Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশি কর্মীদের সঠিক তথ্য নিরূপণ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মী ও শ্রমিকদের কোনো সঠিক তথ্য বা পরিসংখ্যান সরকারী কোনো সংস্থার কাছে নেই। এ কারণে দেশে অবস্থানরত ও বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ কর্মীর সঠিক সংখ্যার কোনো হিসাব না থাকায় তাদেরকে আয়কর ও ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় আনতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দফতর। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাগুলোর অনীহা, দায়িত্বহীনতা এবং অক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিদেশি নাগরিকদের কাজ করতে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করা আইনত বাধ্যতামূলক হলেও এসব সংস্থার নিস্ক্রিয়তার কারণে লাখ লাখ বিদেশি নাগরিক ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করে আয়ের টাকা পুরোটাই নিজ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এহেন বাস্তবতায় একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(বিডা), এনজিও ব্যুরো এবং বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল(বেপজা) কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি একটি রুল নোটিশ জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এসব সংস্থার কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে কত সংখ্যক বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছে তার মঠিক সংখ্যাসহ তাদেরকে ওয়ার্ক পারমিট দিতে সংশ্লিষ্টদের নিস্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছেন।

দেশে ৪৫ হাজার বিদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে এবং এদের মধ্যে মাত্র ৭ হাজার কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে, বিডার একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। বিডার এই তথ্যের আলোকে যে হিসাব পাওয়া যায়, তাতে ওয়ার্ক পারমিটহীন বিদেশি শ্রমিকরা অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। বাস্তবে বিদেশী কর্মীর সংখ্যা শতগুন বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কমপেক্ষ ২০ লাখ। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক। ২০১৫ সালে সিপিডি’র দেয়া এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫ লাখ অবৈধ ভারতীয় শ্রমিক কাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে জানা যায় ২০১৭ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আয় করলেও বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে। ভারত ছাড়াও চীন, শৃলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের নাগরিক ভ্রমন ভিসায় বাংলাদেশে এসে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে টাকা পাচার করছে। কোনো সংস্থার কাছেই এদের প্রকৃত সংখ্যার হিসাব না থাকায় এদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কি পরিমান রেমিটেন্স পাচার হচ্ছে তার সঠিক হিসাব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হাইকোর্টের রুল ও নির্দেশনা পালনের বাধ্যবাধকতার মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছতাসহ সঠিক পরিসংখ্যান বের করার পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশা করা যায়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুপাতে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স প্রবাহের গতি বাড়ছে না। অন্যদিকে ভারতসহ বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং গার্মেন্টস খাতের আয়ের বড় অংশই নানাভাবে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। একদিকে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৈষম্য বেড়ে চলেছে একই সাথে অবৈধ ভারতীয়দের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য। দেশের লাখ লাখ কর্মহীন শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান না হলেও কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বিভিন্ন সেক্টরে ভারতীয়সহ বিদেশি কর্মীদের দেদারছে কর্মসংস্থান হচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিডা, বেপজা এবং এনজিও ব্যুরোর মত প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের স্বার্থ বিকিয়ে সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে ভারতীয় ও বিদেশি স্বার্থ রক্ষায় কাজে লাগাচ্ছে। অনুমোদনহীন ও অবৈধ বিদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশ থেকে শুধু বিপুল পরিমানে রাজস্বই নিয়ে যাচ্ছে না, সেই সাথে এসব অবৈধ ও অননুমোদিত বিদেশি কর্মীরা দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি। গার্মেন্ট সেক্টরে বিপুল পরিমান বিদেশি শ্রমিক এ সেক্টরের স্বার্থ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সব সেক্টরের বিনিয়োগকারী ও নিয়োগদাতাদের দেশের দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগানোর শর্ত পালন করতে বাধ্য করতে হবে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বহিষ্কার করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওয়ার্ক পারমিট ও আয়করের আওতায় নিয়ে আসার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • jack ali ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:২৩ পিএম says : 0
    Our government is the enemy of our Beloved Country.....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন