Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কোরআন নাজিলের মাসে আমাদের করণীয়

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিকুর রহমান নগরী
আরবি বারো মাসের মধ্যে রমজান হচ্ছে নবম মাস। আসমানি রহমতের বার্তা আর অফুরন্ত মাগফেরাতের আহ্বান নিয়ে এ মোবারক মাহিনা আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। বছরের বাকি এগারো মাসের তুলনায় এ মাসটির ফজিলত ও বরকত অনেক বেশি।
মানবজাতিরা যখন সারাটি বছর খোদার নাফরমানি আর উল্টোমি করে কাটিয়ে দেয়, ঠিক তখনই সেসব ভুলের মাশুল দিতে ক্ষমার শ্লোগান নিয়ে মানুষকে নিষ্পাপ আর পাপরাশিকে ভস্ম করার জন্য আগমন করেছে মাহে রমজান।
“রমজান” আরবি শব্দ। যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু মূলত এর অর্থ হচ্ছে ভস্ম করে দেয়া, ঝলসে দেয়া। এ মাসটির নামকরণের কারণ হচ্ছে, সর্বপ্রথম রোজার বিধান যে মাসে এসেছিল সে মাসটি ছিল প্রচ- গরমের। ঝলসে দেয়ার মতো গরম, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘রমজান’। তবে আলিমগণ বলেন, ‘বান্দা যেহেতু এ মাসের বিধানাবলী সুচারু রূপে পালন করে বিধায় আল্লাহতায়ালা তাঁর সমস্ত পাপকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেন।
তাই এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়।
আমরা সাধারণত মনে করে থাকি রমজান মাসের বৈশিষ্ট্য শুধু ‘রোজা রাখা আর তারাবিহ পড়া। এগুলো রমজানের প্রধান দুটি ইবাদত বটে। এছাড়াও এ মাসটির রয়েছে ভিন্ন এক উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহপাক মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, “আমি তোমাদের উপর রোজা ফরয করেছি যেমনিভাবে করেছিলাম তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার’’। সুতরাং রমজানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। বিগত বছরের সকল পাপাচার থেকে মুক্ত করে তোলাই হচ্ছে এ মাসের প্রধান পয়গাম। এ মাসটির ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একবার নবীয়ে করিম (সা.) শাবানের শেষ তারিখে আমাদেরকে সম্বোধন করে বলেন, “হে মানবজাতি! তোমাদের মধ্যে এমন একটি মোবারক মাস উপস্থিত হয়েছে যে মাসটির মাঝে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
মানবজাতির ধর্মীয়গ্রন্থ আল-কোরআন যে মাসে নাজিল হয়েছে এটা অবশ্যই কারো অজানা নয়। আর অজানাদের জন্য আল্লাহপাকের ঘোষণা রয়েছে “রমজান সেই মাস যে মাসে নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়ত এবং পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী”। (সূরা : ১, আয়াত : ১৮৫)
কোরআন নাজিলের ব্যাপারে আল্লাহপাক সূরা বাকারার ১৮৪নং আয়াতে বলেন, ‘আইয়্যামাম মাদূদাত’ এ বাক্যটি ছিল সংক্ষিপ্ত। তারই ব্যাখ্যা করা হয়েছে উল্লেখিত আয়াতে। এ মাসটির অন্যতম ফজিলত হলো ‘একে আল্লাহপাক স্বীয় ওহি এবং আসমানি কিতাব নাজিল করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং রমজান মাসই হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। পবিত্র কোরআনের ৩০নং পারার সূরা কদরে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি তা নাজিল করেছি কদরের রাতে”। আর কদরের রাত হলো রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত। উপরোল্লেখিত আয়াতের ভাষ্যানুযায়ী বুঝা গেল যে, ‘রমজান কোরআন নাজিলের মাস’।
এ পর্যায়ে আমাদের করণীয় সম্পর্কে মুখতাসারভাবে আলোচনা করবো যা ভালোভাবে অনুধাবন করলে এ মাসের করণীয় কী তা বুঝা মুশকিল হবে না।
মুসলমান হিসেবে যেমন ইসলামী শিক্ষা অর্জন করা সকলের উপর ফরজ। ঠিক তেমনিভাবে মুসলমানিত্ব বজায় রেখে যুগ চাহিদার খোরাক জোগাতে কলেজ-ভার্সিটিতেও পড়া সওয়াবের কাজ। রমজান ছাড়া প্রায় এগারোটি মাস আমরা সবাই স্কুল-কলেজ, ভার্সিটির লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাই। কোরআন তেলাওয়াত বা কেরাত চর্চার তেমন একটা সুযোগ মিলে না। রমজান মাসে খোদার তরফ থেকে যে বরকত প্রদান করা হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোরআন তেলাওয়াত : কোরআন তেলাওয়াত শিখা ফরজে কিফায়া আর তাজবিদ সহকারে তেলাওয়াত করা ফরজে আইন। আর এ ফরজে আইনের শিক্ষাকে অর্জন করলে বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা যাবে, আর অন্যকে শেখানোও সম্ভব হবে।
তাজবিদ সংকলনের প্রেক্ষাপট : কোরআন তেলাওয়াতে ভুল হওয়া এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়, বরং হযরত ফারুক্বে আযমের যামানায় এক গ্রাম্য ব্যক্তি লোকমহলে কোরআন ভুল পড়েছিল। ঘটনাটি হযরত উমর (রা.) জানতে পেরে তাকে ডেকে এনে ভুলটি শুদরিয়ে দেন।
লক্ষ্য করুন হাল জামানায় আমাদের চারদিকে আলিম-উলামা, মুফতি-মুহাদ্দিস, ইমাম-মুয়াজ্জিন বিশুদ্ধভাবে কোরআনের খেদমত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তা আমাদেরকে ফারুক্বে আযমের সেই যুগকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতে যে কেমন সাওয়াব তা আমাদের কারো অজানা নয়, তদুপরি স্মরণ করিয়ে দেয়াকে আমি ঈমানি দ্বায়িত্ব মনে করি। কোরআন শিখা আর শিখানো যে কত মর্যাদা এবং ফজিলতের কাজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরআন নাজিলের মাসে আমাদের করণীয়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ