পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত জুড়ে এনআরসি আতঙ্ক তুঙ্গে। এনআরসি’র বিরুদ্ধে বাদ প্রতিবাদও হচ্ছে জোরালো। বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হচ্ছে বাংলাভাষীরা। ওপারের বিভিন্ন সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। ভারতের এক সাংবাদিক আনান্দবাজার পত্রিকায় মতামত কলামে লিখেছে, এনআরসি-তে যারা বাদ যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই বৈধ, সঙ্গত ও পূর্ণভাবে এ দেশেরই মানুষ। কিন্তু আসামের অভিজ্ঞতা আর একটাও দরকারি শিক্ষা দিয়ে গেল। আসল কথাটা তো এই যে, ‘গোটা পৃথিবী থেকে’ মুসলমানেরা ভারতে থাকতে আসেন না, এমনকি পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকেও খুব নামমাত্র মানুষ ভারতে এসে পাকাপাকি ভাবে থাকতে চান। আসেন কেবল বাংলাদেশের মানুষই।
অর্থাৎ প্রথমে অসম, তার পর পশ্চিমবঙ্গ, এই হল এত বড় দেশজোড়া এনআরসি তথা ‘ক্যাব’-যজ্ঞের লক্ষ্য। মুশকিল হল, বাংলাদেশ থেকে কেবল মুসলিম আসেন না, হিন্দুরাও আসেন। এনআরসি-র ছাঁকনিতে যে সেই হিন্দুরাও ধরা পড়ছেন। তা হলে চলবে কী করে, হিন্দুদের খুশি করাটাই না দরকার? তাদের ভোটটাই না দরকার? সুতরাং ‘লাও ক্যাব’। ২০২১ সাল এসে পড়লো বলে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের শিঙা বাজল বলে। এই বেলা দ্রæত ‘মুসলিম মানে অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘হিন্দু মানে শরণার্থী’ ভাগাভাগিটা শুরু করা চাই। নাগরিকত্ব আইনের মূল লক্ষ্য তো বেআইনি লোকজন ধরা নয়, লোকজনের মধ্যে ভাগাভাগি করা, যাকে বলে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’!
ভারতের ওই সাংবাদিকের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-এর আলোচনায় এই ভাগটা করার জন্যই প্রতিবেশী দেশের ‘ধর্মীয় নির্যাতন’-এর বিষয়টা নিয়ে আসা। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে ধর্মীয় নির্যাতনের কথা বললে তো আবার পাকিস্তানের মোহাজির বা আহমদিয়া বা শিয়ারাও ‘শরণার্থী’র দলে ঢুকে পড়েন? মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরাও? না, তাদের আটকাতে হবে। নির্যাতন-পরবর্তী ‘শরণার্থী’ দলে মুসলিমদের ঢোকানো যাবে না। তাই পষ্টাপষ্টি বলতে হল, ভারতে জায়গা পাবে কেবল পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা, কিংবা বৌদ্ধ, পার্সি, খ্রিস্টান, মুসলিমরা নয়। আর মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের তো ভারতে জায়গা হবেই না, কেননা তারা বাংলাদেশ নামক একটি ‘মুসলিম’ দেশের মধ্যে দিয়ে ভারতে এসেছেন।
‘মুসলিম দেশের মধ্য দিয়ে এলে হবে না’, যুক্তিটা লক্ষণীয়। কেননা, এর মাধ্যমেই বলে দেওয়া হল, মুসলিমরা যেন কোনও মুসলিম দেশেই থেকে যান, ভারতের মতো ‘অমুসলিম দেশ’ বা ‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ ঢোকার সাহস যেন না দেখান। ওই সাংবাদিক আরো লিখেছেন, সমস্যা এখানেও থামল না। বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দুরা যে ‘ধর্মীয় নির্যাতন’-এই এসেছেন, কী ভাবে তা প্রমাণ করা যাবে? নির্যাতনের কি কিছু কাগজপত্র থাকে? এনআরসি-র সময় তো দেখাই গিয়েছিল, সে দেশ থেকে আসা হিন্দুদের অধিকাংশেরই কোনও নথিপত্র নেই, আগমনকারী মানুষের কাছেও নেই, বাংলাদেশ সরকারের কাছেও নেই। পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা পরিষ্কার। কে কবে এসেছেন, কী ভাবে এসেছেন, কিছুরই প্রমাণ দেখাতে পারেন না এই মানুষেরা। সুতরাং অতীব গুরুত্বপূর্ণ যদিও এই বিলের আগের সব খসড়ায় ‘নির্যাতন’ (পারসিকিউশন) শব্দটা ছিল, যখন এই সপ্তাহে বিল আইনে পরিণত হল, তার চ‚ড়ান্ত খসড়ায় কিন্তু ওই শব্দটা উঠিয়ে নেওয়া হল। স্বাভাবিক। হিন্দুরা ‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ এসে পড়লেও তাদের আবার নথিপত্র দেখাতে বলা মানে তাদের বিপদে ফেলা। এনআরসি যখন দেখিয়েই দিয়েছে হিন্দুদের বাদ যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। একটা গভীরতর কথাও আছে। যে হিন্দুরা এনআরসিতে বাদ পড়ছেন, তারা তো এর আগে প্রত্যেকেই প্রাণপণ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যে ভিত্তিবর্ষ বা ‘কাট-অফ’ বছরের আগেই তারা এসে পৌঁছেছেন। এখন আবার ‘ক্যাব’-এর মাধ্যমে স্বীকৃত হওয়ার জন্য তারা কী করেই বা বলবেন যে, আগে ভুল বলেছি, ভিত্তিবর্ষের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ‘নির্যাতন’ সহ্য করেছেন বলেই আজ তারা ভারতের শরণার্থী? হয় তাদের আগের কথাটা মিথ্যে, নয় এখনকার কথাটা মিথ্যে! এই প্যাঁচ থেকে বেরোনোর জন্য ‘নির্যাতন’ শব্দটাকেই শেষ মুহূর্তে বাদ দিতে হল। বলতে হল, হিন্দুরা (এবং অন্য অমুসলিমরা) এলেই তারা শরণার্থী, প্রমাণ চাই না। অর্থাৎ নাগরিকত্ব চাইবার অধিকার সকল অমুসলিমদের। মুসলিমরা প্লিজ নাগরিকত্বের আশা করবেন না।
মাঠে নামছে মমতার, অভয় বাংলাভাষীদের
কলিকাতার দৈনিক বর্তমান খবর দিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) সংসদে পাশ হওয়ার পর এখন তা নাগরিকত্ব আইন। এই আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এ রাজ্যে কোনওভাবেই কার্যকর হবে না, কাউকে তাড়াতেও দেব না। ফের দ্ব্যর্থহীন ভাবে এই ঘোষণার সঙ্গেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তিনি নিজে এবার পথে নামছেন কেন্দ্রীয় সরকারের ওই দুই নীতির প্রতিবাদে। আগামী সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শহর এবং লাগোয়া হাওড়া থেকে শুরু হওয়া তিনটি প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে এভাবে ভাগ করা যায় না। গোটা বিশ্বের সামনে ভারতবর্ষের সম্মান নষ্ট হচ্ছে। এটা লজ্জার! ক্যাব আইনে পরিণত হওয়ার জেরে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রী সফর বাতিল করেছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পিছিয়ে দিয়েছেন ভারতযাত্রা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।