Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যে কোনো সময় সরকার পতনের আন্দোলন

গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলনের সমাবেশে বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

গত বছরে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যা দিয়ে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ মঞ্চের ব্যানারে কয়েকটি বিরোধী দল সমাবেশ করছে। গতকাল রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে এ সমাবেশ করেন তারা। এই মঞ্চ থেকে নতুন করে সরকার পতনের জন্য জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্নবা জানিয়েছেন বক্তারা। বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা সমাবেশে অংশ নেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেএসডির সভাপতি আ স ম রব বলেন, এই সরকার লুটপাট করে দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। এতো কিছুর পরেও তারা বলে আমরা লুটপাট করি না। এতো সুন্দর করে বলে যে, শুনলে হাসি পায়। তাদের বক্তব্য শুনলে ক্লাস ওয়ানের বাচ্চারাও টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়। পৃথিবীর সব জায়গায় ভোট চুরি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভোট ডাকাতি হয়েছে। সারা পৃথিবীতে ভোট হয় দিনের বেলা। আর বাংলাদেশে ভোট নিয়ে গেছে রাতের বেলা। দুনিয়ার সব জায়গায় ভোটের দিন ভোট হয় আর বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টা আগেই ভোট হয়।

সরকারকে পদত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহŸান জানিয়ে রব বলেন, আপনারা তো যাবেনই। তবে ভদ্রভাবে যাবেন না অভদ্রভাবে যাবেন সেটা ডিসাইড করেন। আপনাদের যেতে হবে। আপনাদের আর থাকার কোনো সুযোগ নেই। সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কিভাবে যাবেন সেটার সিদ্ধান্ত নেন।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্য়াক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা মৎস্য ভবনের সামনে সমাবেশ করতে পারছি। এতেই বুঝতে হবে, সমাবেশ করার সাহস আমাদের আছে। কারণ, অনেকেই আজ সমাবেশ করতে পারেননি। আমরা করেছি। এটা নাগরিক ঐক্যের বা বিএনপির সমাবেশ না। এটা জনগণের সমাবেশ।

সবাই মিলে গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন জোরদার করার আহ্নবা জানিয়ে মান্না বলেন, বঙ্গবন্ধু একবার বলেছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। আমি বলব, পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করেন। যতো তাড়াতাড়ি সংগঠিত হব, ততো তাড়াতাড়ি এই সরকারকে কার্ড দেখাব। আর কার্ড যদি দেই, ওই কার্ড কার্যকর করতে হবে। কে কত বড় দল, কে কত বড় নেতা, সেটা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে। আপনারা সবাই তৈরি থাকেন যেকোনো সময় এই সরকারের পতনের জন্য মাঠে নামতে হবে। যেকোনো সময় আমরা এই সরকারের পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। প্রতিজ্ঞা একটাই। আমরা আন্দোলন করব। আজ থেকে আমাদের এই আন্দোলন শুরু। আজ থেকেই লড়াই শুরু। এই লড়াই চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বিজয় অর্জিত হচ্ছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডাকসু ভিপির ওপর হামলা আমরা দুইজন ডাকসুর ভিপি আজকে এখানে আছি। আমার নামে ২টা মামলা আছে, ডাকসুর ভিপির জন্য না অন্য কারণেই আছে। এখন ডাকসুর ভিপির নামে মামলা দেয়া হচ্ছে কেনো? সিসিটিভির ফুটেজ নাই-দায়িত্ব কার? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন আমি জানি তারা ডাকসু অফিস কি উদ্দেশে ভাঙচুর করেছে। উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন না কেনো? তাকে রিমান্ডে নেন না কেনো? বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে রিমান্ডে নিতে বলা অবশ্য ভালো না। আচ্ছা রিমান্ডে নিয়েন না, জিজ্ঞাসা করেন, জানেন উনি কী জানেন।
মান্না বলেন, মন্ত্রী বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের কি দরকার? আমি এটাও স্পষ্ট কণ্ঠে বলতে চাই, ছাত্রদের উপরে এই ধরনের নির্যাতন যদি আবারো হয়, শ্রমিক যদি মারা যায়, নারীদের উপরে যদি নির্যাতন চলে, এরকম জবর দখল করেই যদি ক্ষমতায় থাকতে চান, বন্ধ করে দেবো সারাদেশ।”

আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, আপনারা অনেক মানুষের ভোট চুরি করেছেন। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে যে, তুমি কি স্বাধীনতাবিরোধী। নিশ্চয়ই না। এই সরকারকে প্রশ্ন করলে যদি স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যায় তাহলে দেশের ১৬ কোটি মানুষই স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি আবারো বলছি, কে সরকারে আসবে আমরা বিষয় নয়, সে নির্বাচিত হয়ে আসবে সেটা আমার দাবি। যে বাংলাদেশের জন্য এতোগুলো মানুষ সংগ্রাম করেছে, ত্যাগ করেছে সেই বাংলাদেশে আমি ফিরে যেতে চাই। আমি মনে করি, আমরা প্রত্যেকে যদি আজকে যেমন নেমেছে, আমরা যদি সড়ক দখল করি, আমরা যদি রাজপথে নামি, আমাদের বিশ্বাসের পেছনে সত্যিকার অর্থে দাঁড়াতে পারি- এই বাংলাদেশ আমরা ফিরে পাব। অল্প কয়েকজন মানুষ আমাদের থেকে বাংলাদেশে কেড়ে নিতে পারবে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, একটি দফা জনগণের সেই দফা এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে আমরা ঘরে ফিরবে না। এই সরকারের পদত্যাগ হলেই আমরা গণতন্ত্র ফিরে পাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, লাখ লাখ নেতা-কর্মীর নামে মামলা প্রত্যাহার হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো লোক দেখানো আন্দোলন করতে চাই। আমরা ঈমানী আন্দোলন করতে চাই এবং যে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। আমরা সকল মানুষকে এক মঞ্চে এনে এই সরকারের পতন ঘটাব ইনশাল্লাহ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা প্রত্যেকে জানি একবছর আগে এই দিন বাংলাদেশে কি হয়েছে। মানুষ চুরি করে, বাংলাদেশের শাসকরাও ভোট চুরি করেছে অতীতে। কিন্তু দেশের ১৬ কোটি লোককে সাক্ষী রেখে, ১৬ কোটি লোককে কার্যত বন্দি করে এরকম নিষ্ঠুরভাবে নির্মমভাবে ভোট ডাকাতির মহোৎসব আগে কখনো বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি। ২০১৪ সালে আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা, ২০১৮ সালে আমরা দেখলাম ভোটারদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা হয়, আগামীদিনে যে নির্বাচন হবে মানুষকে বাদ দিয়ে, যন্ত্র দিয়ে কারচুপি করা হবে, ইভিএম দিয়ে কারচুপি করা হবে। আজকে মানুষের মনে কোনো রকম বিশ্বাস নেই।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র যে আমাদের গণতন্ত্রের নির্বাচন ব্যবস্থা বা গণতন্ত্রের সমাধি হয়েছে সেটা না, আমাদের বাকস্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা সমস্ত কিছু হরণ করা হয়েছে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে, প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা থাকবে, প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীন অধিকার থাকবে, সেই অধিকার হরণ করার কারো অধিকার নেই। আমি আশা করি, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম সেটা অব্যাহত থাকবে। আমরা বাংলাদেশের স্বত্বাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই লড়াই থেকে কেউ যেন সরে না যাই।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি নূর হোসেন কাসেমী, বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, গণফোরামের সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক, বিকল্পধারার (একাংশ) সভাপতি নুরুল আমীন বেপারী প্রমুখ।

সমাবেশে বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েক সাকির উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ আসেননি।

এদিকে, সোমবার দুপুরে মৎস্য ভবন এলাকাতেই বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি মৎস্য ভবন এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। যদিও পুলিশের দাবি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরাই শুরুতে পুলিশের ওপর হামলা করে। এই সংঘর্ষে গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ওই এলাকা থেকে আটক হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ