পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘বিল দেখতে চলন, গ্রাম দেখতে কলম।’ চলনবিলের নাম শুনলেই গা ছমছম করে ওঠে থইথই জলে উথালপাতাল ঢেউয়ের কথা ভেবে। তবে চলনের এ রূপ বর্ষার। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায় চলনবিলকে। বর্ষায় সাগরের মতো বিশাল জলরাশি বুকে নিয়ে ভয়ংকর রূপ ধরে এ বিল, শরতে শান্ত জলরাশির ওপর ছোপ ছোপ সবুজ রঙের খেলা। হেমন্তে পাকা ধান আর সোঁদা মাটির গন্ধে ম ম করে চারদিক। শীতে হলুদ আর সবুজের নিধুয়া পাথার এবং গ্রীষ্মে চলনের রূপ রুক্ষ। তবে চলনবিলের মূল আকর্ষণ নৌকাভ্রমণ।
‘চলনবিলের ইতিকথা’ বই থেকে জানা যায়, ১৮২৭ সালে জনবসতি এলাকা বাদ দিয়ে চলনবিলের জলমগ্ন অংশের আয়তন ছিল ৫০০ বর্গমাইলের ওপরে। এরপর ১৯০৯ সালে চলনবিল জরিপের এক প্রতিবেদনে আয়তন দেখানো হয় ১৪২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩৩ বর্গমাইল এলাকায় সারা বছর পানি জমে থাকে। চলনবিলে রয়েছে বিভিন্ন নামের অনেক বিল! চলনবিলের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন নামে ১ হাজার ৭৫৭ হেক্টর আয়তনের ৩৯টি বিল। প্রধান ৩৯টি বিলসহ মোট ৫০টির বেশি বড় বড় বিলের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে চলনবিল।
‘ইম্পিরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া’ নামক বই থেকে জানা যায়, নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া; নওগাঁ জেলার রানীনগর, আত্রাই; সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া; পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, বেড়া এবং বগুড়া জেলার দক্ষিণাঞ্চল শেরপুর মিলেই বিশাল আয়তনের চলনবিল। একসময় এর পুরোটাই ছিল বিস্তীর্ণ। ১৯১৪ সালে ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের পর উত্তর-পশ্চিম-দক্ষিণ তিন অংশে চলনবিল বিভক্ত হয়। বর্তমানে চলনবিলে নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া; পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন, আটটি পৌরসভা ও ১ হাজার ৬০০টি গ্রাম রয়েছে। পুরো অঞ্চলের লোকসংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
শীতের শুরুতে অতিথি পাখির কলতানে মুখর হয়ে উঠে চলনবিল। অতিথি পাখির আগমনে চলনবিলের পরিবেশ হয় আরও দৃষ্টিনন্দন। ভোর থেকেই বিলের মধ্যে পাখিদের কোলাহল, ডানা মেলে অবাধ বিচরণ, ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের ওড়াউড়ি দৃষ্টি কাড়ে সবার। পুরো চলনবিল অতিথি পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে। দিনের আলোতে চলনবিল জুড়ে দলবদ্ধ অতিথি পাখির বিচরণ মুগ্ধ করবে যে কাউকে। চলনবিলে ঝাঁকে ঝাঁকে চখাচখি, পানকৌড়ি, বক, হরিয়াল, হারগিলা, রাতচোরা, বালিহাঁস, ইটালী, শর্লি, পিঁয়াজখেকো, ত্রিশূল, বাটুইলা, নারুলিয়া, লালস্বর, কাদাখোঁচা, ফেফি, ডাহুক, গোয়াল, শামুখখোল, হটটিটি, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির শৌখিন ও পেশাদার পাখি শিকারিরা বন্দুক ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে দেশি ও অতিথি পাখি নিধন করে। এতে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে ফসলি জমিতে। শিকারিরা এসব পাখি ধরে বিক্রিও করে বাজারে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া ও আত্রাই উপজেলা সদর থেকে দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাখি কেনাবেচা হচ্ছে। এসব দুর্গম এলাকাগুলোতে প্রশাসনের কোনো লোকজনের আনাগোনা নেই। ফলে এই এলাকায় শিকারিদের আনাগোনাও বেশি। বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। তাই কোনো মতে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না। প্রতি জোড়া পাখি প্রজাতি ভেদে ১৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। ফলে বেশি লাভের আসায় অনেকেই অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে পাখি শিকার করছে। সবকিছুরই একটা সৌন্দর্য রয়েছে। তেমনই চলনবিলের সৌন্দর্য হচ্ছে জীব-বৈচিত্র্য। আর এ জীব-বৈচিত্র্য ছাড়া চলনবিলের সৌন্দর্য দেখা যায় না। প্রতি বছর শীতের শুরুতে পাখি নিধনের মধ্য দিয়ে চলনবিেেলর সৌন্দর্যকে নষ্ট করা হচ্ছে। চলনবিলের পাখিরা বাঁচতে চায়।
লেখক: সংবাদকর্মী, নাটোর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।