পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সমর্থনে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠল দেশজুড়ে। জামিয়ার ছাত্রদের মারধর ও গ্রেফতারি এবং নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গত রোববার রাতেই গর্জে উঠেছিল কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিক্ষোভের আঁচ এবার ছড়িয়েছে দিকে দিকে। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে লখনউয়ের নাদওয়া কলেজ। বিক্ষোভ ছড়িয়েছে হায়দরাবাদেও। জামিয়ার ছাত্রদের সমর্থনে গর্জে উঠেছে মৌলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
জামিয়া মিল্লিয়ায় পুলিশের অনধিকার প্রবেশ ও শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। এর মধ্যে রয়েছেন ক্রিকেটার ইরফান পাঠান, প্রাক্তন ছাত্রীরাও। এদিকে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ৩ দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল বিশাল র্যালি করেছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সিএএ-এনআরসির বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় মমতার ওপর চটে রয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। গতকাল রাজ্য সচিব ও ডিজিকে তার দফতরে তলব করলেও জাননি তারা। এরপর ডেকে পাঠান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। পাল্টা তিনি রাজ্যপালকে উস্কানি না দিয়ে রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে সহযোগিতার আহŸান জানান। রাজ্যে রেলের ১০০ কোটি রুপিরও বেশি ক্ষতি হবার প্রেক্ষিতে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে আরো ৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় পুলিশ পাঠিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, দিল্লি জামিয়া মিল্লিয়া পুলিশের বর্বরতার পর গতকাল লখনউয়ের নাদওয়া কলেজে বিরাট বিক্ষোভ গড়ে তোলেন ছাত্ররা। রোববার রাতেই একদল ছাত্রছাত্রী কলেজের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে গতকাল সকালে শয়ে শয়ে ছাত্রছাত্রী প্রবেশদ্বার দিয়ে কলেজে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে বিরাট পুলিশবাহিনী আগে থেকেই গেট বন্ধ করে রেখেছিল। চলতে থাকে স্লোগান। গেট না-খোলায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টিও করা হয়। লখনউয়ের পুলিশ সুপার কালানিধি নৈথানি জানিয়েছেন, ‘প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে টানা পাথর ছোড়া চলে। প্রায় ১৫০ জন স্লোগান দিতে দিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’
এদিকে জামিয়ার ঘটনার প্রতিবাদে এএমইউ-তে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের সংঘর্ষের পর কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় খালি করে দেয়ার নির্দেশ দেয়। ঘোষণা করা হয়, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
প্রতিবাদে সোচ্চার আইআইএম-মুম্বই ও আইআইটি-মাদ্রাজসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়ান্সেসের ছাত্রছাত্রীরা গতকাল সব ক্লাস বয়কট করেন। সকালের হাড়-কাঁপানো ঠান্ডায় গেটের সামনে খালি গায়ে বিক্ষোভ দেখান জামিয়ার একদল ছাত্র। জামিয়ার ঘটনা ও সিএএ-র প্রতিবাদে বেঙ্গালুরুর আইএসএসসি, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, চন্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভে শামিল হন ছাত্রীরা।
রোববার রাতে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায় দিল্লি পুলিশ। বিনা অনুমতিতে গায়ের জোরে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন চিফ প্রক্টর ওয়াসিম আহমেদ খান। এমনকি জোর করে ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের বের করে দেয়া হয়েছে বলেও তার দাবি। গোটা ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস।
জামিয়া মিলিয়া চিফ প্রক্টর আহমেদ খান জানিয়েছেন, জামিয়া নগর ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য দিল্লি পুলিশের তরফে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এমন অনুমতি দেয়া হয়নি। এর পরেও পুলিশ গায়ের জোরে ক্যাম্পাসে ঢোকে। এর পরে ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোনায় তল্লাশি শুরু হয়। সে সময় উপস্থিত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ব্যাপক মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হয় বলেও তার দাবি। গোটা পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও বহু শিক্ষীর্থী ক্যাম্পাসে লুকিয়ে আছেন। প্রত্যেকেই ভীত সন্ত্রস্ত।’
এরই মাঝে ভাইরাল হয়েছে কিছু ছবি ও ভিডিয়ো। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ পোশাকে থাকা এক ব্যক্তি জামিয়ার এক ছাত্রের উপর লাঠি চালাচ্ছে। ছাত্রটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে ছাত্রীদের। সিভিল ড্রেসে কে পুলিশের সঙ্গে মিশে ছাত্রদের পেটাচ্ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই ছবি নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া।
রোববার বিকেলে আলিগড়ের জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া চত্বরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। একসময় বিক্ষোভ বড় আকার নিলে সংঘর্ষ বাঁধে ছাত্র-পুলিশের। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে প্রশাসন। তখনই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক বাইকে ভাঙচুর চালায় পুলিশ, অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। সেই পুলিশি তান্ডব ধরা পড়েছে ক্যামেরাতেও। জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় পাথর ছোড়ায় গুরুতর জখম হয়েছেন তিনজন পুলিশ।
গত রোববার সন্ধ্যেয় সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দিল্লি পুলিশের ওপরমহল থেকে জানানো হয়েছে, কথা ছিল ১০০ থেকে ২০০ জন ছাত্র আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই এই প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন। আচমকাই সেখানে ঢুকে পড়েন বহিরাগত ছাত্র এবং জনতা। দেখতে দেখতে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চত্বরের বাইরে। খন্ডযুদ্ধ বাঁধে পুলিশ-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এরপরেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁটবৃষ্টি করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভ থামানোর নামে পুলিশি তান্ডব চালিয়েছে দিল্লি দক্ষিণ প্রশাসন। গুরুতর আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্র এবং কর্মীরাও।
শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে এরপর লাঠিচার্জের সঙ্গে কাঁদানে গ্যাস ও পানিকামান ছোড়ে পুলিশ। শহরে যাতে হিংসা ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় ওখলা আন্ডারপাস থেকে সরিতা বিহারের যান চলাচল। কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয় শহরের নিউ ফ্লেন্ডস কলোনি। বিক্ষোভের ফলে যান চলাচল ব্যাহত হয় দিল্লি-মথুরা রোড, বদরপুর, আশ্রমচকেরও।
রাজ্যে রাজ্যে কেন্দ্রের নির্দেশনা
নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের মুখে পড়ছে সরকারি সম্পত্তি। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। হিংসা বন্ধ ও নাগরিকদের জীবন এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, ‘দেশের কিছু অংশে হিংসা এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে হিংসা বন্ধ এবং জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
দিল্লিতে বাসে আগুন দিয়েছে পুলিশ
দিল্লিতে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালীন পরিস্থিতি যাতে আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে সেই জন্যে কিছু বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে পুলিশই, এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসছে। শুধু তাই নয়, ওই দাবির সপক্ষে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি বাসে কেরোসিনের জার থেকে কিছু তরল ছিটিয়ে দিচ্ছেন খোদ পুলিশ কর্মীই। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল, সেই সময়েই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে তাঁদের। রোববার সন্ধ্যেয় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের রাজধানী। দক্ষিণ দিল্লির নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি অঞ্চলে নয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতাকারী সহিংস বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধলে এলাকাটি যুদ্ধক্ষেত্রের রূপ পায়। কিন্তু এই ঝামেলা চলাকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ওই ভিডিও যা দেখে দিল্লি পুলিশের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ কর্মী নিজেই একটি ফাঁকা বাসে কেরোসিনের জার থেকে কোনও তরল ছুঁড়ছেন।
ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালীন দেখা যায় যে বেশ কয়েকটি বাস ও দু’চাকার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার বিষয়ে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াসহ অনেকেই অভিযোগ করছেন যে পুলিশেরই কিছু কর্মী এই ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। যদিও পুলিশের তরফ থেকে এই ধরনের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
তবুও বিক্ষোভ চালিয়ে যাব : জামিয়া ছাত্রী
আমি মুসলমান নই, কিন্তু বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো বলে মন্তব্য করেছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী।
টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমি ভাবতাম, শিক্ষার্থীদের জন্য দিল্লি নিরাপদ স্থান। আর এটা তো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আমি মনে করতাম, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ স্থান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে তাদের ওপর কিছু হবে না। কিন্তু আমাদের ওপর যে নির্মমতা চালানো হয়েছে, আমি সারারাত কেঁদেছি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি মুসলমান না। কিন্তু প্রথমদিন থেকেই বিক্ষোভকারীদের সামনে রয়েছি। কিন্তু কেন? কারণ আমার পরিবারের ওপর যা ঘটছে, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যদি ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষেই দাঁড়াতে না পারি, তবে এই পড়াশুনা দিয়ে কী করবো।
ইরফান পাঠানের উদ্বেগ
পুলিশের বর্বরতার ঘটনায় দিল্লির বিখ্যাত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ক্রিকেট তারকা ইরফান পাঠান। ভারতের বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বর্বর নৃশংসতা চালিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। এ ঘটনার পর এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, রাজনৈতিক দোষারোপের খেলা চিরদিন চলবে। কিন্তু জামিয়া মিলিয়ার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি ও আমার দেশ উদ্বিগ্ন।
মমতার প্রতিবাদ বিক্ষোভ
নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনদিন ব্যাপী প্রতিবাদ-কর্মসূচির প্রথমদিনে রেড রোডের আম্বেদকর মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল নেত্রী। আম্বেদকরের মূর্তির সামনে ‘এনআরসি-সিএবি হতে দেব না’ শপথ নিয়ে মিছিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই মিছিলে পা মেলান হাজার হাজার মানুষ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ হঠাৎ কী এমন হল! বিজেপি তো নিজেকে আকাশের চেয়েও বড় ভাবছে। হিন্দুস্তান আমাদের। আরে সাব কে সাথ নাহি রাহেগা তো সাব কা বিকাশ ক্যায়সে হোগা?’ সিএএ-এনআরসি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত যে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, তাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। বলেন, ক্যাব প্রত্যাহার করতে হবে। যতক্ষণ না প্রত্যাহার হবে, আমরা রাস্তাতেই থাকব।’
মমতা-রাজ্যপালের টাগ অব ওয়ার
পশ্চিমবঙ্গে ভাঙচুর ও এনআরসির বিরুদ্ধে অবস্থান সম্পর্কে রাজ্যসচিব ও ডিজিকে সোমবার নিজ দফতরে তলব করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু তারা যাননি। রাগে মমতাকেই তলব করে বসেন তিনি। চিঠিতে মমতা কড়া ভাষায় লিখেছেন, ‘প্ররোচনা নয়, দয়া করে শান্তিরক্ষায় সহযোগিতা করুন। রাজ্য সরকারের সমালোচনামূলক আপনার বারবার বিবৃতি ও সংবাদমাধ্যমের বিকৃতিতে আমার খারাপ লাগছে।’ আজ তিনি রাজভবনে যাবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সেনা এল পশ্চিমবঙ্গে
চারদিন কেটে গেলেও এখনও অশান্ত বাংলা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন। অবরোধ, বিক্ষোভে উত্তাল বাংলা। সবথেকে ক্ষতি হচ্ছে রেলে। একের পর এক স্টেশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা। জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে রেলের বগি। ছাড়া হচ্ছে না কিছুই। এই অবস্থায় একের পর এক ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। শুধু সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নয়, ব্যাপক ক্ষতি ভারতীয় রেলেও। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে রেলে। যদিও এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়াতে চায় না রেল। আর তাই রাজ্যের স্টেশনগুলিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ৮ কোম্পানি বাহিনী রাজ্যে এসে পৌঁছেছে।
মালদহে স¤প্রীতি র্যালি
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। সেখানে ট্রেন ও বাসে আগুনও দেয়া হয়েছে। তবে রোববার এক ভিন্নধর্মী শান্তিপ‚র্ণ প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত হয়েছে মালদহ জেলার মোথাবাড়িতে। তৃণমূলের স্থানীয় বিধানসভা কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই মিছিলে ছিল সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির বার্তা।
মিছিলের অগ্রভাগে জাতীয় পতাকা হাতে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন। তার পাশেই হাতে হাত রেখে মিছিলে যোগ দেন মোথাবাড়ি চৌরঙ্গি মসজিদের ইমাম মাওলানা ফারমান আলি, বৈষ্ণবনগর চার্চের ফাদার অ্যালেক্স মিনজ ও ইংরেজ বাজার শহরের ঝলঝলিয়া এলাকার দুইটি কালীমন্দিরের পুরোহিত প্রদীপকুমার পান্ডে ও সঞ্জয় ঝা। কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় সেখানকার পিডবিøউডি মাঠ থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি প্রায় আট কিলোমিটার পথ হেঁটে অচিনতলায় গিয়ে শেষ হয়।
মমতাকে বিজেপির হুমকি
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেয়ার হুমকি দিয়েছেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার আন্দোলনের বিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি কীভাবে সংবিধানবিরোধী এমন কথা বলতে পারেন এবং কীভাবে তিনি সংসদে পাস হওয়া একটি আইনের বিরোধিতা করতে পারেন? তিনি যদি আইন না মানেন তবে আমরাও আইন মানব না। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা’। তিনি জানান, কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানাতে আমরা ২৩ ডিসেম্বর এখানে এক লাখেরও বেশি মানুষের সমর্থন সহকারে একটি বিশাল শোভাযাত্রা বের করব। ২৪ ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গে আরও একটি শোভাযাত্রা করা হবে। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, কোলকাতা২৪।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।