Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দারিদ্র্য হার ২০ শতাংশে : জানুয়ারিতে এক অঙ্কে সুদ হার

৩৮৪০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকগুলোতে সুদের হার এক অঙ্ক (১০ শতাংশের নিচে) কার্যকর হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে ব্যাংক মালিকরা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ প্রতিশ্রুতি বিনিময়ে ব্যাংক মালিকরা সরকারের কাছ থেকে নানান সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু ঋণের সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন এখনও অধরাই রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে সার্কুলার ইস্যু করেনি। তাদের একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম সেই কমিটি কাজ শেষ করেছে। ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি, সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন ইস্যু করবে। সে প্রজ্ঞাপনে সবকিছু থাকবে, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কাজ করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্টেকহোল্ডারদের সাথে কয়েক দফা বসে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কমিটি কি সুপারিশ করেছে, জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি যেহেতু সুপারিশ করেছে তাই এটি পাবলিক হয়নি, পাবলিক হলে জানতে পারবেন, গোপন রাখবো না কিছু। সারা বিশ্বে কোথাও এতো হাই রেটে ইন্টারেস্ট নেই, সামঞ্জস্য করে চলতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘১ জানুয়ারি থেকে চেষ্টা করছি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আক্ষরিক অর্থে হবে... পরে দেখা যাবে সাত দিন পর হলো। এর মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন করবে এবং সবাই তো রেডি।’
১ জানুয়ারি থেকেই সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সিঙ্গেল ডিজিট ঠিক থাকবে। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকেই হবে, এর মধ্যে আশা করি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার ইস্যু করবে এবং ইস্যু করলেই সবাই তো রেডি, ইস্যু করলেই কাজ শুরু করতে পারবে। শুরু করলেই ফলাফল দেখতে পারবে।
গত ১ ডিসেম্বর সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কৌশল ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন হলে অনেক কাজ করতে সহজ হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তারা বলছে সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। যারা ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এ প্রচেষ্টা। তারা টাকা নিয়ে টাকা শোধ করেনি তাদের জন্য নয়। সুদের হার সবার জন্য এক হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২ শতাংশ দিয়ে যারা রেজিস্ট্রেশন করছে তাদের জন্য একরকম, আবার যারা ভালো তাদের জন্য আলাদা প্রক্রিয়া থাকবে। যারা ঋণ খেলাপি তাদের বলা হতে পারে তোমরা অর্ধেক টাকা দিয়ে স্বাভাবিক হও।
সরকারের আমানত ৪০ শতাংশ ব্যাংকগুলোতে দেবে বলে আগেই সিদ্ধান্ত রয়েছে জানিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন এটা বাড়ানো হবে কিনা আবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে গিয়ে দেখব ৫০ ভাগ করা যায় কি-না।’
উল্লেখ্য, বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ ও আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী মহলের দাবি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে ৯ ও ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে তাগাদা দেয়া হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রায় দেড় বছরে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে সরকারি-বেসরকারি মিলে মাত্র ১১টি ব্যাংক। এখনও বেসরকারি খাতের ৩৭ ব্যাংকের ঋণের সুদহার ১২-২০ শতাংশের ঘরে।
এদিকে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এ চাহিদা পূরণে সরকার দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যু উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এরই অংশ হিসেবে নেপাল থেকে ২৫ বছর মেয়াদে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবসহ ৫টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৮ হাজার ৪০৫ কোটি ৩৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ একটি অপরিহার্য উপাদান। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেশে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা স্থাপন এবং পল্লী এলাকার কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে উদ্যোগের অংশ হিসেবেই নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম পড়বে ৭ দশমিক ৭১৭২ সেন্ট বা বাংলাদেশি টাকায় ৬ দশমিক ৪২৮৪ টাকা। এ হিসেবে ২৫ বছর মেয়াদে এ বিদ্যুতের জন্য মোট ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘বিতরণ ব্যবস্থা ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (রাজশাহী, রংপুর, খালনা ও বরিশাল বিভাগ)’ (সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় পূর্ত কাজের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। দুটি লটের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১০১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে ডিইডিএ-এসএসএল।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)’ (সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের অন্য একটি প্যাকেজের আওতায় পূর্ত কাজের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় হেকোয়ার্টার্স অফিস, রেস্ট হাউজ, জোনাল অফিস, আবাসিক ভবনসহ অন্যান্য পূর্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে যৌথভাবে টিবিইএএল-সিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
এছাড়াও বৈঠকে ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ (১৫ দশমিক ৫ লাখ গ্রাহক সংযোগের সংস্থানসহ ১ম সংশোধন)’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের দুটি লটে ২৯ হাজার ৯৯০ কিলোমিটার কন্ডাক্টর ক্রয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ প্রস্তাবের আওতায় উল্লেখিত পরিমাণ কন্ডাক্টর (এসিএসআর-অ্যালুমিনিয়াম কন্ডাক্টর স্টিল রিইনফোর্সড, বেয়ার এবং ইন্স্যুলেটেড, ৬০০ ভোল্ট) ক্রয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে তাতে মোট ৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাষ্ট্রিজ এই কন্ডাক্টর সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দারিদ্র্য

১৮ নভেম্বর, ২০২২
২৪ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ