Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপাকে গ্রাহক

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সেবা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ফারিহা ইয়াছমিন (ছদ্মনাম) স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের একজন গ্রাহক। নিজে ব্যাংকে যেতে পারছেন না বলে ড্রাইভারকে চেক বই দিয়ে ২০ হাজার টাকা উঠানোর জন্য ব্যাংকের বনানী ব্রাঞ্চে পাঠান। নিময় অনুযায়ী ব্যাংকে গিয়ে টাকা উঠানোর জন্য চেক জমা দিলে তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চাওয়া হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেয়ার পর হাতে একটি ইংরেজী ফরম পূরণ করার জন্য ধরিয়ে দেয়া হয়। ইংরেজী ফরম দেখে স্বশিক্ষত ওই ড্রাইভার বিপাকে পড়েন। কারণ তিনি ইংরেজী লিখতে-পড়তে পারেন না। প্রথমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে কথা বলার মতো পরিস্থিতি তিনি তৈরি করতে পারেননি। এমনকি ব্যাংকে তাকে সহায়তা করার মতো কোনো ডেস্কও ছিল না। অন্যান্য গ্রাহকেরও সাহায্য পাচ্ছিলেন না। এভাবে প্রায় ২ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর পরিচিত একজনের মাধ্যমে ওই ইংরেজী ফরম পূরণ করে টাকা তুলেন তিনি।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে এভাবে বিপাকে পড়ছেন অনেক সাধারণ গ্রাহক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক জানান, আমি ইংরেজী জানি। তবে ফরম পূরণ করার মতো ইংরেজী লেখার ক্ষমতা আমারও নেই। তাই ব্যাংকে একটি পৃথক ডেস্ক এবং ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলায় ফরম রাখতে পারতো ব্যাংক। তাহলে গ্রাহকরা সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারতো।
অপর এক গ্রাহক জানান, এখানকার ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে সহযোগিতা করার মনোভাবও খুবই কম। তবে ভিআইপি গ্রাহক হলে ঠিকই সবকিছু করে দিতো কর্মকর্তারা। তিনি জানান, ইংরেজী লেখা ফরম মানে ব্যাংকের ধারণা সব গ্রাহকই ভিআইপি হবে। তাই সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এই ব্যাংকে সেবা পাওয়ার সুযোগ কোথায় রইলো প্রশ্ন রাখেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকিং সেবা হবে গ্রাহকবান্ধব; কিন্তু গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে, যা দুঃখজনক। গ্রাহক হয়রানি বন্ধে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকদের সেবার জন্য পৃথক ডেস্ক রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। তাদের মতে, টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ব্যাংকিং প্রক্রিয়া সহজসাধ্য করতে হবে। অহেতুক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্ত করতে হবে।
অবশ্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিটপি দাস চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, গ্রাহক স্বার্থই আমাদের ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংকে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সেবাগ্রহীতাদের বাংলা ও ইংরেজি দুটোই ফরমই আছে। হয়তো ভুলক্রমে ওই গ্রাহককে ইংরেজীটা দেয়া হয়েছে। তবে গ্রাহক চাইলে বাংলা ফরম দেয়া হতো। একই সঙ্গে যে ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করেছেন গ্রাহক তার কাছ থেকেই সাহায্য নিতে পারতেন বা ওই কর্মকর্তারই সাহায্য করা দরকার ছিল গ্রাহককে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। কারণ বিদেশি ব্যাংক হলেও আমাদের গ্রাহক বাংলাদেশি। তাই বাংলা ফরম প্রদানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে উল্লেখ করেন বিটপি দাস চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নানা সীমাবদ্ধতায় সকল গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা এখনো সম্ভব হয়নি। তাই দেশের ব্যাংকি সেবা এখনো মূলত ব্যবহার করছে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং বড় ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। গত কয়েক বছর থেকে দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক খাত সম্পর্কিত সব নীতিমালায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিছু ব্যাংকের বিশেষ দক্ষতায় সামগ্রিক অবস্থার উন্নতিও হয়েছে। তবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এ রকম বিষয়টি আমাদের জানা নেই। বিদেশি ব্যাংক হলেও বাংলাদেশে যেহেতু সেবা দিচ্ছে তাই তাদেরও সকল গ্রাহকের স্বার্থ দেখতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, গ্রাহক হয়রানি রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক এফআইসিএসডি বিভাগ চালু করেছে। ওখানে অভিযোগ করলে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশে তফসিলি ব্যাংক রয়েছে ৫৯টি। এতগুলো ব্যাংক থাকার পরও ব্যাংক হিসাবধারী ও সেবা গ্রহণের হার পাশর্^বর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন-ভাতা গ্রহীতার সংখ্যা এখনো ২ শতাংশেরও কম। সেবা গ্রহণের হার মাত্র ৩১ শতাংশ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অন্যতম লক্ষ্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের পরও ব্যাংকগুলোর গ্রাহকবান্ধব মানসিকতার অভাবে মানুষকে ব্যাংকমুখী করা যাচ্ছে না। আর এ কারণে দেশের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার স্পর্শে এসেছে। অথচ শ্রীলংকায় এখন ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষের ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই হার ৫৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে ওই সময়ে গঠন করা হয় গ্রাহক স্বার্থসংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি)। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকের সেবা পেতে কোনো ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলেই গ্রাহকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইসিএসডি বিভাগে অভিযোগ করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবসায়ে নিয়োজিত একটি বিদেশি ব্যাংক। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ এই ব্যাংকটি বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ