২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ডায়াবেটিস একটি সর্বোগ্রাসী শারীরিক সমস্যা, যা শরীরের প্রায় প্রতিটি অংগ প্রতঙ্গকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ডায়াবেটিসের রোগীরা মানসিক ভাবেও আক্রান্ত থাকেন। ডায়াবেটিস শরীরের কোষগুলোর বহুবিধ পরিবর্তন সাধিত করে, যা ক্রমশ: দীর্ঘ স্থায়ী ও ক্রম: অগ্রসরমান শারীরিক সমস্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্ত প্রশ্ন হলো ডায়াবেটিস প্রজনন স্বাস্থ্যকে কিভাবে আক্রান্ত করে।
প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতি নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে প্রধনতঃ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে, কেউ কেউ টাইপ ১ ডায়াবেটিসে। সাম্প্রতিক কালের অনেকগুলো গবেষণা লব্ধ ফলাফল এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, ডায়াবেটিস বিশেষত; যাদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো নয়, তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসই সন্তান ধারণের প্রধান বাধা। এমনকি প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থাতেও পুরুষ-মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা ঝুঁকিতে থাকে।
ডায়াবেটিস কি ভাবে পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যকে আক্রান্ত করে ঃ
ডায়াবেটিস, সুনির্দিষ্ঠভাবে রক্তের অতিরিক্ত গøুকোজ, পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের প্রায় প্রতিটি অঙ্গকে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ক্ষেত্রে নিয়ামকের ভ‚মিকায় থাকে ডায়াবেটিসের বয়স, ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রণের মাত্রা এবং দৈহিক স্থ’ুলতা। ফলস্বরূপ নি¤œ বর্ণীত কমপক্ষে ৪টি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন: ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের ইরেকটাইল ডিসফাংশন একটি কমন সমস্যা, যা ¯œায়ুবিক কারণে হতে পারে। লিঙ্গে রক্ত সরবরাহ বিঘেœর কারণে হতে পারে অথবা উভয়ের সমন্বিত ফল হতে পারে। ডায়াবেটিসের কন্ট্রোল যত খারাপ থাকে বা যার ডায়াবেটিস যত বেশি দিন যাবৎ থাকে এর মাত্রাও তত বেশি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তের লিপিডের অস্বাভাবিকতা, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান ও শারীরিক শ্রমহীনতা এ অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলতে পারে।
ইজাকুলেটরি সমস্যা : ডায়াবেটিসের রোগীর ইজাকুলেটরির দু’রকমের সমস্যা হতে পারে। ক) ইজাকুলেটরি না হওয়া এবং খ) দু’রকমের ইজাকুলেটরি হওয়া। এ দু’ক্ষেত্রেই পুংলিঙ্গের ¯œায়ুবিক সমস্যা প্রধান ভ‚মিকা রাখে। আক্রান্ত পুরুষটির মানসিক সমস্যাও ভ‚মিকা রাখতে পারে।
নি¤œমানের শুক্রানু : ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ হতে পারে শুক্রাশয় বা অন্ডকোষ। অতিরিক্ত গøুকোজের প্রভাব, যাকে গøুকোজের বিষক্রিয়া বলা যায়, সরাসরি শুক্রানু উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে। আবার যে পরিমাণ শুক্রানু তৈরি হয় তাও আদর্শ গুণগত মান পায় না অর্থাৎ এ পুরুষটির শুক্রানু একটি সুস্থ্য সবল সন্তান উৎপাদনের সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে।
হাইপোগোনাডিজম (টেস্টোসটেরণ হরমোনের ঘাটতি) : প্রতি ৪ জন ডায়াবেটিস পুরুষের কমপক্ষে ১ জন টেস্টোসটেরণ হরমোনের ঘাটতিতে আক্রান্ত। টেস্টোসটেরণ হরমোনটি পুরুষদের প্রধান যৌন হরমোন। এর অভাবে পুরুষের দৈহিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যৌন ক্রিয়ার আগ্রহ কমে যাওয়ায় মানসিক দৃঢ়তা কমে এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে। অর্থাৎ টেস্টোসটেরণ ঘাটতি আক্রান্ত পুরুষের সামগ্রীক প্রজনন ক্ষমতাকে ব্যাহত করে।
প্রকৃত পক্ষে: ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের অতিরিক্ত গøুকোজ (হাইপারগøাইসেমিয়া) শুক্রানুর ডিএন’এর স্থায়ী পরিবর্তন করে যা এ শুক্রানুর মান নি¤œমুখী করে দেয়। অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীর প্রজনন ক্ষমতার মূল জায়গাটিতেই মারাত্মক রকম ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের মাঝে যারা সন্তান নিতে সক্ষম হননি এবং অথবা যারা ভবিষ্যতে সন্তান নিতে আগ্রহী তাদের ক্ষেত্রে এখনি সতর্ক হওয়া জরুরি। ডায়াবেটিসের সকল রোগীর ক্ষেত্রেই করণীয় কর্মকান্ডের শীর্ষে থাকে ডায়াবেটিসের কাঙ্খিত নিয়ন্ত্রণ। এই ক্ষেত্রে আরো সুকঠোরভাবে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যা পরবর্তী সকল সময়ে বজায়ও রাখতে হবে। এ সকল পুরুষের একই সাথে অন্য আরো কিছু শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে সেগুলোকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। তবে, ডায়াবেটিসের পুরুষ তার নিজের দৈহিক জটিলতা কমাতে তো বটেই সন্তান নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের আদর্শতম পদ্ধতির আশ্রয় নিবেন (কোন একজন দক্ষ ও হরমোন বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো সাহায্য করতে পারেন), দৈহিক স্থ’লতা হ্রাসসহ শারীরিক অন্যান্য প্যারামিটারের উন্নতি সাধন করতে হবে, ধূমপান ত্যাগ করতে হবে এবং তারপরও কোন কোন ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির সাহায্য নিতে হতে পারে। ।
ডায়াবেটিস কি ভাবে মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্যকে আক্রান্ত করে ঃ
ডায়াবেটিস মহিলাদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা অর্ধেকে নামিয়ে আনে। আর যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং চতুর্থ দশকে এসে সন্তান ধারণ করতে চাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরো ব্যাপক।
বিপুল সংখ্যক মেয়ে (বয়স ১৫-৪৫ এর মধ্যে প্রধানত:) পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে ভুগছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এর প্রাবল্য ও গভীরতা ব্যাপক। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর যুবতিদের অন্তত: ৪০ শতাংশ এদের ৪০ বছর বয়স হবার আগেই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন। কিন্তু, ভাবনার বিষয় হলো, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নিজে মহিলাদের বন্ধাত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এসব মহিলার ডায়াবেটিস হলে দুয়ে মিলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরো বেশি।
যে সকল মহিলা ডায়াবেটিস নিয়েই গর্ভধারণের কথা ভাবছেন, তাদের জরুরি ভিত্তিতে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ নিখুঁতই করণ করা জরুরি। যাদের ডায়াবেটিস নেই বলে ভাবছেন, এমনকি তাদেরকেও গর্ভধারণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডায়াবেটিস স্ক্রিন করা উচিৎ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলোর মধ্যে থেকে প্রাক গর্ভ ধারণ সময় কালের জন্য উপযোগী ওষুধগুলো চিকিৎসক আপনাকে নির্বাচন করে দিবেন। কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকেই প্রাধান্য দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলা, পরিমিত শারীরিক শ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলো (জর্দ্দা, গুল, সাদা পাতা ও ধূমপান)। ডায়াবেটিস নিয়েও যেসব মহিলা সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা দ্রæত একজন প্রসুতিবিদ ও হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন। কারো কারো কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।
ষ ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
ফোন: ০১৯১৯০০০০২২
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।