Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

| প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

বিগত কয়েক বছর দেশে শীতের তেমন কোনো প্রকোপ ছিল না। এ সময়ে অনেকটা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। তবে এবার পৌষের শুরুতেই শীত জেঁকে বসেছে। তার প্রকৃত রূপ নিয়ে দেখা দিয়েছে। শীতে কাঁপছে সারাদেশ। সারাদেশেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজমান। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নিচে নেমে গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণী শীতে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশু। শীতজনিত নানা রোগ-ব্যাধিতে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য শিশু ভর্তি হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। শীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ। সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয়। প্রচÐ শীতের কারণে এসব অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষের কাজে বের হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। একদিকে শীতবস্ত্রের অভাব, অন্যদিকে কাজ করতে না পারায় তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। খাদ্যাভাবও দেখা দিয়েছে। বিগত এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে শীতের তীব্রতায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। শীতার্ত এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তেমন কোনো উদ্যোগ পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। অথচ সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে আরো আগেই শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ ছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের আবহাওয়া এখন উলট-পালট হয়ে পড়েছে। গরমের সময় অস্বাভাবিক তাপমাত্রা, বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টি, শীতে কখনো গরম, কখনো তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। এবার পৌষের শুরুতেই যেভাবে শীত পড়া শুরু হয়েছে, তা আরও অনেক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। শীতের সাথে বৃষ্টি যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি শোচনীয় আকার ধারণ করতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আগামী শুক্রবার থেকে আবার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। যদি তাই হয়, তবে পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করবে। এ অবস্থায় দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে যেতে পারে এবং তা প্রলম্বিত হবে। ঠান্ডাজনিত রোগ বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর্মের ব্যাঘাত হবে। এতে এক মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তীব্র শীতের সাথে সারাদেশে ঘন কুয়াশাও ছড়িয়ে পড়েছে। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে কয়েক হাত দূরের পথও দেখা যায় না। এতে দিনের বেলা সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে কোনোরকমে চলতে হচ্ছে। কুয়াশার কারণে নৌ, ট্রেন, ফেরী চলাচল থেকে শুরু করে বিমানের ওঠা-নামাও ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার ফেরী ও বিমান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। শীতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। তারা না পারছে ঘর থেকে বের হতে, না পারছে কাজ করতে। এর প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে। শ্রমিকের সংকট দেখা দেয়ায় মালামাল পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘন কুয়াশার কারণে সূর্য ঢেকে যাওয়ায় এর কিরণ মাটিতে পৌঁছতে না পারার কারণে শীত তীব্র হয়ে উঠছে। বিভিন্ন রবিশস্য ও বোরো ধানের বীজতলাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের কারণেই শীতের এই অস্বাভাবিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাবিশ্বেই এই পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। একদিকে ইউরোপসহ এশিয়ায় প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ছে, অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে তীব্র গরমে পুড়ছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তন আমাদের দেশেও ক্রমে তীব্র হয়ে উঠছে। যতই দিন যাবে আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিস্থিতি আমাদের গ্রাস করবে। এজন্য যথাসময়ে প্রস্তুতি নেয়া দরকার। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্যোগ না নিলে আগামী বছরগুলোতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। দেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহে সাধারণ মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। মাঝারি বা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে কী অবস্থা হবে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই।

আমাদের দেশে মৃদু, মাঝারি বা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায় না। অথচ আবহাওয়া যেভাবে দ্রæত বদলে যাচ্ছে, তাতে শীত মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেয়া দরকার। ঝড়-ঝঞ্ঝা ও বন্যা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেলেও শীতার্ত মানুষকে রক্ষায় তা পরিদৃষ্ট হয় না। শীত অনেকের কাছে উপভোগ্য হলেও দরিদ্র মানুষের জন্য তা অত্যন্ত কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। তাদেরকে একদিকে শীত নিবারণ অন্যদিকে খাদ্য সংস্থান করতে হয়। দেখা যায়, শীতের কারণে অনেকে কাজ করতে পারে না, খাদ্যেরও সংস্থান করতে পারে না। শীর্তাত মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে সবার আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। শীতাক্রান্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ থেকে শুরু করে আপদকালীণ খাদ্যসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ কাজ সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সামাজিক সংগঠন, বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিৎ। মানবসেবা ও মানবিক মনোভাব নিয়ে যথাসময়ে পাশে দাঁড়ালে শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন