পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ক্ষণজন্মা মানুষ স্যার ফজলে হাসান আবেদকে বনানীর কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। এর আগে আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বস্তরের মানুষ মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা জানান। সেখানে তার নামাজে জানাজায় শরীক হন হাজার হাজার মানুষ। নামাজে জানাজায় শরীক হয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এই মহীরুহকে বিদায় জানাতে এসে অনেকেই কেঁদেছেন। মহামান্য প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীও তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয়। অতঃপর সাদা ফুলে ফুলে ভরা লাশ নিচে নামানো হয়। শ্রদ্ধা জানাতে আগে থেকেই স্টেডিয়ামে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজন অপেক্ষায় ছিলেন। মরহুমের প্রতি প্রথমে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেজর আশিকুর রহমান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে উপসামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফুল্লাহ শ্রদ্ধা জানান। অতঃপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ একে একে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানান। দুপুর পৌনে ১টায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্রদ্ধা জানান। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এছাড়া দেশের শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব, মানবাধিকারকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
নামাজে জানাজার আগে আর্মি স্টেডিয়ামে মরহুম স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতিচারণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আবেদের বিদায়ে কতটা মর্মাহত হয়েছি, তা বলে শেষ হবে না। এটা দেশের জন্য বিরাট শ‚ন্যতা। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তার কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তিনি স্যার আবেদের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি প্রতিটি বিষয়ের গভীরে গেছেন এবং ব্যাপ্তি সৃষ্টি করেছেন। এটা করতে গিয়ে তাকে বহু প্রতিষ্ঠান জন্ম দিতে হয়েছে। তার অবদান হলো তিনি এসব প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন এর সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার সিস্টেমটাও সৃষ্টি করেছেন। হাজার হাজার যুবকের কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে যে একটা বার্তা দেয়া যায় এবং পরিবর্তন আনা যায় সেটাও আবেদ প্রমাণ করেছেন। ওরাল স্যালাইন এর বড় প্রমাণ। বাংলাদেশে এখন আমরা এর উপকার দেখছি। তিনি একক ব্যক্তি হিসেবে সম্প‚র্ণ নিজের চেষ্টায় সবকিছু করেছেন। এটা একটা বড় দৃষ্টান্ত হবে আমাদের জন্য। স্যার আবেদের মৃত্যুতে যে একটি গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তাকে সামাল দেয়ার জন্য একযোগে কাজ করার এবং আবেদ-প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখার আহŸান জানান তিনি।
বাবার জন্য দোয়া কামনা করেন ফজলে হাসান আবেদের ছেলে শামেরান আবেদ বলেন, আমার বাবা সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। উনি যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকেন আপনারা ক্ষমা করে দেবেন। আপনার আমার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন এ জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
স্যার আবেদের জন্য রাখা শোক বইয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম লেখেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ সারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করেছেন। সারাজীবন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করে। তার প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সুন্দরভাবে চলে, আমরা সেই কামনা করি।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ গত শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধী অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।