্বোচ্চ সংখ্যক। এ ব্যাপারে গত ৩০ অক্টোবর এক দৈনিকে প্রকাশ, বর্তমানে ধর্মীয় দিক দিয়ে সর্বাধিক খ্রিস্টানরা। খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৪০ কোটি। এর পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম। মুসলমানদের সংখ্যা ১৮০ কোটি। তৃতীয় বৃহত্তম হিন্দু। এদের সংখ্যা ১২০ কোটি। চতুর্থ বৃহৎ ধর্ম বৌদ্ধ। আনুমানিক ৫১ কোটি মানুষ এই ধর্মে বিশ্বাস করে। পঞ্চম বৃহৎ ধর্ম হান। এই ধর্মের অনুসারী ৪০ কোটির কাছাকাছি। ষষ্ঠ শিখ। তিন কোটি মানুষ শিখ ধর্মে বিশ্বাস করে। সপ্তম বৃহৎ ধর্ম ইহুদি। এর অনুসারীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। পিউ রিসার্চের রিপোর্ট মতে, ‘২০৬০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৬০ কোটিতে দাঁড়াবে। তখন মুসলমানদের সংখ্যা হবে ৩০০ কোটি (মোট জনসংখ্যার ৩১%), আর খ্রিস্টান হবে ৩.১ বিলিয়ন (মোট জনসংখ্যার ৩২%)। আর চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ মুসলমানরাই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী।’ পিউ রিসার্চ প্রজনন হার অনুসারে এই হিসাব করেছে, অথচ এর বাইরে বহু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে প্রতি নিয়তই। তাই প্রকৃত হিসাবে মুসলমানের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। স্মরণীয় যে, ওআইসি’র সদস্য দেশের সংখ্যা ৫৭টি। উপরন্তু বিশ্বের মোট সম্পদের ৬০% রয়েছে মুসলিম দেশগুলোতে। সর্বোপরি মুসলমানদের সমুজ্জ্বল দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কয়েক হাজার বছর তারা বিশ্বের অর্ধেকের বেশি অঞ্চল শাসন করেছে। বিশ্বের বর্তমান সভ্যতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের জনকও মুসলমানরাই। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় মুসলমানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
যা’হোক, মুসলমানদের বর্তমান করুণ পরিণতির জন্য তারা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী। অনৈক্য, সংঘাত, বিবাদ, ভোগবিলাস, ধর্ম হতে বিচ্যুতি ইত্যাদি এর মূলে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের নীতির নামে রীতি ও কুসংস্কার এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, প্রকৃত নীতির অনুসারীর সংখ্যা নগণ্য হয়ে পড়েছে। মুসলমানদের সংকটের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে মুসলিম দেশগুলোতে গণতন্ত্রের অভাব। মাত্র কয়েকটি দেশ ছাড়া বেশিরভাগ মুসলিম দেশে গণতন্ত্র নেই। দীর্ঘকাল ক্ষমতা আঁকড়ে রাখছে বয়স্ক শাসকরা। ফলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে না। তাই কোনো কারণে নেতার অবর্তমানে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষমতা নিয়ে হানাহানি হচ্ছে। গণতন্ত্র না থাকায় জবাবদিহিতাও নেই। তাই ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে সম্পদের বৈষম্য আকাশ-পাতাল হয়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সম্পদের বেশিরভাগ কুক্ষিগত করে ভোগবিলাসে মত্ত রয়েছে। আর বেশিরভাগ মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ভাগ না পেয়ে দরিদ্র ও অশিক্ষিত রয়ে গেছে। মুসলমানদের তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে, শত্রুদের ক্রীড়নক হয়ে ধর্মের নামে অধার্মিক তথা সন্ত্রাসী কর্মে লিপ্ত হওয়া। যাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। আর বেশিরভাগ মুসলমান ধর্মের মূল মর্মবাণী তথা শান্তি ও সাম্যের ধারক বাহক। তারা সন্ত্রাস বা উগ্রবাদকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করে। উপরন্তু সন্ত্রাসী কর্মের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বেশিরভাগ মুসলমান। তবুও মুষ্টিমেয় কিছু বিপথগামী মুসলমানের কারণেই সমগ্র মুসলমান জাতি আজ সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বলে খ্যাত হচ্ছে অমুসলিমদের কাছে। উপরন্তু ইসলামভীতি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাপী। অথচ এই সন্ত্রাসী কর্মের শিকার হচ্ছে মুসলমানরাই বেশি। তথাপিও এই সন্ত্রাসকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে মুসলমানদের নির্মূল করার নীল নক্সা বাস্তবায়ন করছে ইসলামের চিরশত্রুরা। সমাজতন্ত্রের পতনের পর পুঁজিবাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বে। তার জাঁতাকলে পড়ে বেশিরভাগ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বিকল্প পথের সন্ধান করছে। আর সেই বিকল্প পথ হচ্ছে ইসলাম। মুসলমানদের পুনঃউত্থানের সম্ভাবনা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই ইসলামের শত্রুরা নিজেদের অস্তিত্ব ও রাজত্ব টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যেই ইসলামের উত্থান রোধ করার জন্য কূট কৌশল গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করছে। আর সেটা হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের জঙ্গী হিসাবে চিহ্নিত করে মুসলমানদের পুনঃউত্থান ঠেকানো। তাতে শরীক করেছে কিছু বিপথগামী এবং অর্থ ও ক্ষমতা লোভী মুসলমানকে। মুসলমানদের আর একটি বড় সংকটের কারণ হচ্ছে, বেশিরভাগ মুসলমানের নারী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা। অথচ মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের শিক্ষিত ও ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। মুসলিম নারীরা শিক্ষা ও কর্ম থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতা সূচক-২০২০’ মতে, ১৫৩টি দেশের মধ্যে তালিকায় উপর থেকে ৫০ এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া একটি মুসলিম দেশও নেই। নারীর নিরাপত্তাহীনতাও মুসলিম দেশগুলোতে সর্বাধিক। অথচ ইসলাম ধর্মে নারীর মর্যাদার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু না, ঐতিহ্যবাহী জাতি, বিশ্বের বৃহৎ জাতিকে আর বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যাবে না। সিংহের মতো গর্জে উঠবেই। গাঢ় অন্ধকারের বুক চিরে সূর্যের লাল আভা প্রস্ফুটিত হবেই এবং পুনরায় বিশ্বব্যাপীই শান্তি ও উন্নতি প্রতিষ্ঠায় কল্যাণময়ী নেতৃত্ব দেবেই। সে জন্য মুসলমানদের এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক। আধুনিক বিশ্বে অধিক সন্তান মানেই অধিক শক্তি নয়। বরং সন্তান যদি কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ এবং নৈতিক না হয়,তাহলে সে সম্পদের পরিবর্তে বোঝায় পরিণত হয়। তাই মুসলিম জাতিকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন প্রত্যেক মুসলমানকে কর্মমুখী তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ করে গড়ে তোলা। মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদেরকে শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্ম থেকে বঞ্চিত রেখে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব নয়। তেমনি সন্তানদেরও শিক্ষিত করা সম্ভব নয়। তাই নারী-পুরুষ সমতা দরকার মুসলমানদের মধ্যে। তবে তা অবশ্যই হতে হবে ইসলামী নীতি ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে। ধর্মীয় শিক্ষায়ও শিক্ষিত করা দরকার মুসলিম জাতিকে। নতুবা রীতি ও কুসংস্কারের জিঞ্জির ছিন্ন করে শতভাগ ইসলামী নীতি পালন হবে না। অনৈতিক লোক যতই দক্ষ ও যোগ্য হোক না কেন, সে কল্যাণকর নয়। সমাজ ও দেশের জন্য মহাক্ষতিকর। অপরদিকে, মুসলমানদের শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। কে শিয়া, সে সুন্নি, কে কোন মাজহাবের অনুসারী ইত্যাদি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে যে আল্লাহ এবং তার প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)কে মানে, বিশ্বাস করে ও হুকুম পালন করে সেই মুসলমান। আর সব মুসলমান ভাই ভাই। কে আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় তা নির্ধারণ করার ভার আল্লাহর, অন্য কারও নয়। অন্যদিকে, মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সংকট-দ্ব›দ্ব ওআইসির মাধ্যমে নিরসন করতে হবে। এ জন্য ওআইসিকে খুবই শক্তিশালী ও কার্যকর করা প্রয়োজন। ওআইসির অধীনে কমপক্ষে এক লাখের মতো ইসলামী আর্মি গঠন করা আবশ্যক ন্যাটো বাহিনীর মতো। এ বাহিনীর দায়িত্ব হবে মুসলিম দেশগুলোর সংঘাত ও সংকট নিরসন এবং মুসলিম দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূল, উন্নয়ন, সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা ও সুশাসন, সংস্কৃতি ও পরিচয়, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা, শান্তি-সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা, শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে শত্রু পক্ষকে মোকাবেলা এবং নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। আইডিবিকেও অধিক শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্রয়োজন বাণিজ্যর ক্ষেত্রে একক মুসলিম মুদ্রা চালু করা। প্রসঙ্গক্রমে মরক্কোর বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদের অভিমত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ইসলামী বিশ্বের সম্পদগুলি থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য একটি নতুন রোডম্যাপ প্রণয়নের জন্য ওআইসি’র প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশতম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন, যা ইসলামী দেশগুলির জীবন মানের সূচকগুলিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলছেন, ‘আন্তঃইসলামিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমাদের সংস্থাকে খন্ডন ও বিভক্তির ঝুঁকি থেকে রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের সৎ বিশ্বাসের সাথে কাজ করা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘উপযুক্ত জাতীয় কৌশলগুলি যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে এবং আমাদের সংস্থার সনদে অন্তর্ভুক্ত সংহতি ও সহযোগিতার নীতিগুলি পর্যবেক্ষণ করে যথাযথ উন্নয়ন কৌশল এবং কর্মসূচি প্রণয়ন ও প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিতে হবে।’ স্মরণীয় যে, মুসলিম দেশগুলোর অফুরন্ত সম্পদের মালিক পরম করুণাময়। তিনি মুসলমানদের উন্নতির লক্ষ্যেই এসব দান করেছেন। তাই এসবের প্রতি শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দেশেরই মানুষ নয়-দুনিয়ার সব মুসলমানই হকদার। জাতিসংঘে মুসলিম দেশ ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার লক্ষ্যে ২টি দেশকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার চেষ্টা করা দরকার। ইসলামী নীতি ও ঐতিহ্য প্রকাশ, ইসলামভীতি দূর এবং অভিন্ন নীতি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা বিষয়টি প্রচারের জন্য শক্তিশালী ইসলামী মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামী পন্ডিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রতিটি মুসলিম দেশে স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ‘ফতোয়া বোর্ড’ গঠন করে তার মাধ্যমে ইসলামী নীতি প্রচার এবং অন্য কারও ফতোয়া নিষিদ্ধ করা দরকার। সর্বোপরি মুসলিম পন্ডিতদের দিয়ে ইসলামের নীতিভিত্তিক অ্যাপ তৈরি করে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করা আবশ্যক। এসব করা হলে ইসলামের নামে প্রচলিত কুসংস্কার ও রীতি বন্ধ হয়ে মুসলমানরা প্রকৃত নীতিতে ধাবিত হবে। এতে করে মুসলমানদের অশেষ কল্যাণ হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।