পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় উন্নয়ন বাজেটের ১৪তম বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়। অথচ এই মন্ত্রণালয় চলতি অর্থ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের মাত্র ১.৯৫ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)’র বরাদ্দ ৩৮২১ কোটি টাকা, যার মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্ত্য অর্থের পরিমাণ ২৫০০ কোটি টাকা। এ অর্থের একটি টাকাও খরচ হয়নি। শুধু এ মন্ত্রণালয়ই নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং বিভাগও বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহার করতে পারেনি। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় সরকারের নিজস্ব ফান্ডও ব্যবহার করতে পারেনি। ফলে উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার আগের অর্থ বছরের তুলনায় কমেছে। মন্ত্রণালয়সমূহ জুলাই-নভেম্বর সময়ে সর্বমোট ৪১৩৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা পুরো বরাদ্দের মাত্র ১৯.২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময় ব্যয় হয়েছিল ২০.১৫ শতাংশ, টাকার অংকে যা ছিল ৩৬৪৩৮ কোটি টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৈদেশিক সহায়তা শতকরা হিসাবে ও মোট বরাদ্দের দিক দিয়ে কমেছে। বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের হার কমেছে ১৪.৫২ শতাংশ, যদিও সরকার এই উৎসের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য এক উচ্চভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। জুলাই-নভেম্বরে ব্যবহার হয়েছে ১১০৮৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৫.৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে ব্যবহৃত হয়েছিল ১২৯৭১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২১.৬২ শতাংশ। উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার এবার বৈদেশিক সহায়তা খাত থেকে ৭১৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। দেখা যাচ্ছে, বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রতি বছরই বাড়ছে, কিন্তু সরকার তার খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছে না। অন্যদিকে সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে ব্যয় প্রতি বছরই বাড়ছে। এ বছর ৫ মাসে বেড়েছে ৩৭.৮৯ শতাংশ, টাকার অংকে যা ১৯,২৫৪ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ ৫ মাসে ব্যবহার করেছে মোট ২১২১৪ কোটি টাকা, যা পুরো বরাদ্দের ১৮.৭৭ শতাংশ। রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবহার করেছে মোট বরাদ্দের ৭.৬ শতাংশ, শিল্প মন্ত্রণালয় ২.৩৪ শতাংশ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৬.৫০ শতাংশ, পাবলিক সিকিউরিটি ডিভিশন ৬.৭১ শতাংশ। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও একই রকম।
উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের এই চিত্র হতাশাজনক। বরাবরই আমরা লক্ষ করেছি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিবছরই একটা গড়িমসি হয়। নির্ধারিত টার্গেট পৌঁছানো সম্ভব হয় না। অবধারিতভাবে বছরের এক সময় বা একাধিক সময় বরাদ্দ কমানো হয়। ফলে উন্নয়ন লক্ষ্য অনর্জিত থেকে যায়। এও দেখা গেছে, অর্থ বছরের প্রথম দিকে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো গতি থাকে না। বরাদ্দকৃত অর্থের খুব সামান্যই ব্যয় হয়। কিন্তু বছরের শেষ দিকে বাজেট বাস্তবায়নে তোড়জোড় পড়ে যায় এবং দেখা যায়, বাজেটের প্রায় সমুদয় অর্থই ব্যয় হয়ে গেছে। ওয়াকিবহাল মহল জানে, এভাবে বাজেট বাস্তবায়নের ফলাফল কী দাঁড়ায়। বছরের শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাজ ঠিকমত হয় না। কাজে ফাঁকি দেওয়া হয়, ফাঁক থেকে যায়। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীদের একাংশের সঙ্গে ঠিকাদারদের যোগসাজস হয় এবং তারা যাচ্ছেতাইভাবে কাজ করে, কখনো বা অসম্পূর্ণ, অসমাপ্ত বা অর্ধসমাপ্ত রেখে কাজ শেষ করে। বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বিরাট অংশ ভাগ-বাটোয়ারা করে খায়। এটা কোনো গোপন বিষয় নয়, অথচ এর কোনো প্রতিকার নেই। উন্নয়ন বাজেটের অর্থের উৎস সম্পর্কে আমরা জানি। পথমত সরকারি উৎস ও দ্বিতীয়ত বৈদেশিক উৎস। আমরা এও জানি, সরকারের অর্থ আসে ট্যাক্স হিসাবে জনগণের পকেট থেকে। বৈদেশিক অর্থ আসে ঋণ হিসাবে, যার জন্য সুদ গুণতে হয়। এই ঋণের সুদাসল পরিশোধের অর্থও জনগণের পকেট থেকেই আসে। উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন জনগণকে উপলক্ষ করে করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ জনগণের কল্যাণে জনগণের অর্থের ব্যয় বা ব্যবহার করা হয়। অথচ এই অর্থের বিরাট অংশ লুটপাট হয়ে যায়। কায়েমী স্বার্থবাদী চক্র লুটেপুটে খায়। এই যদি বাস্তবতা, তাহলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কীভাবে হবে? জনকল্যাণই বা কেমন করে হবে?
দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি ইত্যাদি এখন অতি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সরকারের তরফে লাগাতার বলা হচ্ছে, দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। অবশ্য উন্নয়নের কথা মুখে যত বলা হচ্ছে, ততটা দৃশ্যগ্রাহ্য নয়। উন্নয়নের সুফলও জনগণ তেমন পাচ্ছে না। সবকিছুই যেন বায়বীয় উন্নয়নের ফানুস উড়ছে আর তার আড়াল থেকে কাড়িকাড়ি টাকা লুট ও পাচার হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু মেগা প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু কোনো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নই আশাপ্রদ নয়। কোনোটাই শেষ হচ্ছে না নির্ধারিত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের সাথে প্রকল্পব্যয় বাড়ছে দফায় দফায়। দুর্নীতি, অদক্ষতা, ধীরগতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদি কারণে মেগা প্রকল্পসহ যাবতীয় প্রকল্পের বাস্তবায়নচিত্র উদ্বেগজনক। কাজের মানও আশাব্যঞ্জক নয়। এমতাবস্থায়, উন্নয়নের জয়গান বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। ফাঁক ও ফাঁকির উন্নয়ন এক সময় ধসে যেতে বাধ্য। তখন অনুশোচনার শেষ থাকবে না। উন্নয়নকে জনকল্যাণমূলক, বাস্তবোচিত, টেকসই করতে হলে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তাচার বন্ধ করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা-দুর্বলতা দূর করতে হবে। যথাসময় মানসম্মতভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।