মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নতুন শতাব্দীর প্রথম প্রহরে হঠাৎ করেই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন ভ্লাদিমির পুতিন। কেজিবির সাবেক দুর্ধর্ষ এজেন্ট থেকে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া পুতিনের ক্ষমতা গ্রহণের ২০ বছর হতে চলেছে।
সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন পুতিন। তাই ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইয়েলৎসিন রাজনীতি থেকে বিদায় নিলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। ইয়েলৎসিনের বিদায় অনুষ্ঠানের পর টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছিলেন, ‘নতুন বছরের আগের দিন সন্ধ্যায় স্বপ্ন সত্য হয়। বিশেষ করে এবার। নতুন শতাব্দীর সাফল্য কামনা করে আপনারা গ্লাস তুলুন।’
ওই বছর মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। ২০০৪ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরপর দুই বারের বেশি নির্বাচিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০০৮ সালে আর নির্বাচন করেননি পুতিন। বরং নিজের জায়গায় নিয়ে আসেন তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহচর দিমিত্রি মেদভেদেভকে।
২০১২ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন পুতিন। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকলেও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, বেড়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব। বিরোধীরা তাঁর মেয়াদকালকে রাশিয়ার জার বা সম্রাটের রাজত্বের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন।
দেখা যাক এই ২০ বছরে প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সফল ছিলেন পুতিন। ক্ষমতা গ্রহণের সময় পুতিন লিখেছিলেন, ‘রাশিয়াকে ক্ষমতাধর দেশ বলার সময় এখনো আসেনি।’ তিনি রাশিয়াকে সেই অবস্থানে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এক্ষেত্রে তাকে অনেকটাই সফল বলা যায়।
যদিও রাশিয়ার উপর পশ্চিমা বিশ্বের নানা নিষেধাজ্ঞা আছে এবং দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশেগুলোর জোট (জি৮) থেকেও বেরিয়ে যেতে হয়েছে, তারপরও সিরিয়া বা ইউক্রেনে গৃহযুদ্ধ বা ইরানের পরমাণু প্রকল্পে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে।
২০০০ সালে ভোটের আগে ভোটারদের প্রতি এক খোলা চিঠিতে পুতিন বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী ও অস্ত্র শিল্পকে ঢেলে সাজিয়ে' রাশিয়াকে আরো শক্তিশালী দেশে পরিণত করবেন। এমন দেশে পরিণত করবেন, যে দেশ নিজের জিডিপির চাইতে শক্তিশালী হবে, যার সক্ষমতা বিচার করা কঠিন হবে।’
পুতিন ক্ষতায় আসার পর রাশিয়ার শক্তি যে বেড়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পুতিন যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন রাশিয়ার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার স্মৃতি তখনও তাজা। ১৯৯৮ সালের ওই ঘটনায় রাতারাতি পথের ফকিরে পরিণত হয়েছিলেন অনেক রুশ।
ক্ষমতা গ্রহণের পর পুতিন, জনগণের ‘জীবনযাত্রার মান বাড়ানো’ এবং ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নাটকীয় গতি সঞ্চারের’ প্রতিশ্রুতি দেন।
পুতিনের হিসাব ছিল, যদি রাশিয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে নিয়ে যেত পারে, তবে ১৫ বছরে দেশটির জিডিপি পর্তুগালের সমান হবে। আর ১০ শতাংশ হলে তারা ফ্রান্স বা যুক্তরাজ্যকেও ধরে ফেলতে সক্ষম হবে। পুতিনের ওই বিবৃতি ‘ক্যাচ আপ পর্তুগাল’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল।
২০১৩ সাল নাগাদ রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি পর্তুগালকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলে। অবশ্য বিষয়গুলো মোটেও অতটা সহজ ছিল না। তাছাড়া পর্তুগাল ইউরোপের উন্নত দেশে মধ্যেও পড়ে না এবং পুতিন নিজেও খুব ভালো করে সেটা জানতেন।
তারপরও রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি উল্লেখ করার মতো। ২০১৪ সালে এসে বাধার মুখে পড়ে বলে মত অনেকের। কারণ, সেবছর ক্রিমিয়া দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু যত নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করা হোক, পুতিন ক্রিমিয়ার দখল ছাড়তে রাজি নন।
পুতিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে। আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন। বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি। ইয়েলৎসিন তার উত্তরসূরি হিসেবে পুতিনের নাম ঘোষণা করলে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
গত বছরের মার্চে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে চতুর্থ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পুতিন। রাশিয়ায় প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল এখন ছয় বছর। ২০২৪ সালে চতুর্থ মেয়াদ শেষ করতে পারলে ২৪ বছর রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার গৌরব অর্জন করবেন তিনি, যা হবে সোভিয়েত আমলের নেতা জোসেফ স্টালিনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।