Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শার্শায় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ধুম

বেনাপোল অফিস : | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

অনেক আগেই শুরু হয়েছে ইট তৈরির মৌসুম। এরই মধ্যে অনেক ইটভাটায় মাটি ফুরাতে শুরু করেছে। তাই শার্শা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। নির্বিচারে আবাদি জমি থেকে মাটিকাটার ধুম পড়লেও যেন দেখার কেউ নেই। যে যেখান থেকে পারছে স্ক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। জমির ওপরের অংশ (টপ সয়েল) ইটভাটায় যাওয়ায় জমির ঊর্বরতা হারাচ্ছে। এতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। নষ্ট হচ্ছে মাঠে মাঠে জমির উর্বর শক্তি আর জীববৈচিত্র। বর্ষাকালে উম্মুক্ত ধানী জমিগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও সেখানে রোপা-আমন ও উঁচু জমিতে ইরি-বোরো ধান হয় বছরজুড়ে। নিম্নাঞ্চলের পানিতে পাওয়া যেত দেশি প্রজাতির নানা রকমের সুস্বাদু মাছ। এ জনপদের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছের লোভে নানা প্রজাতির পাখি এসে বিচরণ করতো। ইটভাটার মালিকদের ফসলি জমি থেকে মাটিকাটার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতনরা।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল অনাবাদি জমি বাদে প্রায় আবাদি ২৭ হাজার ৬শ ১১হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। শ্রেণি ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরনের ফসল চাষ করে কৃষক। কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণির কৃষক ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারে কোনো খরচ ছাড়াই প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) মাটি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রয় করায় এক থেকে তিন ফুট গর্ত করে প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০ হাজার টাকার মাটি বিক্রয় করছে কৃষক। ফলে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে আবাদি কৃষি জমি থেকে মাটি খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। অন্য দিকে ঊর্বর শক্তি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়াসহ সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-বড় স্থায়ী পানিবদ্ধতা।
উপজেলার দক্ষিণ বুরুজ বাগান, সরুপদহ, গাতিপাড়া, সম্মন্ধকাঠি, শ্যামলাগাছী, নিজামপুর, কাগজপুকুর, মাটিপুকুর, লাউতাড়া, শার্শা, উলাশী, বাগআঁচড়া, গোগা, কায়বাসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে অবাধে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার প্রভাবে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শুধু ইট ভাটায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রয় করার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪শ হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ কম হবে, এমনটাই বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
ইটভাটা মালিকরা বলছেন, নদী ও পরিত্যক্ত স্থানের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করা হয়। তবে নদীর মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি থাকায় ইট ভালো হয় না। এ মাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণ ফসলি জমির মাটি মিশিয়ে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
শার্শা উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অমল কৃষ্ণ জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগের মাটিতে (টপ সয়েল) যে জীপসাম বা দস্তা থাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া মাটিতে যে জীবানু থাকে তা অনুজীবের কার্যাবলি সীমিত হয়ে যায়। মাটির জৈবশক্তি কমে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়বে। ঊর্বর শক্তি কমে যাওয়ার ফলে এ জমিতে আর আশানুরুপ ফলন হবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে সার্বিক উৎপাদনে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
শার্শা ইউএনও পুলক কুমার মন্ডল বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র নেয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধুম

২৪ জানুয়ারি, ২০২২
১৯ অক্টোবর, ২০২১
১৯ জুলাই, ২০২১
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
৫ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ