চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ফিরোজ আহমাদ
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘পরিশোধন’ করা। নামাজ যেমন আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে তেমনি যাকাতও সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। যাকাত দানের ফলে যাকাত দাতার সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সম্পদের উপর থেকে বালা, মুসিবত দূর হয়। কোরআনুল কারীমের ৩২টি জায়গায় যাকাতের কথা উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আলাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে যাকাত দাও, প্রকৃত পক্ষে সেই যাকাত তোমাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে’। (সূরা রূম, আয়াত-৩৯)। যাকাত দানের মাধ্যমে সম্পত্তি হ্রাস পায় না। বরং আল্লাহ যাকাত দাতার প্রতি খুশি থাকেন। যাকাত দানের ফলে আল্লাহ খুশি হয়ে যাকাত দাতার সম্পদের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। এছাড়া যাকাতের মাধ্যমে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। যাকাত দানের মাধ্যমে এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক আদায় হয়ে যায়। যাকাতের মাধ্যমে ধনী-গরীবের বৈষম্য দূর হয়। গরীব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটে। সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ বৃদ্ধি পায়। দারিদ্র্যতা দূর হয়।
খয়রাত প্রদানের বিষয়টি দাতার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। খয়রাতের পরিমাণ দাতা নিজের ইচ্ছানুযায়ী হ্রাস বৃদ্ধি করতে পারেন। যাকাত প্রদান করার বিষয়টি যাকাত দাতার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। যাকাত আদায় করার বিষয়টি আল্লাহর হুকুমের উপর নির্ভরশীল। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী আদায় করতে হয়। এছাড়া ভিক্ষা দান করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু যাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। যাকাত আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর’। (সূরা বাকারা, আয়াত-১১০)। সম্পদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নেয়ামত স্বরূপ। আল্লাহ যাদের সম্পদ দান করেছেন তাদের সম্পদের মধ্যে গরীব-দুঃখী মানুষের হক রয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের ধন-মালে ভিক্ষুক, প্রার্থী ও বঞ্চিতদের সুস্পষ্ট ও সুপরিজ্ঞাত অধিকার রয়েছে’। (সূরা আয যারিয়াত, আয়াত-১৯)।
সম্পদ ভোগ করার পূর্বে যাকাত আদায় করা উত্তম। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর (আল্লাহর) দেয়া ফসল খাও যখন তা উপযুক্ত হয় এবং ফসল তোলার সময় তাঁর হক আদায় করে নাও’। (সূরা আনআম, আয়াত-১৪১)। ফসল ঘরে তোলার পূর্বে যাকাত প্রদান করলে ফসলের উপর বরকত হয়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘ আমার রহমত সবকিছু পরিব্যাপ্ত করে নিয়েছে। আমি তা লিখে দেব সেই লোকদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান রাখে’। (সূরা আরাফ, আয়াত-১৫৬)।
যাকাত কোনো করুণার বিষয়বস্তু নয়। যাকাত প্রদান করার বিষয়টি কারো খেয়াল খুশির উপর নির্ভর করে না। যাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসব মুশরিকদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য, যারা যাকাত দেয় না’। (সূরা হা-মীম আস সাজাদা, আয়াত-৭,৮)। বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-মালে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, তাদের জন্য তা মঙ্গলময়। বরং তা তাদের জন্য খুবই খারাপ। তারা যে মাল নিয়ে কার্পণ্য করেছে, তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ী দেয়া হবে’। অপর এক বর্ণনায় হযরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে তার সম্পদের উপর যাকাত দিল, সে যেন তার সকল পাপ ধূয়ে ফেলল’। সুতরাং যাকাত আদায়ের বিষয়ে সকলকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। নামাজ ও যাকাত একটি অপরটির পরিপূরক। হযরত আবু বকরের খেলাফতের সময়কালে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি অবশ্যই সেসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে। আল্লাহর কসম, তারা যদি একট উটের রশিও দিতে অস্বীকার করে, যা হযরত রাসূল (সা.)-এর জমানায় তারা দিতো।
লেখক : ধর্ম, সূফিতাত্ত্বিক গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।