Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাটি কাটা থেমে নেই

গোমতীর ৫০ কিলোমিটার সাবাড়

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

শুরু হয়েছে শীত মৌসুম। শরীর গরম হয়ে ওঠেছে মাটিকাটা সিন্ডিকেটের লোকজনের। মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর দুই পাড়। দিনে রাতে শত শত ডামট্রাক-ট্রাক্টরে করে মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। গোমতী নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে মাটাকাটার নামে পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ। এভাবে মাটি কাটার ফলে গোমতী বাঁধ, সড়ক, কৃষক ও ফসলের ক্ষতিসাধনসহ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের অভিযানেও থেমে নেই মাটি কাটার মহোৎসব।
এক এক করে ট্্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক নামছে গোমতীর পাড়ে। কোদাল আর ভেলচায় কেটে শ্রমিকরা যানবাহনে তোলছে নদীর পাড়ের মাটি। কোথাও কোথাও নদীর পাড় থেকে মূল রাস্তায় উঠা-নামার জন্য বিকল্প পথও তৈরি করা হয়েছে। শীতের মৌসুম এলেই গোমতী নদীর আলেখারচর ও আমতলি গ্রাম থেকে শুরু করে বুড়িচং উপজেলার কংশনগর, গোবিন্দপুর, রামপুর, বালিখাড়া, কামারখাড়া, বাবু বাজার, মিথিলাপুর, রামনগর, পূর্বহুরা, নানুয়াবাজার এবং মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ, বাখরাবাদ, দনিরামপুর, জাহাপুর, দেবিদ্বার উপজেলা অংশে জাফরগঞ্জ, বড় আলমপুর, বিনাইপাড়, বালিবাড়ি, ভিংলাবাড়ি হয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় দুইপাড়ের মাটি কাটা বাণিজ্য শুরু হয়।
গত তিনদিন গোমতী নদীর ওইসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর দুইপাড়ের মাটি কেটে বোঝাই করে শত শত ট্রাক্টর, ড্রাম ট্রাক নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে। আবার মাটির জন্য খালি যানবাহন এসে জড়ো হচ্ছে নদীর পাড়ে। গোমতী নদীর দুই পাড়ের মাটি কেটে পাড়, বাঁধ, ফসলী জমি ও গাছপালার কী সর্বনাশ করছে চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না। কোন কোন এলাকায় দেখা গেছে নদীর পাড়ের কাছাকাছি জায়গায় তাল, নারকেল, খেজুর, আমগাছ, বাঁশঝাড় স্থানে শ্রমিকরা কোদাল বসিয়ে সেখানকার মাটি এতো গভীরভাবে সাবাড় করেছে দেখলে মনে হবে ওইসব গাছপালা খন্ড খন্ড টিলার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গোমতীর পাড় অনেকটা উঁচু। অনেকেই এসব উঁচু ভ‚মির কোন কোন অংশে চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু পাড়ের মাটি কেটে নেয়ায় এসব জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ফলে নদীর বাঁধ যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমনি কৃষকদেরও ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
গোমতী পাড়ের মাটি বহনকারী যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব মাটির ৭০ভাগ ইটভাটায় যায়। আর বাকি অংশ আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন ও প্লট ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবহন খরচসহ মাটির দামের বিষয়টি সিন্ডিকেটের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করে। চালকরা জানান, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি কাটা চললেও আটকের ভয় থেকে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ধরলে সিন্ডিকেট নেতারা ছাড়াতে আসেন না। প্রশাসনের অভিযান চললে বিকেলের দিকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত মাটি কাটা চলে। আর অভিযান না থাকলে দিনে-রাতে সমানভাবেই চলে মাটি কাটা। কাটি কাটা সিন্ডিকেটের লোকজন সব ম্যানেজ করলেও প্রশাসনকে পারছেনা।
এদিকে গত ৮ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম ফয়সালের নেতৃত্বে আলেখারচর ও আমতলিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মাটি বোঝাই ৭টি ড্রামট্রাকসহ তিন চালককে আটক করে সাত লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এর আগে বুড়িচংয়ের কয়েকটি স্পটেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান অভিযান চালান। মুরাদনগর ও দেবিদ্বার অংশেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এসব অভিযানের মধ্যেও গোমতীর দুইপাড়ের মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে সিন্ডিকেটগুলো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় বাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশ হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। প্রশাসনের অভিযানকে সাধুবাদ জানাই। তবে মাটি বোঝাই যানবাহনের চালককে যেমন জেল জরিমানা দেয়া হচ্ছে তেমনি মাটি কাটা সিন্ডিকেটের নেতা নামধারি মাটি চোরদের তালিকা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাটি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ