পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় চীনা নাগরিক গাও হুইকে হত্যা করে আব্দুল রউফ ও এনামুল হক। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত দুইজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন কথা স্বীকার করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিমনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।
চীনা নাগরিক হত্যায় গুলশান গ্রেফতারকৃত দুইজনকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন। বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফজলুল হক আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
ডিএমপির (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন আরো বলেন, চীনা নাগরিককে হত্যার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে বনানী থেকে ওই বাসার দুই দারোয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ড ঘটানোর পরও তারা ওই বাসায় চাকরি করে আসছিল। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে চীনা নাগরিকের ব্যবহৃত একটি ভাঙ্গা মোবাইল, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত গামছা, বালতি, লাশ মাটিচাপা দেওয়ার জন্য গর্ত খোঁড়ার কাজে ব্যবহৃত কাঠের টুকরা এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত দুজন বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ৮২ নম্বর বাসার সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিল। তারা ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে বাস করত। ওই দুজন একত্রে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ওই বাসায় বসবাসকারী বিত্তবান লোকদের জীবনযাত্রা দেখে আর নিজেদের দৈন্যদশা দেখে হতাশাগ্রস্ত হয়।
এক পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় কীভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় তা ভাবতে থাকে। ওই ভাবনা থেকেই কয়েকদিন আগে রউফ প্রস্তাব দেয় যে, চীনা নাগরিক গাও হুই অনেক বড় ব্যবসায়ী, অনেক টাকা পয়সা নিয়ে চলাফেরা করে এবং ফ্ল্যাটে একা থাকে। তাকে শেষ করে দিয়ে যা নেওয়া যাবে, তা দিয়ে জীবনে কিছু করা যাবে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। এদিকে তারা নিশ্চিত হয় যে, বিল্ডিংয়ে সিসিটিভি ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ড হয় না। কারণ, সেটির হার্ডডিস্ক নেই। গত ৬ ডিসেম্বর একবার তারা গাও কে হত্যার চেষ্টা করে। ওইদিন তারা সন্ধ্যায় চীনা নাগরিক গাও এর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে কলিং বেল দেয়। কিন্তু ভেতর থেকে কেউ দরজা না খোলায় ভয়ে তারা আবার ফিরে আসে। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর তারা পুনরায় পরিকল্পনা করে যে, ওইদিনই কাজ শেষ করতেই হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এনামুল তার নিজের ব্যবহৃত গামছা সাথে নিয়ে যায়। মাগরিবের আযানের পরপরেই তারা গাওয়ের ফ্ল্যাটের সামনে যায় এবং রউফ কলিং বেলে চাপ দেয়। গাও দরজা খুলে ওদের দিকে বিস্ময়ে তাকায়। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষার একটিও জানতেন না। তবে ইশারায় জানতে চাচ্ছিলেন যে, কি বিষয়? তখন এনামুল বলে, ওয়াটার ওয়াটার। মানে বুঝাতে চায় যে তারা পানি খাবে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঘরে ঢোকার পর ্এনামুল গাওয়ের গলায় গামছা পেচিয়ে ধরে এবং রউফ কোমরের দিকে জাপটে ধরে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে গাও রউফয়ের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে কামড় দেয়। এরপরও তারা ২/৩ মিনিটের মধ্যে চীনা নাগরিকের মৃত্যু নিশ্চিত করে। ফ্ল্যাটের ভেতরে ড্রয়িং রুমের টেবিলের ওপরে গাওয়ের ল্যাপটপ খোলাই ছিল। পাশেই ছিল সার্বক্ষণিক সঙ্গে থাকা ছোট একটি ব্যাগ। রউফ ওই ব্যাগটি খুলে সেখানে থাকা ৩টি এক হাজার টাকার বান্ডিল, কিছু খুচরা টাকা ও মোবাইল নিজেদের হেফাজতে নেয়।
তিনি বলেন, এরপর লাশটি ড্রয়িং রুমে নিয়ে গামছা দিয়ে রক্ত মুছে বের হয়ে ছাদে চলে যায়। ছাদে যাওয়ার পর গামছা ধুয়ে ও নিজেরা গোসল করে একসাথে দুজন বের হয়ে যায়। পরে তারা টাকাগুলো গণনা করে ভাগ করে নেয়। এর মধ্যে রউফ নেয় এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা আর এনামুলকে দেয় এক লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এর পর তারা বনানী সুপার মার্কেটের পাশে একটি চায়ের স্টলে বসে চা পান করে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, রউফ সুপার মার্কেটের আশেপাশে থাকা তিনটি বিকাশের দোকান থেকে বিকাশের মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়িতে বন্ধু হাসানের কাছে এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। এনামুল চারটি বিকাশের দোকান থেকে তার নিজের বিকাশে ৫০ হাজার টাকা, এলাকার বড় ভাই করিমের (মিরপুরে বাসাবাড়ির ম্যানেজার) কাছে ৫০ হাজার টাকা, বন্ধু শাহীনের কাছে ৪০ হাজার হাজার টাকা এবং তার মেজো ভাবীর কাছে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়।
ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে রউফ সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ডিউটি করে। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে রউফ বিল্ডিংয়ের পেছনের দিকে কাঠের টুকরো দিয়ে বালু মাটিতে একটি গর্ত করে। পরে সে উপরে উঠে এনামুলের সহায়তায় লিফট ব্যবহার করে ভিকটিমের লাশ মাটি চাপা দেয়। পরের দিন গাওয়ের ড্রাইভার ও কাজের বুয়া তাকে বাসায় না পেয়ে এবং তার ব্যবহৃত সেন্ডেলে রক্তের দাগ দেখে খোঁজাখুঁি শুরু করে। একপর্যায়ে ড্রাইভার সুলতান বিল্ডিংয়ের পেছনে মাটিচাপা অবস্থায় পায়ের গোড়ালি দেখে এবং পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য, গাও হুই একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ওই ফ্ল্যাটে দীর্ঘ এক বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি চীন থেকে পাথর ও নিমার্ণ সামগ্রী আমদানি করে পদ্মাসেতু ও পায়রাবন্দরে সরবরাহ করতেন বলে ডিবি পুলিশ জানতে পেরেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।