পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগতম, অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ। দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে নবম বারের মতো পুন:নির্বাচিত হয়েছেন তিনি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায়। বিগত প্রায় ৩৯ বছর তিনি দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২১তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে পুনরায় সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আরো তিন বছর তিনি একই অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। আওয়ামী লীগ কেন, আমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক দলেরই এত দীর্ঘ সময় কেউ সভাপতি বা সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেননি। এদিক দিয়ে তিনি এক বিরল রেকর্ড গড়েছেন। একইভাবে তিনি রেকর্ড গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও। তিনি চার বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এবং বর্তমানে টানা তিন বারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে আমাদের দেশে আর কোনো রাজনৈতিক নেতা এত বছর প্রধানমন্ত্রী থাকেননি। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হিসাবে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালনের ফলে শেখ হাসিনা এক কিংবদন্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। দেশের ও দলের জন্য তিনি নিজেকে অবিকল্প ও অপরিহার্য হিসাবে পরিগণিত করেছেন। ব্যক্তিত্ব, নেতৃগুণ, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতায় তার সমকক্ষ খুঁজে পাওয়া ভার। এক্ষেত্রে তিনি একক, অনন্য, অসাধারণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার নাম-যশের কমতি নেই। তিনি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একজন দক্ষ-অভিজ্ঞ নেতা হিসাবে প্রশংসিত। সঙ্গতকারণে আমরা তাকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই। তার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পুনরায় দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হবেন, তা সবার জানা থাকলেও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ওবায়দুল কাদের পুন:নির্বাচিত হবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল। তিনি কিছুদিন আগে গুরুতর দৈহিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সফল চিকিৎসার পরও আওয়ামী লীগের মত ক্ষমতাসীন একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালনে তার দৈহিক সক্ষমতা কতটা অনুকূল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তাছাড়া নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রশ্নও নানা দিক দিয়ে উঠেছিল। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ওবায়দুল কাদেরই সম্ভাব্য সবাইকে পেছনে ফেলে সাধারণ সম্পাদক পুন:নির্বাচিত হয়েছেন। এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয় বারের মত দলের সাধারণ সম্পাদক হলেন। তার জন্য এটা অবশ্যই গৌরবজনক। দলের জন্য তার প্রয়োজন যে সমাধিক ছিল, তা বলাই বাহুল্য। রাজনীতির চর্চা ও অনুশীলনের দিক দিয়ে তার দীর্ঘ পদযাত্রার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ মুর্হূতে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনিই যোগ্যতম ব্যক্তি হিসাবে প্রতিভাত হয়েছেন! দলের সভানেত্রী এবং কাউন্সিলরগণ যোগ্যতমকেই সম্মানিত করেছেন, দায়িত্ব পুনরায় তার হাতে তুলে দিয়েছেন। আমরা তাকেও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য প্রত্যাশা করি। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২১তম জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিলে দলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোনো চমকও নেই। পুরোনোদের দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছে। সামান্য কিছু এদিক-ওদিক হয়েছে। এটা তেমন ধর্তব্য বা আলোচ্য বিষয় নয়। দলের সফল জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানে যারা নানাভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাও ধন্যবাদার্হ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। তিনি দেশের ও দলের দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে যেমন উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন তেমনি দলকেও সুনিয়ন্ত্রিত ও শক্তিশালী করে তুলেছেন। উভয়ক্ষেত্রে তার দক্ষতা সক্ষমতা, প্রভাব, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অসাধারণ। তার তুলনা তিনি নিজেই। একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, জাতীয় উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠার যে পথনকশা তৈরি করা হয়েছে, তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এ পথনকশা তৈরি করেছেন এবং তার পক্ষেই কেবল সুচারুরূপে এর বাস্তবায়ন সম্ভবপর হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল অধিক সহযোগিতা দিয়ে ভূমিকা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে দলকে আরো সুগঠিত, সুশৃংখল, আদর্শানুগত এবং দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তাচারমুক্ত করার বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার পক্ষেই এ কাজটি করা সবচেয়ে সহজ। সামনে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি। এ দুটি উপলক্ষকে সামনে রেখে সরকার ব্যাপক কর্মসূচী নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শের বাতিঘর। অন্যদিকে স্বাধীনতার আকাঙ্খাসমূহের বাস্তবায়ন আমাদের প্রতিজ্ঞা। এটা ঠিক যে, স্বাধীনতার আকাঙ্খা ও আমাদের প্রতিজ্ঞা আমরা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। নির্ভেজাল গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সর্বত্র সুশাসন, সামাজিক সুবিচার, অর্থনৈতিক সমতা, ইসলামী মূল্যবোধশাসিত শান্তিপূর্ণ সমাজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। পক্ষান্তরে দেশে ও সমাজে অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, অনিয়ম, দুর্বৃত্তচার, দমন-পীড়ন, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ, ইত্যাদি ছেয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির অবসান ব্যতীত দেশ ও মানুষের কাম্য উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধিত হওয়া সম্ভবপর নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি একটি দুর্নীতিমুক্ত, সহৃদয় ও কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক, সৃষ্টিশীল ও অভয় সমাজ সকল উন্নয়নের চাবিকাঠি। শেখ হাসিনার কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আশা করি, এ প্রত্যাশা পূরণে তিনি সফলকাম হবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।