২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ভ‚-গর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দূষণ এবং মানবদেহে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াজনিত ব্যাধি একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিক দূষণের সমস্যা ভয়াবহ। ভ‚গর্ভস্থ পানির এ দূষণের কারণ ভ‚-তাত্বিক। এ দূষণ সাধারণতঃ ভ‚-গর্ভের দ্বিতীয় স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পানিতে আর্সেনিকের পরিমান লিটার প্রতি ১০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত থাকলে তাকে বিপদমুক্ত বলে চিহ্নিত করেছে। তবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কিছু উন্নয়নশীল দেশে এ মাত্রা লিটার প্রতি ৫০ মাইক্রোগ্রাম ধার্য হয়েছে।
অনেক দিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে যে অসুস্থতা দেখা যায় তার নাম আর্সেনিকোসিস। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে এ ধরণের আর্সেনিক বিষক্রিয়া সারা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাছাড়া আর্সেনিক দূষণজনিত শারীরিক অসুস্থতার প্রকাশও অনেক জটিল ও অসহ্য। এর আগে আর্সেনিক দূষিত পানি পান করে যেসব দেশের মানুষের অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল সে দেশগুলো হলো- পূর্ব এশিয়ার তাইওয়ান এবং চীন দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, আর্জেন্টিনা, ইউরোপের হাঙ্গেরী, জার্মানী এবং উত্তর আমেরিকা ইত্যাদি। ঐসব অঞ্চলে অসুস্থতার লক্ষণ ছিল শরীরের চামড়ার উপর ছোট ছোট কালো দাগ এবং হাত ও পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া। কিছুদিন এভাবে থাকার পর কোন কোন রোগীর চামড়াও প্রস্রাবের থলিতে ক্যান্সার আক্রমন পরিলক্ষিত হত। এছাড়া কারো কারো লিভার ও ফুসফুসের ব্যাধিও দেখা দিত। ফুসফুসের অসুখে কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। দূর্বলতা ও শ্বাসকষ্টের ফলে অনেকে ভালভাবে কাজকর্ম করতে পারেনা। শরীরে দূর্বলতাও দেখা দেয়।
আর্সেনিক দূষণের জন্য সচরাচর চামড়ায় যে ক্যান্সার বা ঘা হয় তা অল্প অবস্থায় ধরা পড়ে গেলে অপারেশনের মাধ্যমে সেরে যায়। তবে সুষম ও সুপাচ্য খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। ভাল পরিমানে ভাত ও মুড়ি ছাড়া ও অন্ততঃ একবেলা রুটি খাওয়া উচিত। তাছাড়া প্রতিদিন সম্ভব নাহলে সপ্তাহে অন্ততঃ ২/৩ দিন মাছ, ডিম বা দুধ খাওয়া প্রয়োজন। কারণ দেখা গেছে যে আমিষ ঘটিত প্রোটিনের অভাবে আর্সেনিকোসিস রোগ বেশি প্রকাশ পায়। অঙ্কুরিত ছোলা বাদাম, সয়াবিন, বিভিন্ন প্রকার ডাল, গাজর, শাকসব্জি স্বল্প ব্যয়ে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও প্রোটিন যোগান দেয়। আর্সেনিকোসিস রোগ সম্বন্ধে বহু মানুষের মনে অনেক অবৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন ভ‚ল ধারণা আছে। আর্সেনিক দূষণের প্রতিক্রিয়ায় যে চর্মরোগ দেখা দেয় সে সম্বন্ধে এমন বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে আর্সেনিকোসিস হচ্ছে ছোয়াচে অথবা কুষ্ঠ রোগের মতই একটা রোগ। এ ধারণার মারাত্মক সামাজিক প্রভাব আছে বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের উপর এর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।
আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে কোন কোন মানুষের হাত ও পা ঝি ঝি করতে থাকে। শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। পেটের বিভিন্ন অসুস্থতা যেমন পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদিতেও কোন কোন মানুষ কষ্ট পায়। কারো কারো চোখ লাল হয়ে যায়, মাথায় যন্ত্রণা করে। আবার কারো কারো হাত পা ফুলতে থাকে। রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার জন্য পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভ‚ত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পায়ের আঙ্গুল শুকিয়ে ক্ষত হতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করলে চামড়া, মূত্রাশয় বা ফুসফুসে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
যারা অপুষ্টিতে ভুগেন তাদের মধ্যে আর্সেনিকোসিস অসুখের প্রকাশ বেশী করে ধরা দেয়। আর্সেনিক দূষিত পানি পান বন্ধ করলে আবার ধীরে ধীরে আর্সেনিকোসিস অসুস্থতা অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। প্রত্যেক মানুষের উচিত খাবার পানি আর্সেনিকের দূষণে দূষিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। জনস^াস্থ্য বিভাগ পানি পরীক্ষা করে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাও এ কাজে নিয়োজিত আছে। পানি পরীক্ষা করে দেখতে হবে আর্সেনিকের পরিমাণ যেন প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশী না থাকে। সবগুলো নলক‚পের পানিই পরীক্ষা করে ব্যবহার করা উচিত।
এদিকে পুকুরের পানি জীবাণুমুক্ত করার জন্য বিøচিং পাউডার বা ক্লোরিন ড্রপ দিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে জনস^াস্থ্য বা স্যানিটারী বিভাগের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে পুকুরের পানি কিভাবে জীবাণুমুক্ত করা যায় তার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। একইভাবে পাতকুয়া কেটে সে পানি জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার এটাও মনে রাখা দরকার যে আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই সে পানিও জমা করে ব্যবহার করা যায়। তবে সকল ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।